26.11.2008, আজ থেকে 11 বছর আগের এই সন্ধ্যায় লণ্ডভণ্ড হয়েছিলো গোটা মুম্বই শহর, যার নেপথ্যে ছিলো 10 পাকিস্তানি জঙ্গি। ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পাত্তা না দিয়ে আরব সাগর পেরিয়ে বন্দুক, গোলা, বারুদের ঝোলা নিয়ে দক্ষিণ মুম্বইযে ঢুকে পড়ে ওই 10 পাকিস্তানি জঙ্গি। ঠিক এর পরের দিন থেকে টানা তিনদিন তারা তাণ্ডব চালালো মুম্বই শহরে৷ ঠাণ্ডা মাথায় 164 জনকে খুন করে জঙ্গিরা, যাঁদের মধ্যে 28 জন ছিলেন বিদেশি৷ গুরুতর জখম হয়েও বেঁচে যান 300 জন। সেই ঘটনার পর 11 বছর কেটে গিয়েছে। এখনও দগদগে 26/11 –র সেই স্মৃতি।

ঠিক কী হয়েছিল সেই রাতে? আজমল কাসভের ফাঁসি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পড়শি পাকভূমে আজও ওৎ পেতে থাকা আসল অপরাধীরা এখনও বহাল তবিয়তে একই কাজ করেই চলেছে৷
মুম্বইয়ে হামলা চালাতে জঙ্গি সংগঠন ‘লস্কর–ই– তৈবা’–র শীর্ষ নেতৃত্বের অধীনে 4 দফা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলো জঙ্গিরা। জানা গিয়েছে, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় 10 জঙ্গি। আরব সাগরে তাদের নৌকো ডুবতে বসেছিলো একবার। কোনওভাবে রক্ষা পায় জঙ্গিরা।

প্রথমে 7 নভেম্বর হামলার ছক ছিল তাদের। মুম্বইয়ে পা রেখে 26 নভেম্বর রাত সাড়ে 9টা নাগাদ প্রথমে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস রেল স্টেশনে হামলা চালায় ইসমাইল খান ও আজমল কাসভ। তার পর একে একে কামা হাসপাতাল, লিওপল্ড ক্যাফে,তাজ হোটেল এবং ওবেরয রিসর্টের সদর দফতর এবং নারিমান হাউসে হামলা চালানো হয়। দীর্ঘ 60 ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের পর জঙ্গিদের নিকেশ করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আজমল কাসভ ছাড়া সকলেরই মৃত্যু হয়।

🕳 27 নভেম্বর ভোরেই আহত অবস্থায় কাসভকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

🕳 30 নভেম্বর টানা জেরায় অপরাধ কবুল করে সে। 26/11 হামলার শুনানির জন্য এম এল তহলিয়ানিকে বিশেষ বিচারক হিসাবে নিয়োগ করা হয়। আর্থার রোড সেন্ট্রাল জেলে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয় কাসভকে।

🕳 20 ফেব্রুয়ারি,2009 ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীমতী আরভি সাওয়ন্ত বাগুলের সামনে অপরাধ কবুল করে কাসভ।

🕳 22 ফেব্রুয়ারি সরকারপক্ষের আইনজীবী নিযুক্ত হন উজ্জ্বল নিকম।

🕳 25 ফেব্রুয়ারি কাসভ এবং আরও দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে। শুরু হয় মামলার শুনানি।

🕳 20 জুলাই কাসভকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারপতি তহলিয়ানি।

🕳 18 ডিসেম্বর, মামলা চলাকালীন বয়ান পাল্টে ফেলে কাসভ। অপরাধ অস্বীকার করে। তাতে অবশ্য কাসভের কোনও লাভ হয়নি৷

🕳 2010 সালের 6 মে কাসভকে ফাঁসির সাজা শোনায় ট্রায়াল কোর্ট। বম্বে হাইকোর্টে আপিল হয়৷

🕳 2011 সালের 21 ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ফাঁসির সাজা বহাল রাখে৷

🕳 মার্চ মাসে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিযে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয কাসভ।

🕳 2012 সালের 29 আগস্ট টানা আইনি যুদ্ধের পর কাসভের ফাঁসির সাজা বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।
🕳 সেপ্টেম্বর মাসে মহারাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে কাসভ। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়।
🕳 2012 সালের 21 নভেম্বর কাসভকে পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। কবর দেওয়া হয় জেলের মধ্যেই।
নিহত জঙ্গিদের DNA পরীক্ষার রিপোর্ট, বেশ কিছু ছবি এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বেশ কিছু জিনিস পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয় ভারত সরকার, যাতে প্রমাণ হয় হামলাকারীরা পাকিস্তানি নাগরিক ছিল এবং লস্কর চাঁই জাকিউর রহমান লকভি এবং হাফিজ সঈদদের নির্দেশেই এ দেশে এসেছিল তারা৷ পাকিস্তানে মোট 7 জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ছিল হামাদ আমিন সাদিক নামের এক হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারকও। জঙ্গিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং জঙ্গিদের রসদ জোগানোর দায়িত্বে ছিল সে। 2009 সালের 3 অক্টোবর তাদের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু সেই মামলা বেশিদূর এগোয়নি। 2008 সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান সন্ত্রাস দমন আইনে লস্কর জঙ্গি জাকিউর রহমান লকভিকে গ্রেফতার করা হয়। দায়ের হয় মামলাও। কিন্তু তাকে ভারতের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। পরে জামিনে মুক্তিও পেয়ে যায় লকভি।
অন্যদিকে আমেরিকার শিকাগোয় গ্রেফতার হয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ডবল এজেন্ট ডেভিড কোলম্যান হেডলি। মুম্বইয়ের কোথায়, কীভাবে হামলা চালানো যায়, সেই পরিকল্পনায় সামিল ছিল হেডলি। হামলার আগে মুম্বই-সহ ভারতের বিভিন্ন শহর ঘুরে করে গিয়েছিল। এমনকি তাজ হোটেলে রাতও কাটিয়ে গিয়েছিল।
2013 সালের 24 জানুয়ারি ডেভিড হেডলিকে 35 বছরের কারাদণ্ড শোনায় মার্কিন আদালত। তবে কে হামলা করেছে,কেন করেছে, তা জানাতে অস্বীকার করে মার্কিন প্রশাসন।