Monday, November 17, 2025

এক টুকরো ইতিহাস হাতে নিয়ে বিধানসভায় এলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়

Date:

এ যেন অন্য তিনি৷ বোঝার উপায় নেই তিনিই এ রাজ্যের এক দুঁদে মন্ত্রী। আবেগমথিত, চোখ দু’টোও যেন চিক চিক করছে৷ তাঁর হাতে এক ঐতিহাসিক বই, ভারতের সংবিধান। আবেগের কেন্দ্র এই বইটিই।
বিধানসভায় চলছে দু’দিনের সংবিধান দিবসের বিশেষ অধিবেশন। বুধবার সেই অধিবেশনে যোগ দিতে এলেন রাজ্যের এই বিশিষ্ট মন্ত্রী। হাতে সংবিধান। সব দলের বিধায়করাই কৌতূহলি হলেন, সংবিধান নিয়ে কেন এলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ? প্রশ্ন করতেই মন্ত্রী ফিরে গেলেন চার দশক আগে। সংবিধান নিয়ে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন তাঁকে নিয়ে গেলো ফেলে আসা দিনগুলিতে। সঙ্গে জুড়ে গেলো ইন্দিরা গান্ধির স্মৃতি। মুখ খুললেন সুব্রত… ১৯৭৭ সাল, জরুরি অবস্থার পরের নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন ইন্দিরা গান্ধি। আর প্রধানমন্ত্রী নন তিনি, তাই ছেড়ে দিতে হবে এতদিনকার সরকারি বাসভবনও। ইন্দিরাজিও তাঁর বাংলো ছাড়ার জন্য মানসিকভাবে তৈরি। স্বাভাবিকভাবেই ভারাক্রান্ত মন। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা
নেতা-কর্মীদের ভিড়ে ইন্দিরাজির বাংলো উপচে পড়েছে।

“ওই ভিড়ের মধ্যে আমিও ছিলাম। ছাত্র রাজনীতির দিন থেকেই আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন ইন্দিরাজি। ভিড়ের মধ্যে আমাকে দেখতে পেয়েই তিনি আমায় ভেতরে ডাকলেন। একটু পরই ইন্দিরাজি বললেন, ‘ভালই হয়েছে তোমাকে পেয়ে। একটা কাজে সাহায্য করতে পারবে? আমি বিস্মিত, উত্তেজিতও। আমি কোন কাজে লাগবো ইন্দিরাজির? কাজে লাগতে পারলে তো নিজেকে ধন্য মনে করবো।” সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গলার স্বর বুঁজে আসছে।

‘বলুন আমায় কী করতে হবে? ’ উত্তর দিলেন সুব্রত ৷ সুব্রতর হাত ধরে ইন্দিরাজি প্রায় টেনে নিয়ে গেলেন
তাঁর সাধের লাইব্রেরিতে। ইন্দিরাজি বললেন, “চলো একটু হাত লাগাও, লাইব্রেরিটা গোছাই। ছাড়তে হবে তো এই বাড়ি। সব বই তো আর ফেলে যেতে পারবো না”। এই বলে
সুব্রতকে নিয়ে বই গোছাতে শুরু করলেন ইন্দিরাজি।

“লাইব্রেরিতে ঢুকে তো আমার চোখ ছানাবড়া। এততো বই! দু-একটা হাতে নিয়ে দেখলাম। কোনও বইয়ে জহরলাল নেহেরুর সই, একটা বইয়ে তো মহাত্মা গান্ধির আশীর্বাদ বাণী লেখা। আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। কখনও, কোথাও এসব দেখিনি। মাঝে মাঝে ভাবছি, এ সব কী দেখছি?” এ সব বলার সময় এদিন যেন মনে হচ্ছিলো আজকের ঘটনাই বলছেন সুব্রত। এতটাই জীবন্ত তাঁর প্রতিক্রিয়া।

“হঠাৎ নজরে এলো লাইব্রেরির এক কোণার দিকে। সেখানে রাখা ভারতীয় সংবিধান। এগিয়ে গিয়ে পাতা উল্টালাম। চমকে গেলাম পাতা উল্টোতেই। জ্বল জ্বল করছে রাজেন্দ্র প্রসাদ, জহরলাল নেহেরু, আরও একাধিক নেতার সই ওই সংবিধানের প্রথম পাতাতেই। ও সব দেখে মাথা ঘুরে গেলো। কথা বলার অবস্থাও ছিলো না। তবুও ফিসফিস করেই ইন্দিরাজিকে বলেই ফেললাম, “এ তো দুষ্প্রাপ্য আর অসামান্য সংগ্রহ। এই সংবিধান হাতে নিয়ে আমার যেন কান্না পাচ্ছে।”

এই সেই সংবিধান, যার প্রথম পাতায় রাজেন্দ্র প্রসাদ, নেহেরু সহ একাধিক নেতার সই, দেখাচ্ছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

সুব্রতর আবেগ যেন অনুভব করতে পারলেন ইন্দিরাজি। “একটাই কথা বললেন উনি। আজও কানে বাজে সেই কথা। ইন্দিরাজি বললেন, “সুব্রত, তব এক কাম করো, তুম হি ইসকো রাখ দো” ৷ আমার তখন অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। এ কি বললেন উনি ? এই মহার্ঘ সংগ্রহ আমাকে দিয়ে দিচ্ছেন?” ইন্দিরাজির কথায় তখন সুব্রত’র দু’চোখ ভরে জল।
“দু’হাত পেতে সেই সংবিধানটি নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই থেকে এই উপহার আমার বাড়িতে পরম যত্ন আর শ্রদ্ধার সঙ্গে সাজানো আছে। আজ সকালেই ঠিক করলাম, ইন্দিরাজির দেওয়া এই সংবিধান নিয়েই আজ বিধানসভায় আসবো। তাই নিয়ে এলাম।”

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হাতে ধরা ইন্দিরা গান্ধির দেওয়া সংবিধান একবার চোখের দেখা দেখতে বিধায়করা কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রবীন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ইন্দিরা-কথায় মন্ত্রমুগ্ধ স্পিকার, বিধায়করা।

এরপরই সেই সংবিধান বুকে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে ঢুকে গেলেন ইন্দিরা গান্ধির স্নেহধন্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-EXCLUSIVE: ছেলেবেলার কোচের মুখ থেকে শুনুন মাহির “ক্যাপ্টেন কুল” হয়ে ওঠার গল্প

 

 

Related articles

ঘাড়ের ব্যথায় বিমান সফরে নিষেধাজ্ঞা, কলকাতাতেই থাকতে হবে গিলকে?

রবিবার রাতেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন শুভমান গিল(subhaman gill)। কিন্তু এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন ভারত অধিনায়ক। দ্বিতীয় টেস্টে...

ইন্টারন্যাশনাল অপরাধ ট্রাইবুনালে হাসিনার ফাঁসির সাজা ‘বিচারহীনতা’! মন্তব্য বাংলাদেশের আইনজীবী রবীন্দ্রনাথের

বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheik Hasina) ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে। সোমবার এই...

বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে স্বস্তি, তবে রাজ্যের দুই অংশে দুরকম আবহাওয়া

বঙ্গোপসাগরের পূর্ব-দক্ষিণ পূর্বে ঘূর্ণাবর্তের জেরে ফের ফের একবার ঊর্ধ্বমুখি বাংলার তাপমাত্রা। ঘূর্ণাবর্তের জেরে বাংলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও...

অভিষেকের অনুরোধে অনশন প্রত্যাহার, মঞ্চেই অসুস্থ মমতাবালা ঠাকুর ভর্তি হাসপাতালে

তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) অনুরোধে রবিবার রাতেই SIR-এর প্রতিবাদে চলা অনশন প্রত্যাহারের কথা...
Exit mobile version