কর্মবিরতির জের, ২৭ দিনে ৬৫০০ সার্জারি বাতিল রোগীদের অভাবনীয় দুর্ভোগ

আর জি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি (Seize Work) ২৭ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কাজে ফেরার কথা বললেও নিজেদের অবস্থানে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকরা। চরম দুর্ভোগে রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকেরা। অসহায় পরিবারগুলির একটাই বক্তব্য, ধর্ষক ও খুনির সাজা কেন পাবে নিরপরাধ রোগীরা। পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। চিকিৎসা না পেয়ে ক্যান্সার, কিডনির মতো জটিল রোগে আক্রান্তদেরও ফিরে যেতে হচ্ছে। অথচ, রোগীর পরিবারে লোকেরাও বিচার চেয়ে মোমবাতি হাতে প্রতিবাদের মিছিলে পা মেলাচ্ছেন।

সম্প্রতি, খাট থেকে পড়ে গিয়েছেন আলমবাজারের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। হাতে-পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছেন। পরিবারের লোকেরা তাঁকে এনেছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে। এক্স-রে করে দেখা গেল, পায়ের আঘাত ততটা গুরুতর না হলেও হাত ভেঙে গিয়েছে। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন, বাকি জীবনে কর্মক্ষম থাকতে গেলে এখনই অপারেশন প্রয়োজন। কিন্তু অপারেশন করার ডাক্তার নেই। তাই ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। কান্না জড়ানো গলায় রোগীর এক পরিজন বললেন, “এরকম বললে আমরা যাব কোথায়? প্রাইভেটে যাওয়ার তো ক্ষমতা নেই।”

রাজ্যজুড়ে এমন হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে
অভাবনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পথ দুর্ঘটনা, হার্টের অপারেশন, ব্রেন টিউমার, ক্যান্সার গ্রোথ—এমন অসংখ্য সমস্যায় জেরবার হাজার হাজার মানুষ দিনের পর দিন এভাবেই চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছেন। জনমানসে ক্ষোভ বাড়ছে।

এদিকে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতির (Seize Work) জেরে ৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ১৫ দিনে রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ৪ তারিখ ২৭ দিনে পড়েছে কর্মবিরতি। বাতিল হওয়া বা পিছিয়ে যাওয়া অপারেশনের সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। এসএসকেএম হাসপাতালে ১-৮ আগস্ট পর্যন্ত সব বিভাগ মিলিয়ে ৯১০টি বড় অপারেশন হয়েছিল। সেখানে ৯ থেকে ২০ তারিখের (তিনটি ছুটির দিন মিলিয়ে) মধ্যে অপারেশন সংখ্যা কমে গিয়েছে অর্ধেকের বেশি (৪৫০)। আন্দোলনের ভরকেন্দ্র আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ৯ তারিখের আগে ট্রমা কেয়ার ওটি, ইএনটি ওটি, বার্ন ওটি, এসওটি, নিউরো ওটি, আই ওটি, গাইনি ওটি মিলিয়ে গড়ে ৮৫টি বড় অপারেশন হতো। আর এখন? রোজ গড়ে ১০টি অপারেশনও হয় কিনা সন্দেহ! কমবেশি এক অবস্থা শহরের বাকি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। এই আবহে সর্বভারতীয় আইএমএ ফের ডাক্তারদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় জুনিয়র ডাক্তাররা।

আরও পড়ুন: আর জি করে পুরসভার “হেল্প ডেস্ক”, রোগী পাঠানো হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল

 

Previous articleToday’s market price আজকের বাজার দর
Next articleশিক্ষক দিবসে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর