নিজাম প্যালেসে CBI-এর জেরার পর বাইরে এসে শনিবার বিজেপি নেতা মুকুল রায় স্পষ্ট বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে। ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে মুকুল এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন।

মুকুলের এই মন্তব্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। উঠেছে একাধিক প্রশ্নও।
প্রশ্ন উঠেছে, মুকুল ঠিক কাকে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের হোতা বলতে চেয়েছেন?


প্রশ্ন 1 : নারদ-কাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে CBI, মুকুলকে প্রাক্তন পুলিশ কর্তা মির্জার মুখোমুখি বসিয়ে জেরা চালাচ্ছে CBI, মির্জাকে গ্রেফতারও করেছে CBI-এর তদন্তকারী টিম। CBI রাজ্য সরকারের কোনও সংস্থা নয়। CBI সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও CBI-এর কাজকর্মের ওপর নজর রাখেন। মুকুল রায়ের ‘চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ সঠিক হলে, ধরে নিতেই হবে হাই ভোল্টেজ এই নারদ-কাণ্ডে মুকুল রায়কে ফাঁসাতে চাইছেন খোদ মোদি এবং শাহ। মুকুল রায় কি এদিন সেটাই বোঝাতে চাইলেন?

প্রশ্ন 2 : মুকুল বলেছেন, যারাই দুর্নীতিতে গ্রেফতার হচ্ছেন, তাঁদের উনি বলে দিচ্ছেন মুকুল রায়ের নাম নিতে। বিজেপি’র জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুলের এই অভিযোগের ভিত্তি থাকার অর্থ,মোদি এবং শাহ এই মুহূর্তে মুকুলের থেকে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি। সে কারনেই মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে CBI ফাঁসাচ্ছে মুকুলকে। মুকুল রায়ের এই বক্তব্যের অর্থও একই, মুকুলকে ফাঁসাতে চাইছেন খোদ মোদি এবং শাহ। বিজেপির শীর্ষনেতাদের এই ‘কীর্তি’ কি ধরে ফেলেছেন মুকুল রায় ?


প্রশ্ন 3 : মির্জা নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত। মির্জাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেক্ষেত্রে, মির্জাকে নিয়ে কোন পথে তদন্ত চলবে তা স্থির করার অধিকার একমাত্র CBI-এর। মুকুলের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ হলে, তা করছে CBI এবং কেন্দ্রের শাসকদলের জাতীয় কর্মসমিতির কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ করার সাহস CBI ততক্ষণ পর্যন্ত পাবেনা, যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় শাসক দলের সবুজ সংকেত আসে। সেটাই কি বোঝালেন মুকুল?

প্রশ্ন 4 : বিজেপিতে মুকুল রায় যোগ দিয়েছেন বছর দুয়েক আগে। আজ পর্যন্ত দলে মুকুলের পাওয়া সর্বোচ্চ পদ দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। দলে মুকুল যোগ দেওয়ার সময়েই কেন্দ্রীয় নেতারা তথা রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, আইন আইনের পথে চলবে। মুকুল যদি অপরাধী হন, শাস্তি পাবে। CBI নারদ-কাণ্ডে তাঁকে তলব করার পর মুকুলের কি এই সন্দেহ হচ্ছে যে তাঁর বর্তমান দলই তাঁকে ফাঁসাচ্ছে?

মোটের ওপর, মুকুল রায় মুখে যতই বলুন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় CBI চালিত হচ্ছে, তা যে একফোঁটাও বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং এই অভিযোগ যে হাস্যকর, তা শিশুও বুঝে ফেলেছে। মুকুলের মন্তব্যে রাজনৈতিক মহল বুঝেছে, মুকুল রায় আসলে বিজেপির কেন্দ্রের এবং রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্বকেই কাঠগড়ায় তুলেছে। আর এর অর্থ, বিজেপিতে মুকুলের ঘর করা আর বেশিদিন সম্ভব হবেনা। এটা বঙ্গ-বিজেপির নেতারাও জানেন। আর জানেন বলেই, এদিন নিজাম প্যালেসে CBI জেরার সামনে যাওয়ার পথে মুকুল রায় নিজের দলের একজন নেতাকেও পাশে পাননি। অথচ তৃণমূলে থাকার সময় যেদিন মুকুলকে CBI ডেকেছিলো, সেদিন সল্ট লেকের CGO কমপ্লেক্স ভেঙ্গে পড়েছিলো তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ভিড়ে।

এদিন নিজের ভয়ঙ্কর বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে দু’দলের ফারাকটা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন মুকুল রায়। সেটা বুঝেছেন বলেই এভাবে শাহকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলতেও দ্বিধাগ্রস্ত হননি মুকুল রায়। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
