পুজোর আবহেই রাজ্যের ৬টি কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আর দিন ঘোষণা হতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে রাজ্যের শাসকদল। মাদারিহাট, সিতাই, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা-এ ৬-এ ৬ হওয়ায় লক্ষ্যে এগোচ্ছে তারা। বুধবার, এই বিষয় নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তৃণমূল (TMC) নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, আড়াল থেকে নয়, এবার সরাসরি নামুন ভোটের লড়াইয়ে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ও সিপিএমকে (CPIM) কুণালের কটাক্ষ, “মুখে তো অনেক হল, এবার সরাসরি ভোটের লড়াইয়ে আসুন।”

সোশাল মিডিয়া পোস্টেও কুণালের বার্তা, “ভোটের কার্নিভালে আসুন। মুখে তো অনেক হল। এবার জনতার দরবারে বিচার হোক।” তৃণমূল (TMC) নেতার চ্যালেঞ্জ “আসন্ন উপনির্বাচনে তিন-চারজন উস্কানিদাতা সিনিয়র ডাক্তার বা অতিবিপ্লবী নব্য নেতা কোনও জুনিয়র ডাক্তার সিপিএমের প্রার্থী হয়ে দেখান। ফেসবুকে, সংবাদমাধ্যমে সরকারবিরোধিতার সব বুলি, সরাসরি মানুষের সামনে প্রার্থী হিসাবে লড়াইয়ে আসুন।”এদিকে সময় নষ্ট না করে এদিন মাদারিহাট কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুতি-বৈঠক সেরে ফেললেন আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার থেকে কোচবিহারে সিতাই কেন্দ্রের জন্য টানা সাংগঠনিক বৈঠক-সভা হবে। এ ছাড়াও মেদিনীপুর ও বাঁকুড়াতেও মাঠে নামছে দল। উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে দলীয় প্রার্থীরা জিতবেন— এই আত্মবিশ্বাস রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। একদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে বাংলা জুড়ে উন্নয়ন। সেই সঙ্গে দিশাহীন বিরোধীদল ও কুৎসার রাজনীতির বিরুদ্ধে একটা লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সৈনিকেরা। ১৩ নভেম্বর উপনির্বাচনে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না দল।

এদিন আলিপুরদুয়ার জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বড়াইকের নেতৃত্বে এক প্রস্তুতি-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত জেলা নেতৃত্ব। এই বৈঠকে কীভাবে এই উপনির্বাচন লড়া হবে তার রূপরেখা ঠিক করা হয়। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ২০ তারিখ মাদারিহাট বিধানসভা এলাকার মোট ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতিটিতে একজন করে জেলা নেতা গিয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন। তবে ইতিমধ্যেই বুথভিত্তিক বৈঠক স্থানীয়স্তরে চলছে বলে জানিয়েছেন মাদারিহাট ব্লক তৃণমূল সভাপতি জয়প্রকাশ টোপ্পো। পাশাপাশি দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে রাস্তার কর্মসূচি লক্ষ্মীপুজো মিটলেই শুরু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। একই পরিস্থিতি মেদিনীপুরেও। তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রার্থী নিয়ে কৌতূহল থাকায় বাকি পাঁচ কেন্দ্রের মতো মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি সুজয় হাজরার স্পষ্ট বক্তব্য, প্রার্থী কে হবেন সেই সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। জুন মালিয়া সাংসদ হয়ে যাওয়ায় এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে।

বাঁকুড়া লোকসভার সাংসদ তথা বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অরূপ চক্রবর্তী জানান, তালড্যাংরা বিধানসভার উপ-নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবার জরুরি ভিত্তিতে জেলা কমিটির বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে। প্রস্তুতি তুঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগনার দুই কেন্দ্র নৈহাটি ও হাড়োয়াতেও। বারাকপুরের নবনির্বাচিত সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেন, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। দলগতভাবে আমরা ভোটে লড়াইয়ে জন্য প্রস্তুত। নৈহাটি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। জেলার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী জানান, হাড়োয়ায় জয়ের ব্যাপারে আমরা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। দল প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেই সকলে মিলে আমরা ভোটযুদ্ধে নেমে যাব। এখন বুথস্তরের কর্মীদের বলা হয়েছে দেওয়াল চুন করতে। তৃণমূল কর্মীরা প্রস্তুত আছেন। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন প্রয়াত হাজি নুরুল। এই কেন্দ্রেও উপনির্বাচন হবে। তবে এই কেন্দ্র নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ফলে এখনই এখানে উপনির্বাচন হচ্ছে না।
