পথের নামার রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ? ‘দিদি’কেই ফর্মে ফেরালেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী

তাঁকে বলা হয়, ‘বাংলার অগ্নিকন্যা’। বরাবর অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে আন্দোলন করেছেন। সেই কারণে ন্যায্য আন্দোলনকে কুর্নিশ জানান তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শনিবার, জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে গিয়েও তার ব্যতিক্রম হল না। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানালেন, “আমি আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক।”

বাম আমলে নির্বাচনে সচিত্র পরিচয়পত্র চালুর দাবিতে আন্দোলনে প্রাণ যেতে বসেছিল তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার পরেও বিভিন্ন সময় আন্দোলনের মুখ হিসেবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে তৃণমূল (TMC) নেত্রী মমতার আন্দোলনে বদলে যায় রাজ্যের রাজনীতির প্রেক্ষাপট। সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনে ২৬ দিন অনশন করেছিলেন মমতা। ৩৪ বছরের বাম জমানার যবনিকা পতন হয়। ক্ষমতায় আসেন স্বয়ং তৃণমূল সভানেত্রী। কিন্তু তাও আন্দোলনের রাস্তা ছাড়েননি মমতা (Mamata Banerjee)। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এখনও তিনি ‘বাংলার দিদি’। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে ধর্নায় বসেছে। কলকাতায় লাগাতার অবস্থান করেছেন। বকেয়া আদায়ে দিল্লি গিয়েছেন। সেই কারণে আন্দোলন তাঁর কাছে নতুন নয়। এদিন ধর্না মঞ্চেও সেই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমি আপনাদের আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। আমি জানি আমার পদটা বড় কথা নয়।”তৃণমূল সুপ্রিমোর মতো মানুষের ‘পালস’ নাকি কেউ বুঝতে পারেন না- এই মত রাজনৈতিক মহলের। এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্না মঞ্চে সেই লড়াকু রূপটাই ফিরিয়ে আনলেন মমতা। নিজেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে জানালেন, বৃষ্টির রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা যে কষ্ট পেয়েছেন, সেটা অনুভব করেছেন তিনি নিজেও। তাঁর কথায়, ”কাল সারারাত ঝড়-জল হয়েছে, আপনাদের যেমন কষ্ট হয়েছে। আমারও কষ্ট হয়েছে। এই ঝড়জলের মধ্যে আপনারা যেভাবে বসে আছেন আমারও কষ্ট হয়েছে। রাতের পর রাত আমি ঘুমাইনি। পাহারাদের মতো আমাকেও জেগে থাকতে হয়। আপনারা অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আর কষ্ট না করে যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব। ভাবব, চিন্তা করব। যদি কেউ দোষী হয়, সে শাস্তি পাবেই।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ট্রেডমার্ক হঠাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়া। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের সমস্যার কথা শোনা। যেমন ছিলেন দলনেত্রী হিসেবে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। এদিন ধর্নামঞ্চে গিয়ে আবেগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে টানার চেষ্টা করলেন। নিজেকে তুলে ধরলেন ‘দিদি’ হিসেবে। বললেন, ”আপনারা আমার ভাইবোন। নিজেদের মধ্যে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিন। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, কোনও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব না। আপনারা ছাড়া সিনিয়র ডাক্তাররা অচল। আপনাদের সহযোদ্ধা হিসাবে ধরনা মঞ্চে যেমন আসতে পেরেছি, তেমনই ভরসা রাখলে আস্তে আস্তে সমস্ত দাবি খতিয়ে দেখব।” যার জেরে আন্দোলনকারীরাও বললেন, ”মুখ্যমন্ত্রীর আসাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।”মুখ্যমন্ত্রী নয়, আমি দিদি হিসেবে, আপনাদের বড় দিদি হিসেবে বলছি কাজে ফিরুন- একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও আন্দোলকারীদের মঞ্চে নিজে থেকে পৌঁছে গিয়ে এই ধরনের মন্তব্যে ‘দিদি’কেই ফর্মে ফেরালেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী। স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন পথে নেমে রাজনীতির লড়াইয়ের স্পিরিট তিনিও এখনও ধরে দেখেছেন। তবে, প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দাবির যৌক্তিকতা বিচার করেই তাঁকে পদক্ষেপ করতে হবে- বোঝালেন মমতা।










Previous articleএকনজরে আজকের পেট্রোল-ডিজেলের দাম 
Next articleনেতা গ্রেফতার হতেই ‘ষড়যন্ত্র’ তত্ত্ব! আন্দোলন হাইজ্যাকের পরিকল্পনা বামেদের