সালটা ছিল ১৯২২।শতাধিক বছর আগে আবিষ্কৃত হয়েছিল মিশরের রাজা তুতেনখামেনের সমাধি। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার সেই সমাধি আবিষ্কার করেছিলেন।এত বছর পর ফের আরও এক ফারাওয়ের সমাধি প্রকাশ্যে এল।ব্রিটিশ-মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল রাজা দ্বিতীয় থুটমোসের সমাধি আবিষ্কার করেছেন।এই দ্বিতীয় থুটমোসই অষ্টাদশ মিশরীয় সাম্রাজ্যের শেষ রাজা।তার সমাধি এতদিন অনাবিষ্কৃত ছিল। লাক্সারের কাছে থিবান নেক্রোপলিসের পশ্চিম উপত্যকায় এই সমাধি আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা।সমাধির ওপর অ্যালাব্যাস্টার পাত্রে রাজা দ্বিতীয় থুটমোস ও তার স্ত্রী রানি হাটসেপসুটের নাম খোদাই করা ছিল। এটার কারণেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা সমাধির পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হন।

এর আগে অনুমান করা হয়েছিল যে অষ্টাদশ মিশরীয় সাম্রাজ্যের ফারাওদের সমাধিকক্ষগুলি ভ্যালি অফ কিংসের নিকটবর্তী অঞ্চলে থাকতে পারে।কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকরা রানিদের সমাধিস্থলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই খনন কাজ চালান এবং একটি সুসজ্জিত সমাধি কক্ষের সন্ধান পান। সুসজ্জিত ঘর দেখেই তারা নিশ্চিত হন যে সেই কক্ষ ফারাওয়ের সমাধিস্থল।রাজা দ্বিতীয় থুটমোস তুতেনখামেনের পূর্বপুরুষ। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে তিনি রাজত্ব করেছেন। ফ্যারাও হাটসেপসুট হাতেগোনা কয়েকজন মিশরীয় রানির মধ্যে একজন, যিনি নিজেই নিজের সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন। হাটসেপসুট রাজা দ্বিতীয় থুটমোসের সৎ বোন এবং স্ত্রী ছিলেন। তার সমাধির প্রবেশপথ ২০২২ সালে আবিষ্কৃত হয়। তখন মনে করা হয়েছিল, সেটি তার কোনও এক রানির সমাধিগৃহ।

সমাধির ভেতরে রাজকীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সামগ্রীর কিছু অংশ, নীল লিপি, হলুদ তারা এবং ধর্মীয় লেখাযুক্ত মর্টারের টুকরোও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।তবে, রাজা দ্বিতীয় থুটমোসের মৃত্যুর কিছুদিন পরই ব্যাপক বন্যার কারণে সমাধিটি অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, সমাধির বেশিরভাগ দ্রব্য স্থানান্তরিত হয়েছে বলে তারা বিশ্লেষণ করে পেয়েছেন। সেগুলোর উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।

বছর চারেক আগে থিবসের ভ্যালি অফ দ্য কিংসের কাছে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া একটি সিঁড়ি। দুটো পাহাড়ের মাঝখানে গভীর গর্তের মধ্যে সিঁড়িটা দেখেই ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ ডক্টর পিয়ার্স লিদারল্যান্ডের সন্দেহ হয়েছিল সেটা কোনও প্রাচীন সমাধিক্ষেত্রে গিয়ে শেষ হয়েছে।লিদারল্যান্ডের আশা ছিল কোনও ফারাওয়ের রানি বা বংশধরের সমাধিতে পৌঁছেছে ওই পাথুরে সিঁড়ি।দীর্ঘ খননকার্যের পর সেই সমাধিতে পৌঁছনো সম্ভব হয়।সেখানে পাওয়া যায় নীল রং মাখানো এক টুকরো ভাঙা পাথর। সেই পাথরে হলদে তারার মোটিফগুলো দেখেই লিদারল্যান্ড বুঝে যান যে সেখানে কোনও ফারাওকে সমাহিত করা হয়েছিল।প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিশরে ফারাওদের সমাধিতে কী ধরনের আচার নিয়ম পালন করা হতো, সে কালের সমাজ ব্যবস্থার উপরে আলো ফেলতে পারে লিদারল্যান্ডের এই আবিষ্কার।এমনই মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।

–

–

–

–

–

–

–
