এভাবে আলেসান্দ্রোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো অর্থহীন

অর্কদ্যুতি রায়

এমনিতেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বনাম ‘কোয়েস’ তরজা চরমে। দু’পক্ষের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে। ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্ডেজকে রিক্রুট করেছে কোয়েস। ফলে কোচের কিছু ভুল-ত্রুটি দেখলেই তা নিজস্ব ঢঙেই সকলের সামনে তুলে ধরতে মরিয়া ইস্টবেঙ্গল শীর্ষকর্তারা। কখনও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, কখনও বা কায়দা করে চুপিসাড়ে খবরটা সংবাদমাধ্যমের কানে তুলে দিয়ে।

ডার্বির প্রাকলগ্নে লাল-হলুদ কর্তাদের এহেন ‘অভিনব’ আলেসান্দ্রো-বিরোধিতা দেখে সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ চরমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনিতেই বারবার লাল-হলুদ সমর্থককুল বুঝিয়ে চলেছেন, কোয়েস-এর পাশেই রয়েছেন তাঁরা। এতদিন ক্লাব চলত কর্তাদের অঙ্গুলিহেলনে। যা ইচ্ছে তাই হত। কিন্তু এখন কোয়েস কর্তৃপক্ষ কড়া হাতে ক্লাব শাসন করছে। আর সেখানেই নাকি বড় ‘বিপদ’ বেড়েছে কর্তাকুলের। আসলে সভ্য সমর্থকরা সব সময়ই চান, ক্লাবে সাফল্য আসুক। শৃঙ্খলায় মুড়ে থাকুক লাল-হলুদ তাঁবু। কিন্তু সেই শৃঙ্খলা-অনুশাসন আদতে কর্তাদের ‘ফ্রি মুভ’-এর ক্ষেত্রে বড় বাধা, দাবি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের।

রবিবাসরীয় ডার্বির আগে আইএফএ পরিচালিত সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গল কোচ কেন ক্লাবের জার্সি পরেননি তা নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। “কর্তাদের একাংশ সংবাদমাধ্যমকে উস্কানোর চেষ্টা করছেন।” এমনই দাবি ইস্টবেঙ্গলের প্রধান ফ্যান ক্লাব ‘ইস্টবেঙ্গল দ্য রিয়্যাল পাওয়ার ‘-এর সদস্যদের। তাঁদের কথা অনুযায়ী, “আসলে কোয়েস আসার ফলে আধুনিকতা এবং অনুশাসনে মুড়েছে ক্লাব। এই উন্নতির ফলে হয়তো কর্তাদের লাভ-লোকসানটা বড় বেশি প্রকট হচ্ছে। তাই কোয়েস ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পেরে বিষয়টা খানিকটা মার ছুরি কোচের বুকে।”

ডার্বির সাংবাদিক বৈঠকে কেন ক্লাবের জার্সি কিংবা লোগো দেওয়া টি-শার্ট পরেননি কোচ, এই ছিল আলেসান্দ্রোর ‘অপরাধ’। অথচ সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফে এমন কোনও নিয়ম নেই যে, ফুটবল নিয়ামক সংস্থা পরিচালিত সাংবাদিক বৈঠকে ক্লাবের জার্সি কিংবা টি-শার্ট পরতেই হবে। তিনি কেন একটি খয়েরি রঙের টি-শার্ট পরে সাংবাদিক বৈঠকে গিয়েছিলেন – এই ছিল স্প্যানিশ কোচের ‘অন্যায়’। আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দেন, “আমাদের তরফে নির্দিষ্ট কোনও ড্রেস কোড বলে দেওয়া হয়নি। তাঁর যা মনে হয়েছে তিনি পরেছেন।” তবে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের একাংশ খানিকটা ট্যারা চোখেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন আলেসান্দ্রোকে। তিনি নাকি সম্মান জানাননি ক্লাবকে!

তা প্রশ্ন একটাই। যে কোচ আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ক্লাবকে সাফল্য দেওয়ার, তাঁকে কেন কোনও কর্তা ‘গাইড’ করলেন না জার্সি পরার জন্য ? নাকি তিনি ‘কোয়েসের লোক’ – তাই বিতর্ক ডেকে বিপদ বাড়ে বাড়ুক!

ইস্টবেঙ্গল জনতা থাকছে কোচের পাশেই। ইবিআরপি সদস্যদের কথায়, “আমরা কোয়েস কিংবা ক্লাবকর্তা বুঝি না। আমরা খেলা বুঝি। পারফর্ম্যান্স বুঝি। ক্লাবকে ভালোবাসি। যে বা যাঁরা ক্লাবের জন্য ভালো করবেন আমরা তাঁদের সঙ্গে। কর্তাদের ঔদ্ধত্য সহ্য তো করলাম বহুদিন। একজন স্প্যানিশ কোচকে শিখিয়ে পরিয়ে নেওয়াটাও তো আমাদেরই কাজ। তা না করে তাঁকে কাঠগড়ায় তোলার যে প্রক্রিয়া চলছে, তার চরম বিরোধিতা করছি।”

এ সব শুনতে কি পাচ্ছেন কর্তাকুল ?

Previous articleভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল রাসায়নিক কারখানা: মৃত কমপক্ষে 20, ধ্বংসস্তুপে আটক 70
Next articleচার দিনের সফরে কলকাতায় মোহন ভগবৎ