তাঁর সম্পর্কে না জানলে হয়ত অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে!

কে সিভান। ডঃ কৈলাশাভাদিভু সিভান। এতদিনে হয়ত আমারা সবাই কে সিভানকে খুব ভালোভাবে চিনে গিয়েছি। ইসরো চেয়ারম্যান কে সিভান।

গণিতে স্নাতক। এরপর মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। বিখ্যাত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস, ব্যাঙ্গালোর থেকে এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এরপর ডক্টরেট। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, মুম্বই থেকে।

তাঁর পরিবারে তিনিই প্রথম স্নাতক। এরপর মাদ্রাজ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে যাবার সময়ই পায়ে প্রথম জুতো পরতে পারেন কে সিভান। এর আগে খালিপদই ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি।

স্কুল শেষ করার পরই চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে। এক সপ্তাহ ভুখা অনশনও করেছিলেন এই নিয়ে। তবুও বাপের মন টলেনি।

তাঁর বাবার বক্তব্য ছিল, “তুই যদি দূরের কলেজে পড়তে যাস, তবে চাষের মাঠ কি আমি একা সামলাবো? আর তোকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে গেলে আমাকে জমি বিক্কিরি করতে হয়। তুই কি চাস আমরা সবাই না খেতে পেয়ে মরি?”

এরপর আর কথা চলে না বাবা ছেলের সঙ্গে। ছেলেকে অতঃপর যুক্তি মেনে নিতেই হয়। সত্যিই তো, তাদের এই ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। তাও আবার খরার দাপটে কোনও বছর ফসল ভালো না হলে তো আর কথাই নেই! বড় ক্লাসে তাঁর বয়সী ছেলেরা ফুলপ্যান্ট পরে আসত। তাঁকে তাঁর বাবার পুরোনো ধুতি পরেই কাজ চালাতে হয়!

তাঁর বাবা মতবদল করলেন একসময়। ততদিনে গণিতে স্নাতক হওয়া গিয়েছে। বাড়ির কাছেই ছিল কলেজ। রোজ কলেজ যাওয়ার আগে আর পরে চাষের মাঠে বাপকে সাহায্য করতে হয়েছে। তাঁদের তো আর আলাদা করে মুনিশ রেখে চাষ করার সামর্থ্য নেই!

তবুও বাপের মন বদলেছে।

“যা হয় হোক। তুই যখন চাইছিস তো ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়। জমি বিক্রি না হয় করেই দেব। তবে দেখ, তোকে কিন্তু চাকরি একটা জোগাড় করতেই হবে। চাষীর ছেলে গ্র্যাজুয়েট হয়েছিস। আমাদের চোদ্দপুরুষে যা কেউ হতে পারেনি। তোকে আর আটকাবো না।”

প্রথম বড় শহরে গিয়ে পড়ল সিভান। এবার পায়ে উঠল জুতো । ফুলপ্যান্টও।

এরপর ইঞ্জিনিয়ার হয়েই গেল! পরিবারে স্নাতকই কেউ ছিল না, আবার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর!

জীবনে যখন যা চেয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কোনও কিছুই পায়নি তিনি। যা পেয়েছেন, যেটুকু পেয়েছেন, তাতেই জান লড়িয়ে দিয়েছেন। সাফল্য এসেছে। গরীব প্রান্তিক চাষীর ছেলের লড়াই কখনও ব্যর্থ হয়না। হয়নিও।

মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে পাস করার পর ভেবেছিলেন হ্যাল বা ন্যালে চাকরি জুটবে। জোটেনি। তার বদলে আইআইএস ব্যাঙ্গালোরে মাস্টার্স করার সুযোগ জোটে।

ইসরোয় চাকরি পেয়ে ভেবেছিলেন কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির প্রকল্পে তাঁকে সামিল করা হবে। কিন্তু তাঁর ভাগ্যে জুটল বিক্রম সারাভাই সেন্টার।

নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা ছিল। জীবনে কখনও কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী থাকেননি। পড়াশুনোয় কোনও টিউটর নেওয়ার সামর্থ্য তাঁর ছিল না। তিনি চিরকালই বলতে গেলে একজন স্বশিক্ষিত মানুষ। কাজ করতে জানেন। কিভাবে সফল হতে হয়, তা তিনি ঠেকে শিখেছেন।

Previous articleমুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে আটক 10 প্রাথমিক শিক্ষক
Next articleপুরসভায় অনাস্থা আনতে চলেছেন তৃণমূল,জানলেন খাদ্যমন্ত্রী