আবার মুখ দেখাতে হাজির ‘গিরগিটি’!

কী করতে ওখানে গিয়েছিলেন শোভনসুন্দর আপনি? ইট পাততে? সরকারি অনুষ্ঠান যাতে পাওয়া যায় সেই তালিকায় নিজের নাম ঢোকানোর সুপারিশ করতে?

কবিতার পংক্তির ভাব অনুযায়ী যত দ্রুত কণ্ঠস্বর ওঠানামা করতে পারেন তার থেকেও তাড়াতাড়ি বোধহয় রং বদলাতে পারেন বাচিকশিল্পী শোভনসুন্দর বসু (Shovonsundar Bosu)। সম্প্রতি অভয়াকাণ্ড নিয়ে প্রবল সর চড়িয়েছিলেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী অদিতি বসুরায়( Aditi Bosu Roy)। এমনকী রাত দখল নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করে, তা অ্যালবাম আকারে প্রকাশও করেছিলেন শোভনসুন্দর। সেই শোভনসুন্দর দেখা গেল শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কে রাজ্য সরকার আয়োজিত ভাষা দিবস-এর অনুষ্ঠানে। মুখ্যমন্ত্রীর (CM )কাছাকাছি যাওয়ার প্রবল চেষ্টা করতে।

পরনে সাদায় কালোয় পাঞ্জাবি। একেবারে দিনের উপযুক্ত সাজে একুশে ফেব্রুয়ারির মঞ্চে হাজির আবৃত্তিকার শোভনসুন্দর বসু। বাচিক শিল্পীর ছাড়াও তাঁর আর একটা পরিচয় হচ্ছে তিনি অদিতি বসু রায়ের স্বামী। এই অদিতি বসুরায়? আর জি করে তরুণী চিকিৎসক -পড়ুয়ার নির্মম ধর্ষণ-খুনের ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য, যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বয়ং চাইছেন দোষের ফাঁসি হোক, যখন এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) এমন আইন আনতে চাইছেন যাতে encounter-এ মারা যায় এই ধরনের ধর্ষক-খুনিদের, তখন রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন এই শোভনসুন্দর, অদিতিরা। সেই সময় ‘আগুনখেকো’ অদিতির বিভিন্ন পোস্ট নিজের ফেসবুক পেজের পোস্ট করেছেন এই বাচিকশিল্পী। অদিতিরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছেন, সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করেছেন, পুলিশ থেকে প্রশাসন সবাইকে আক্রমণ করেছেন।

অরিজিৎ সিং-এর গান জনপ্রিয় হওয়ার পরে সেই স্রোতে গা ভাষাতে রাত দখলের জন্য কবিতার অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন শোভনসুন্দর। আর সেই শোভনসুন্দরই তার কয়েকদিন পরে বিজয়ার আড্ডার ছবি দিচ্ছেন। তার কয়েকদিন পরে আবার পুদুচেরি সপরিবারে ভ্রমণে যাচ্ছেন! এয়ারপোর্টের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখছেন, চার দিনের মাথাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আশা করি!

ছত্রে ছত্রে শুধু দ্বিচারিতা, রং বদল, স্বার্থান্বেষী মনোভাবের প্রমাণ। আর রং বদলের চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা গেল শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কে একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান মঞ্চে। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের মুন্ডপাত করেছেন অদিতি বসু রায়, তাঁরই স্বামী শোভনসুন্দরের নির্লজ্জ চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রীর কাছাকাছি যাওয়ার এবং সেই আলোক বৃত্তে ঢোকার।

কী করতে ওখানে গিয়েছিলেন শোভনসুন্দর আপনি? ইট পাততে? সরকারি অনুষ্ঠান যাতে পাওয়া যায় সেই তালিকায় নিজের নাম ঢোকানোর সুপারিশ করতে? নাকি “আমি সরকারের পক্ষে আছি” বলে শিল্পী হিসেবে সুবিধে নিতে? গঠনমূলক সমালোচনার কেউ কখনও বিরোধিতা করেনি। এমনকী স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৪ অগাস্টের রাত দখলের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে যখন কলকাতা পুলিশ মূল অভিযুক্তকে ধরল এবং তারপরে সিবিআই এর হাতে মামলা গেলে তারাও সেই অভিযুক্তকেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিট জমা দিল, তখন আবার গোঁসা হল এই অদিতি-শোভনসুন্দরদের। এরপর যখন আদালত যাবজ্জীবন দিল তখন আবার তাঁরা খুশি হলেন। অথচ আন্দোলনের প্রথম দিকে এই অদিতিরাই ধর্ষকের ফাঁসি চেয়ে রাস্তায় হাততালি দিয়েছেন। এখন তাঁরা চাইছেন ধর্ষক-খুনি বেঁচে থাকুক! আসলে এই জিগির তুলে আন্দোলনের নামে নিজেদের ভাসিয়ে রাখার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা! আবার সরকারকে চটাতেও ভয়। আসলে দু নৌকায় পা দিয়ে চলার মরিয়া চেষ্টা এই ‘গিরগিটির মতো’ রং বদল করা শোভনসুন্দরের। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে দু নৌকায় পা… মনে আছে তো বাচিক শিল্পী!