মিডিয়া সম্পর্কে এই চাঞ্চল্যকর বক্তব্যটি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের। বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনার দাবি রাখে।

প্রবাদ আছে, “আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শিখাও”। যা নিজের পক্ষে পালন করা সম্ভব না, তার শিক্ষা অন্যেকে দেওয়া কি ঠিক ?

রোজ সন্ধ্যায় গণতন্ত্র নিয়ে সান্ধ্য টক শো মাতানো এবিপি আনন্দ নিজেরাই গণতন্ত্রের প্রতি উদাসীন ! আপনারা যদি আজকের অর্থাৎ 27–এ অগাস্ট (2019) এর যুক্তি তক্কো অনুষ্ঠান দেখে থাকেন, তবে প্রত্যেকেই লক্ষ্য করেছেন যে পক্ষের বক্তাদের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির চারজন প্রতিনিধি থাকলেও, বিপক্ষের বক্তাদের তালিকা ছিল যথেষ্ট গোলমেলে ! অর্থাৎ, সিপিএম, কংগ্রেস এর প্রতিনিধির সাথেই “বিপক্ষ”–এর মঞ্চ ভাগ করে নিতে হয়েছে তৃণমূলের প্রতিনিধি স্নেহাশীষ চক্রবর্তীকে ।

এই বিষয় নিয়ে আমাদের দল এর আগেও প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং নির্দিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন স্পষ্ট আকারে জানানো হয়েছে যে বিরোধী কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের যদি চারজন অংশগ্রহণকারী হন তবে বিতর্কের বিপক্ষে দল হিসাবে 4 জন বক্তা তৃণমূল কংগ্রেসেরও থাকবে , সে ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে অন্য রাজনৌতিক দলেরও যদি 4 জন প্রতিনিধ থাকে তাতে কারোর কোনো আপত্তি হওয়া উচিত নয় । কিন্তু আবেদন সত্বেও তাতে সাড়া দিচ্ছে না এবিপি আনন্দ কতৃপক্ষ । গণতন্ত্রের সাধারণ নিয়ম কে উপেক্ষা করে অসম চিন্তাধারা ও আদর্শের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে একই পক্ষে বসিয়ে তৃণমূলের মাত্র একজন প্রতিনিধির বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ভারতীয় জনতা পার্টি চার জনের প্যানেল কে পূর্ণ করছে সবটাই নিজেদের প্রতিনিধি দিয়ে ।


কেন হবে এমনটা ? কেন ভারতীয় জনতা পার্টির পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মাত্র একজন প্রতিনিধি থাকবে মা মাটি মানুষের ? এখন, এমন বিষয় ঘটলে কোথায় সমস্যা হয় ?

1. অনুষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক বক্তা 8 মিনিট সময় পান । কিন্তু এবিপি কতৃপক্ষের অগণতান্ত্রিক সূচী অনুসারে, যেখানে মাত্র একজন তৃণমূলের প্রতিনিধি মোট অনুষ্ঠানে সাকুল্যে 8 মিনিট সময় পাচ্ছেন, সেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির জুটছে 4 জন বক্তার 8 মিনিট করে মোট 32 মিনিট । অর্থাৎ, বিজেপির সময় 32 মিনিট, তৃণমূলের 8 ! এ কেমন বিমাতৃশুলভ আচরণ আপনারাই বিচার করুন ।

2. কোনো একটি ইস্যুতে বাম ও কংগ্রেসের সাথে ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারে দল । সেক্ষেত্রে একই মঞ্চে তাদের সাথে কোনো প্রস্তাবের একই পক্ষে কেন থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস ?

3. ভাবনার বিষয়, এটা কি তৃণমূল কংগ্রেস কে দুর্বল প্রতিপন্ন করার কোনো একটি উপায় ? কারণ বিজেপির বিপক্ষে কোনো একটি প্রস্তাবে একই পক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে আরো দুটি বা তিনটি দলকে রেখে জনমানসে কি এই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির চেষ্টাই চলছে না, যে বিজেপির বিপক্ষে একা লড়তে তৃণমূল অক্ষম ?

যারা এমন বিষয় প্রতিস্থাপন করতে চাইছেন তাদের বলে রাখা ভালো, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মা মাটি মানুষের দল এই বাংলার মাটিতে আজও প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করে । ২০১৪ সালের তুলনায় তৃণমূলের বিপুল ভোট বৃদ্ধি তারই ইঙ্গিত দেয় । সুতরাং, মানুষের জোটে তৃণমূল বিশ্বাসী । ৩৪ বছর বাংলাকে সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ রাজ্য করে তোলা কোনো দলের সাথে তৃণমূলকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কখনোই সফল হবে না।

আমাদের মূল বক্তব্য ও দাবি ভীষন সাধারণ ছিল । যা রক্ষা করতে ব্যার্থ এবিপি আনন্দ । একটি ফুটবল দলে 11 জনের বিরুদ্ধে আরেকটি দলের 3 জন থাকলে সেই লড়াই কি যুক্তিযুক্ত কিংবা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে ? কখনই পারে না ।

সিবিআই, ইডির রক্তচক্ষু কে উপেক্ষা করার ক্ষমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের থাকলেও অন্য অনেকেরই তা নেই । আমরা ভুলে যাইনি, সত্য সংবাদ প্রকাশের “অপরাধে” কিভাবে একটি হিন্দি সংবাদ চ্যানেলের সম্প্রচারে বিভিন্ন রকম টেকনিক্যাল বাধা সৃষ্টি করা হয় কেন্দ্রের “হিরক রাজার” সরকারের তরফে । আমরা ভুলে যাইনি, বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলে এই একই গোষ্ঠীর হিন্দি সংবাদ মাধ্যমের দুজন সন্মানীয় ও প্রবীণ সাংবাদিককে চাকরি খোয়াতে হয় কোনো অজ্ঞাত কারণে । আমাদের রাজ্যে এবং দেশে এখনও অনেক সংবাদমাধ্যম এবং সংবাদিক রয়েছেন যারা সাদা কে সাদা আর কালো কে কালো বলার সৎসাহস রাখেন, আমরা তাদের কুর্নিশ জনাই । আর অন্যদিকে কেন্দ্রের শাসককে খুশি করতে হয়ত বা এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে কিছু সংবাদ গোষ্ঠী । কিন্তু গণতন্ত্রের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল তৃণমূল কংগ্রেস কখনোই এই অন্যায় মুখ বুজে বরদাস্ত করবে না ।

তাই এই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাদের দল । এরূপ অন্যায় পদ্ধতিকে ধিক্কার জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের জানাচ্ছে, যে আগামী এক সপ্তাহ আমাদের কোনো প্রতিনিধি এবিপি আনন্দ চ্যানেলে যাবেন না ।
আশা করি, সান্ধ্য বিতর্কের মঞ্চে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমাদের এই প্রতিবাদের প্রতি আপনাদের সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে ।