১৪ অগাস্টের রাত। কলকাতার শ্যামবাজার থেকে কলেজ স্ট্রিট, ধর্মতলা হয়ে শহরের একাধিক প্রান্তে আবারও মুখর হল ‘রাত দখল’-এর স্লোগান। এক বছর আগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসক অভয়ার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, তার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ফের জনতা রাজপথে। দাবিটি আগের মতোই—ন্যায়বিচার ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এবার এই দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রশ্ন—এই আন্দোলন কি এখনও নিছক সামাজিক প্রতিবাদ, নাকি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির নতুন কৌশল?

আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে ‘অভয়া মঞ্চ’। মৃত চিকিৎসকের বাবা সংবাদমাধ্যমে মঞ্চের সদস্যদের সিপিএম ঘনিষ্ঠ বলে মন্তব্য করেছেন। যদিও এর আগে তিনি নিজেই বামেদের মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন। এর জবাবে ‘অভয়া মঞ্চ’-এর পক্ষ থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এটি কোনও রাজনৈতিক দলের সংগঠন নয়, বরং দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে চিকিৎসক, ছাত্র, সাধারণ নাগরিকসহ নানা স্তরের মানুষের একত্রিত হওয়ার মঞ্চ। তাদের দাবি, অভয়ার হত্যাকাণ্ড একটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাজনৈতিক হত্যা, আর বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করাও রাজনৈতিক। তবে তাদের লড়াই অদলীয় এবং কেবল ন্যায়বিচার আদায়ের জন্য।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের আগস্টে অভয়ার হত্যার ঘটনায় পুলিশ দ্রুত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেফতার করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নামে এবং চার্জশিট পেশ করে। বিচারক সঞ্জয় রায়কে ধর্ষণ, ধর্ষণে মৃত্যু এবং খুনের ধারায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। এরপর রাজ্য সরকার ও সিবিআই উভয়েই মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায়, যার মধ্যে সিবিআইয়ের আবেদন এখনও হাইকোর্টে বিচারাধীন।

২০২৪ সালের ১৪ অগাস্ট থেকে শুরু হওয়া ‘Reclaim the Night’ কর্মসূচি প্রথমে নিখাদ নাগরিক প্রতিবাদ হলেও, ২০২৫ সালে এসে এর চেহারায় স্পষ্ট রাজনৈতিক রং ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি, মঞ্চে দলীয় ভাষণ এবং প্রকাশ্য সমর্থন আন্দোলনকে ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় মূল ইস্যুটি—নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার—কোথাও আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। কলকাতার রাজপথে ‘রাত দখল’ এবার তাই শুধু ক্ষোভের নয়, বরং রাজনীতিরও মঞ্চ হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন – পুলিশ উপযুক্ত কাজ করেছে! শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় হিন্দোলের গ্রেফতার প্রসঙ্গে মন্তব্য কুণালের

_

_

_

_

_

_