পুজোর মুখে বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে! আশঙ্কায় ঘুম নেই স্যাকরাপাড়ার

অকুলপাথারে বৌবাজারের সোনার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। কোটি টাকার অর্ডারি সোনা কী ভাবে উদ্ধার হবে, কী ভাবে মিলবে দোকানে থেকে যাওয়া নগদ টাকা, এই চিন্তাই যেন পুজোর মুখে তাঁদের অতল গহ্বরে ঠেলে দিয়েছে। এভাবে কর্মহীন থাকলে ভাতের খোঁজে পুজোর মুখেই বাঙালি স্বর্ণ-শ্রমিকদের যেতে হবে ভিনরাজ্যে।
এই ভয়াবহ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন স্বর্ণ- ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। কিন্তু তাঁদের কথা এখনও কেউ ভাবেনি।

ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ে ঘরছাড়া হতে হয়েছে বৌবাজারের একটা বড় অংশের বাসিন্দাদের। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু সেই আশ্বাসেও দুশ্চিন্তা কমছে না বৌবাজারের সেকরাতলা লেন, গৌরী দে লেন, দুর্গা পিতুরি লেনে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য সোনার দোকান ও ছোট ছোট কারখানার কয়েক হাজার কর্মীর। কারন তাঁদের কথা এখনও প্রশাসন কিছু বলেনি।
বৌবাজারে এই এলাকায় প্রায় 3 হাজার শ্রমিক সোনার কাজ করেন। ভিন রাজ্য থেকেও বহু কর্মী এখানে কাজ করতে আসেন। এই পাড়াগুলিতেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন তাঁরা। ছোট ছোট ঘরেই চলে গহনা তৈরির কাজ। এই এলাকাই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মেট্রো-বিপর্যয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া ওই সব কারখানার মালিকেরা ঘরে মজুত সোনাও বের করে আনতে পারেনি। সব মিলিয়ে আটকে থাকা প্রায় কোটি টাকার সোনার চিন্তায় ঘুম গিয়েছে তাঁদের।
দুর্গা পিতুরি লেনের এক ছোট স্বর্ণ-ব্যবসায়ীর কথা, “শনিবার কারখানায় তালা দিয়ে চলে গিয়েছি। কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। আমার দোকানেই আটকে আছে কয়েক লক্ষ টাকার সোনা। কী ভাবে উদ্ধার হবে জানি না।’’ আর এক ব্যবসায়ীর দোকান গৌরী দে লেনে। অর্ডার নেওয়ার সময় অগ্রিম নিয়েছিলেন তিনি। কী বলে গ্রাহকদের বোঝাবেন, তাই বুঝতে করতে পারছেন না। তাঁর বক্তব্য, “অনেকে সোনার অর্ডার দিয়ে গিয়েছে। ভাউচারও নিয়েছি। এখন তো কাস্টমার কথা শুনবে না। ” এমনই অভাগা স্বর্ণ- ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে পথে নেমে বিক্ষোভও দেখান। তাঁদের দাবি একটাই, শিগগির দোকান খুলতে সাহায্য করুক প্রশাসন। স্বর্ণ- শ্রমিকদের আক্ষেপ, “আগেভাগে থানা-পুলিশ যদি সতর্ক করতো, তাহলে মাল সরাতে পারতাম”।
মঙ্গলবার দেখা যায় বৌবাজারে বড় রাস্তার উপর কিছু দোকান খোলা,কিন্তু খদ্দের নেই। এমন ভাবে আরও কিছু দিন চললে সোনার কাজে জড়িত শ্রমিকদের হয়তো পুজোর মুখে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে ভিন রাজ্যে। এই আশঙ্কাই ঘুম কেড়ে নিয়েছে স্যাঁকরাপাড়ার মালিক-শ্রমিকদের।

Previous article“দিদিকে বলো”-তে যুবদের নামাতে অভিষেকের গাইড লাইন
Next articleNews@Dinner