Saturday, August 23, 2025

পিতৃলোক প্রীতার্থে দান : তর্পণ শব্দটি এসেছে ‘ তৃপ ‘ ধাতু থেকে। যার অর্থ তৃপ্ত বা প্রীত হওয়া। পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে জল নিবেদন করে তাদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পণ বলা হয়। অর্থাৎ অপরের প্রীতার্থে জলদান। মানুষ তার জীবন কালে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে, এই পাপ মোচনার্থে সনাতন শাস্ত্রমতে তর্পণ করতে হয়। তর্পণ এর সময় ঈশ্বরের কাছে পূর্বপুরুষের আত্মার নাম উচ্চারণ করে তাদের সুখ শান্তি কামনা করা হয়।

তর্পণ মন্ত্র অর্থ : ব্রম্মা হইতে তৃণ শিখা পর্যন্ত সমস্ত জীব জগৎ মদ্দত্ত জল দ্বারা তৃপ্ত হউক, এই প্রার্থনা। জীব জড় দেবতা, সকলকে তৃপ্ত করায় তর্পণের মূল তাৎপর্য। তাঁরা যেন তৃপ্ত হন। তৃপ্তিদানই তর্পণ এর মূল কথা। কেউ কেউ বলেছেন তর্পণ আসলেে স্মরণোৎসব। আবার কারো মতে তর্পণ আসলে শিকড়ে ফেরার অনুষ্ঠান।

মহালয়া : আমাদের অতীতকে স্মরণ করাা হয় তর্পণের ঊষালগ্নে। পরলোকগত পরিজনেরা যখন ফিরে আসেন নিজধামে, সেই সময় আনন্দময়। তাই মহালয়া শব্দের অর্থ আনন্দ নিকেতন।

“মহালয়া” – পূর্বপুরুষের তর্পণ আদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। এই পক্ষ পিত্রুপক্ষ, মহালয়া পক্ষ, ও অপরপক্ষ নামেও পরিচিত। মহালায়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা।
মহালয়া এলেই দেবী বন্দনার সুরে ধ্বনিত হয় বাংলার হৃদয়। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। বুকের মধ্যে জাগে আনন্দ শিহরিত কাঁপন; এবার মা আসবেন। মহালয়া এলেই বাংলার মাটি নদী আকাশ প্রস্তুত হয় মাতৃপূজার মহলগ্নকে বরণ করার জন্য।

মহালয়ার তর্পণ বর্তমানের এই বিচ্ছিন্ন সময় এ, সকলের সঙ্গে বৈরিতা আর সন্দেহ সম্পর্কের এই আকালে তর্পণ এক অন্য অনুভব এর আয়োজন।

মহালয়ার তর্পণ আমাদের যাপন ভূমিকে ছড়িয়ে দিতে চাই অতীতে, স্মৃতিতে। বলে বান্ধব- অবান্ধব সকলের সঙ্গে সংযোগ- সম্পর্কের কথা। সকল জীবে এই প্রীতির আয়োজন নিয়ে আমরা দেবীপক্ষে প্রবেশ করি। মানুষের প্রকাশের আলো একলা নিজের মধ্যে নয়, সকলের সঙ্গে মিলনে। রবীন্দ্রনাথ তার “মেঘদূত” প্রবন্ধে বলেছিলেন ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আমরা যেন কোন এক কালে একত্র এক মানসলোকে ছিলাম, শেখান হইতে নির্বাসিত হইয়াছি’।

মহালয়ার তর্পণ এর মন্ত্র সেই নির্বাসন ভেঙে, বিচ্ছেদ ছিড়ে মানসলোক এক মিলন স্বরের দ্যোতনা তৈরীর প্রয়াস আছে। ব্রহ্মা থেকে তৃণ পর্যন্ত সমগ্র জগতকে এক, অভিন্ন দেখার এমন আয়োজন, বিশ্ব জুড়ে যোগাযোগ স্থাপনের এমন আয়োজন বিরল।

মহালয়ার সকালে তর্পণ মানে গঙ্গার ঘাটে হইহই করে স্নানের হুজুগ নয়। না বুঝে মন্ত্র পড়ে নিয়ম মেনে তৃপ্ত হওয়া নয়। বরং এক গভীর অন্তরঙ্গ দর্শনের পাঠাভ্যাস। যেখানে মানুষ তাঁর অতীতের ভিত্তিভূমি কে একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য এক পক্ষকাল সময় পায়।

আরও পড়ুন-গুগলের জন্মদিনে দেখে নিন স্পেশাল ডুডল

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...
Exit mobile version