অষ্টমীতে কেন হয় কুমারী পুজো? জেনে নিন কুমারী আরাধনার মাহাত্ম্য

নারীরা সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী। সমাজ গঠনে নারীদের অগ্রনী ভূমিকা প্রয়োজন। তাই দেশে নারীশক্তির উত্থান হোক। নারীদের যথাযথ সম্মান প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যেই বেলুড় মঠে দেবী দুর্গার বন্দনায় কুমারী পুজোর প্রচলন করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই প্রথা মেনেই দশকের পর দশক ধরে মহাষ্টমীর সকালে হয় কুমারী পুজো। অসুরদলনীকে কন্যাজ্ঞানে আরাধনায় মেতে ওঠে গোটা বাঙালি সমাজ।

শক্তি পুজার অঙ্গ কুমারী পূজা। মনেপ্রাণে দেশে নারীশক্তির উত্থান চাইতেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৯০১ সাল থেকে, বেলুড় মঠে দেবী দুর্গার পুজোর সঙ্গে তাই জুড়ে দিয়েছিলেন কুমারী আরাধনার প্রথা। সেই প্রথা মেনে মহাষ্টমীর সকালে কুমারী বন্দনা চলে বেলুড় মঠে। পাঁচ বছরের কন্যাকে দেবী দুর্গা হিসেবে আরাধনা করা হয়।

তন্ত্র মতে, ২ বছর থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে অবশ্য, ২ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করতে হয়। মহাষ্টমী তিথিতে বেলুড় মঠে সকাল ৯টা নাগাদ শুরু হয় কুমারী পুজো। উমা রূপে পুজো করেন মঠের মহারাজ ও পুরোহিতরা। তাকে লাল বেনারসি পরানো হয়। ফুলের সাজে সাজানো হয়। এরপর সিংহাসনে বসিয়ে শুরু হয় পুজো-অর্চনা ও আরতি।

of

শুধু বেলুড় মঠ নয়, গোটা রাজ্যের মণ্ডপে মণ্ডপে চলে কুমারী পুজো। জয়রামবাটি ও বরানগরের মায়ের বাড়িতেও কুমারী পুজোর ভিড় হয় দেখার মতো।

মানুষের বিশ্বাস, কুমারী পুজোর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর হবে। বাড়বে ঐশ্বর্য। সেই বিশ্বাসেই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে নারীশক্তিকে পুজো করার নানা পদ্ধতি।

কুমারী পূজা কেন করা হয়:

হিন্দু শাস্ত্র মতে, সাধারণত এক বছর থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে। বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে। নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। হাতে দেওয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা। ঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয়। চারদিক মুখরিত হয় শঙ্খ, উলুধ্বনি আর মায়ের স্তব-স্তুতিতে।

দার্শনিক তত্ত:

কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব সম্পর্কে জানা যায়, নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশব ব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। এ সাধনপদ্ধতিতে সাধকের নিকট বিশবজননী কুমারী নারীমূর্তির রূপ ধারণ করে; তাই তার নিকট নারী ভোগ্যা নয়, পূজ্যা।

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleমহাষ্টমী breaking: সঙ্কটে বন্ধ মৃতদেহের ঠিকানা “পিস হাভেন”; প্রমোটারের থাবা?