INS বিক্রান্ত- ভারতের প্রথম নির্মিত বিমানবাহী রণতরী। ৭৬% স্বদেশী উপকরণ (যার মধ্যে সেইল-এর ৩০,০০০ টন ইস্পাত রয়েছে) দিয়ে তৈরি এই প্রকল্পে ৫৫০-টিরও বেশি ওইএম, ১০০-টি এমএসএমই যুক্ত ছিল, যা প্রত্যক্ষভাবে ২,০০০ এবং পরোক্ষভাবে ১২,৫০০ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।

দেশে নির্মিত প্রথম বিমানবাহী রণতরী (Indigenous Aircraft Carrier বা IAC 1) আইএনএস বিক্রান্ত উন্নয়নশীল এবং আত্মনির্ভর ভারতের এক গর্বের নিদর্শন। এটি ভারতীয় নৌবাহিনীর (Indian Navy) যুদ্ধজাহাজ ডিজাইন ব্যুরো দ্বারা পরিকল্পিত এবং কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড দ্বারা নির্মিত ভালতে তৈরি সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ। ২০২২ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় নৌবাহিনীতে নিযুক্ত করা আইএনএস বিক্রান্ত স্বদেশী সম্ভাবনা, সম্পদ ও দক্ষতার এক জ্বলন্ত প্রতীক।

উন্নত সয়ংক্রিয় যন্ত্রব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত এই রণতরীটি ৩০-টি বিমানের একটি বাহিনীকে পরিচালনা করে, যার মধ্যে রয়েছে মিগ-২৯কে (MiG-29K), কামোভ-৩১(Kamov-31), এমএইচ-৬০আর(MH-60R), মিগ-২৯ কেইউবি(MiG 29 KUB), চেতক(Chetak) এবং এএলএইচ(ALH)। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে গোয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে ২৩০ নটিকালল মাইল দূরে এমভি হেইলান স্টার থেকে আহত ক্রুদের উদ্ধার করে এটি নিজের বহুমুখী ক্ষমতা দেখায়। শুধু তাই নয়, আইএনএস বিক্রান্ত ৫০০০ পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ তৈরি করতে সক্ষম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) এবছর আইএনএস বিক্রান্তে (INS Vikrant) দীপাবলি উদযাপন করেছেন। সেখানে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর নাবিক এবং সেনাবাহিনীর কর্মীদের ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতি সম্মান জানান। জাহাজটি ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাতে সমুদ্র যাত্রা করে। সেই সময় দিন ও রাতে বিমান শক্তির মহড়া, অ্যান্টি-সাবমেরিন রকেট ফায়ারিং, রাতে চলন্ত অবস্থায় জ্বালানি ও রসদ পূরণ, নিকট পাল্লার, বিমান-বিধ্বংসী ফায়ারিং মহড়া, স্টিম পাস্ট এবং ফ্লাই পাস্ট প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি ক্রুদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজসভা।

আইএনএস বিক্রান্তের (INS Vikrant) নামকরণ করা হয়েছে ভারতের প্রথম বিমানবাহী রণতরী, আইএনএস বিক্রান্ত (R11)-এর নামানুসারে, যা ১৯৯৭ সালে কার্যক্রম থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। রণতরী টি ২৬২.৫ মিটার লম্বা এবং ৬১.৬ মিটার চওড়া, যার স্থানচ্যুতি প্রায় ৪৫,০০০ টন। এটি চারটি গ্যাস টারবাইন দ্বারা চালিত হয়, যা একত্রে প্রায় ৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। আইএনএস বিক্রান্ত সর্বাধিক ২৮ নট পর্যন্ত গতি অর্জন করতে পারে।
জাহাজটিতে মহিলা অফিসার ও নাবিক সহ প্রায় ১,৬০০ জন কর্মী থাকতে পারেন এবং প্রায় ২,২০০টি কক্ষ রয়েছে।
শর্ট টেক-অফ বাট অ্যারেস্টেড রিকভারি (STOBAR) পদ্ধতিতে কাজ করে, যা বিমানকে স্কি-জাম্প ব্যবহার করে উড়তে ও অ্যারেস্টার তারের সাহায্যে অবতরণ করতে সাহায্য করে।
রণতরীটি ৩০-টি পর্যন্ত বিমান বহন করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছ মিগ-২৯কে (MiG 29K) যুদ্ধবিমান, মিগ-২৯ কেইউবি (MiG 29 KUB), চেতক (Chetak), কামোভ-৩১ (Kamov 31), এমএইচ -৬০ আর (MH 60R) হেলিকপ্টার এবং উন্নত হালকা হেলিকপ্টার।
জাহাজটি প্রায় ৫,০০০ পরিবারকে বিদুৎ সরবরাহ করার জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যার অভ্যন্তরীণ তারগুলি এতটাই দীর্ঘ যে তা কোচি থেকে কাশী পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।

অপারেশন সিন্দুরের সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর আক্রমণাত্মক প্রতিরোধমূলক অবস্থানের কেন্দ্রে ছিল বিক্রান্তের ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ। উত্তর আরব সাগরে মোতায়েন এই ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপটি বাধ্য করার কৌশলে মুখ্য ভূমিকা নেয়, যার ফলস্বরূপ পাকিস্তান নৌবাহিনী রক্ষণাত্মক অবস্থানে যেতে বাধ্য হয় এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আর্জি জানায়। ভারত যখন ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার উপস্থিতি শক্তিশালী করছে, তখন এই রণতরীটি বিশ্বেও শীর্ষ প্রতিরক্ষা রফতানিকারকদের মধ্যে অন্যতম হওয়ার দেশের উচ্চাশাও তুলে ধরছে।

গোয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে প্রায় ২৩০ নটিকাল মাইল দূরে থাকা পানামা-পতাকাবাহী জাহাজ এমভি হেইলান স্টার থেকে একটি সংকটের বার্তা পেয়ে, আইএনএস বিক্রান্তের একটি সি কিং হেলিকপ্টার সফলভাবে তিনজন আহত ক্রু সদস্যকে চিকিৎসার জন্য আইএনএস হংসাতে নিয়ে আসে। এই অভিযানটি দেশের সমুদ্রসীমার বাইরেও মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণে ভারতীয় নৌবাহিনীর অবিচল প্রতিশ্রুতির উদাহরণ তৈরি করে।

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার প্রতীক আইএনএস বিক্রান্ত শুধু একটি যুদ্ধজাহাজ নয়। এটি একবিংশ শতাব্দীতে ভারতের কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা, প্রভাব এবং প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।



