রাজ আজ্ঞা এখনও পালন করে যান ওঁরা। অসহিষ্ণু এই সময়ে অনন্য নজির কোচবিহারে। সারাদিন নির্জলা উপোষ থেকে রাসচক্র তৈরি করেন আলতাফ মিঞারা। ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে কোচবিহারের পুজো, পার্বণ, আচার বিধি পালিত হয় রাজ নিয়মে। রাজা নেই, নেই তার রাজ্য শাসনও। কিন্তু রাজ প্রথাকে মান্যতা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতর অর্থানুকূল্যে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড পরিচালনা করে পুজো।
শারদোৎসব দীপাবলি সহ নানা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান কোচবিহারে হয়ে থাকলেও, এই জেলার মূল উৎসব রাসমেলা। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক স্তরে এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী কার্তিক পূর্ণিমায় মেলার সূচনা। মূল আকর্ষণ কাগজের তৈরি রাসচক্র। যা বংশ পরম্পরায় নির্মাণ করছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী শিল্পীরা। সে পরম্পরা এগিয়ে চলেছেন আলতাফ মিঞা।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমায় সারাদিন নির্জলা উপোস থেকে এই নির্মাণ কল্পে হাত দেন তিনি। লক্ষ্মী পূর্ণিমা থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত দীর্ঘ ১ মাস গোটা পরিবার নিরামিষ খান।
ঘরে লক্ষ্মীব্রত না হলেও, এই পুজোর সমস্ত আচার পালন করে রাসচক্র নির্মাণের সূচনা করেন আলতাফ।
কাগজ, কাঠ, বাঁশ দিয়ে তৈরি এই রাসচক্র নির্মাণ হয় হিন্দু, মুসলিম, শিখ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির আদলে। মুসলিম ধর্মের মহরমের তাজিয়া, বৌদ্ধ ধর্মের গম্বুজ ও হিন্দু দেবদেবীর ছবিতে নির্মাণ হয় অষ্টকোণের এই চক্র। এই রাস চক্র ঘুরিয়ে পূর্ণাজন হয় বলে বিশ্বাস ধর্ম প্রাণ মানুষের।
শিল্পী আলতাফ মিঞার মতে, এটা সংহতির অন্যতম নজির। ৩৪ বছর থেকে তিনি এই রাসচক্র নির্মাণ করে আসছেন। এর আগে তাঁর বাবা, ঠাকুরদারা এটা তৈরি করেছেন। কোচবিহার হরিণচওড়া এলাকার তোর্সা পারে বসে আগামী দিনে তাঁর পুত্রও এই নির্মাণ চালিয়ে যাবে বলে স্বপ্ন দেখেন আলতাফ মিঞা ।
