‘রক্ষাকবচ’ পেলেন না রাজীব, আদালতের এক্তিয়ার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

হাইকোর্টে হারিয়ে যাওয়া ‘রক্ষাকবচ’ বারাসতে এসেও খুঁজে পেলেন না ‘ফেরার’ থাকা ADG-CID রাজীব কুমার। বরং বারাসাত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক সব্বর রশিদি মঙ্গলবার রায়ে বলেছেন, “রাজীব কুমারকে রক্ষাকবচ দেওয়ার এক্তিয়ার না থাকলেও হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখা হলো।” হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্র রাজীবের মামলার রায়ে বলেছিলেন, রক্ষাকবচ থাকলে তদন্তকারী সংস্থা স্বাভাবিক গতিতে কাজ করতে পারবেনা। সেই কারনেই রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করা হলো।

মঙ্গলবার বারাসাত জেলা দায়রাছ আদালতের বিচারকও সেই রায়েই সম্মতি জানিয়েছেন। তবে একইসঙ্গে জেলা বিচারক বলেছেন, রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জি শোনা বা তার ভিত্তিতে রায় ঘোষনা করার এক্তিয়ার নেই দায়রা আদালতের। আগাম জামিনের জন্যে রাজীব কুমারকে যেতে হবে আলিপুর জেলা আদালতে।

মঙ্গলবার প্রথমে রাজীব কুমারের আইনজীবীরা বারাসতের এমএলএ-এমপি বিশেষ আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। বিরোধিতা করার জন্য ছিলেন CBI আইনজীবীরাও। CBI-এর তরফে রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করারছ আবেদন জানানো হয়। বিশেষ আদালতের বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে জানান যে, এই আদালতের আগাম জামিন দেওয়া বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার এক্তিয়ার নেই। সেই ক্ষমতা রয়েছে জেলা দায়রা আদালতের।

এই রায়ের পরেই তড়িঘড়ি জেলা আদালতে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন পেশ করেন তাঁর আইনজীবীরা। বেলা 2টো নাগাদ শুরু হয় শুনানি। রাজীব কুমারের আইনজীবী গোপাল হালদার আগাম জামিনের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ‘‘রাজীব কুমার এর আগেও CBI-এর জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করেছেন। শিলংয়ে CBI রাজীব কুমারের সঙ্গে প্রায় 40 ঘণ্টা কথা বলেছে। গোপালবাবু বলেন, ‘‘রাজীব কুমার জানিয়েছেন যে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তিনি ফিরে এসে CBI দফতরে যাবেন। তার পরেও তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার কী প্রয়োজন?”
CBI কৌঁসুলিরা এর পর আগাম জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ” রাজীব কুমার ইচ্ছাকৃতভাবেই CBI-এর ডাক উপেক্ষা করছেন। তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা মামলার তথ্য লোপাটের অভিযোগ আছে। রাজীব প্রভাবশালী। তাঁকে বাইরে রাখলে তদন্ত প্রভাবিত হবে”।

দু’তরফের বক্তব্য শোনার পর আদালত রায়দান স্থগিত রাখেন। কিছু সময় পর রায় ঘোষনা করে বারাসাতছ আদালতের বিচারক সব্বর রশিদি বলেছেন, রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জি শোনা বা তার ভিত্তিতে রায় ঘোষনা করার এক্তিয়ার নেই দায়রা আদালতের।

ফলে এদিন কার্যত কোনও সুবিধাই পেলেন না CBI বা রাজীব। তবে আলিপুর আদালতে ফের আগাম জামিনের আবেদন জানানোর সুযোগ পেলেন রাজীব কুমার।

এদিকে, আইনি মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আগাম জামিনের আবেদন শোনার এক্তিয়ার না থাকায় এদিন সকালে বিশেষ আদালত এই মামলা না শুনেই ফিরিয়ে দেয়। এরপর বারাসাত আদালতের বিচারক সব্বর রশিদি-ও একইভাবে নিছের এক্তিয়ার না থাকার কথা বলেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের যে এক্তিয়ার নেই, তা শুনানির আগেই জানানো উচিত ছিলো। এক্তিয়ার নেই জেনেও এই মামলা জেলা আদালত কেন শুনেছে?
আগাম জামিন চেয়ে এবার আলিপুর কোর্টে ফের আবেদন করতে পারেন রাজীব কুমার। CBI-রাজীব পরবর্তী আইনি-যুদ্ধ হতে পারে আলিপুর আদালতে। তবুও প্রশ্ন থাকছেই, কেন, কিসের ভিত্তিতে এই আগাম জামিনের পূর্ণ শুনানি করতে দিলেন জেলা বিচারক। বিচারকের নিজের এক্তিয়ার জানা উচিত ছিলো।
ওদিকে শোনা যাচ্ছে, বুধবার ফের আলিপুর কোর্টে ফের নতুনডাবে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন রাজীব কুমার। এদিকে, এখনও বেপাত্তা রাজীব কুমার। এই মুহূর্তে তিনি কোথায় আছেন তা নিয়ে নানা মহল নানা জল্পনা ছড়াচ্ছে।