শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পুরোপুরি ছেঁটে ফেললো বঙ্গ-বিজেপি। দলের শীর্ষনেতাদের অগ্রাহ্য করার যে প্রবণতা শোভন দেখিয়ে চলেছেন, তাতে বিজেপি নেতাদের ক্ষোভ ক্রমশই বৃদ্ধি পাওয়ার পরই চূড়ান্ত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

আগামী 15 অক্টোবর থেকে রাজ্যের সব লোকসভা কেন্দ্রে ‘গান্ধী সঙ্কল্প যাত্রা’ করছে বঙ্গ- বিজেপি। চলবে আগামী মাসের 25 তারিখ পর্যন্ত। এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণই জানানো হচ্ছে না শোভনকে। প্রথমে ঠিক ছিলো, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের ‘গান্ধী সঙ্কল্প যাত্রা’য় আমন্ত্রণ জানানো হবে শোভনকে। দলের অন্য নেতাদের সঙ্গেই তিনি নেতৃত্ব দেবেন এই যাত্রার। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত বদল করে শোভনের নামই কেটে দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁকে ন্যূনতম আমন্ত্রণও জানানো হচ্ছেনা।
এখানেই শেষ নয়, শোভনকে ‘শিক্ষা’ দিতে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে যাত্রা কর্মসূচি সফল করার ভার দেওয়া হয়েছে বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তকে। তিনি আর চন্দ্র বসু দক্ষিণ কলকাতায় গান্ধী সঙ্কল্প যাত্রার নেতৃত্ব দেবেন।

শোভনের আচরণে বঙ্গ-বিজেপি নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ। শোভন যেভাবে রাজ্য কমিটিকে আমল না দিয়ে রাজ্য নেতাদের কথায় কথায় দিল্লি দেখাচ্ছিলেন, তা ভালোভাবে নেননি নেতারা। তাঁকে পার্টিতে সম্মান দেওয়া হচ্ছে না বলে দিল্লিতে ‘নালিশ’ পর্যন্ত করেছেন শোভন। পরিস্থিতি চরমে ওঠে অমিত শাহের সর্বশেষ কলকাতা-সফরের সময়। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শাহের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা প্রাক্তন মেয়র শোভনকে একাধিক বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু কোনওবারই শোভন ফোন তোলেননি, এমনকী কল-ব্যাকও করেননি বলে জানিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেই। তিনি সে সময় বলেছিলেন, “শুনেছি উনি কলকাতার বাইরে আছেন। তাই হয়তো ফোন তোলেননি।” দলের শীর্ষনেতাদের এভাবে অবজ্ঞা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে বিজেপি।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শোভন যা করছেন, সে সবও বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছে নেতৃত্ব। শোভন আর বৈশাখী এক পাল্লার নেতা-নেত্রী নন। শোভনও তা জানেন। তা সত্ত্বেও বৈশাখীকে বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে শোভন মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিজেপির গঠনতন্ত্রে এই ‘আবদার’ মেটানোর পথ খোলা নেই। শোভনকে তা জানানো সত্ত্বেও তিনি থামেননি। বৈশাখীর কিছু কথাও ভালোভাবে নেয়নি রাজ্য নেতারা। অমিত শাহের সভায় শোভনকে আমন্ত্রণ জানাতে দিলীপ ঘোষের ফোনের প্রসঙ্গে বৈশাখীর মন্তব্য ছিলো এইরকম, “এ রকম কোনও ফোনের কথা আমার জানা নেই। অমিত শাহের অনুষ্ঠানের দিন বিজেপির এক সহ-সভাপতি আমাকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু কলেজের ঝামেলার মধ্যে থাকায় ফোন তোলার অবস্থায় ছিলাম না। শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার বাইরে আছে বলেই হয়তো বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা হয়নি”। দলের একাংশের অভিযোগ, শোভনের অবজ্ঞার আচরণের থেকেও বেশি অন্যায় বৈশাখীর এই মন্তব্য এবং সৌজন্যহীন আচরণ।
রাজ্যে দলের এক শীর্ষ নেতার অভিযোগ, “দিলীপ ঘোষ ফোন করলেও শোভন ফোন তোলেন না। উনি কী চাইছেন তাহলে? আসলে বোঝাই যাচ্ছে শোভনবাবু আমাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন। এরপর ওঁকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রশ্নই ওঠে না। তাই গান্ধী সঙ্কল্প যাত্রা-য় শোভনের নাম বিবেচনাই করা হয়নি।”
