শ্বশুর-বৌমা’র এক ‘ব্যতিক্রমী’ বৃত্তান্ত !

এমনও হয় ?

এমনই হয়েছে৷ বৌমা নিজের শরীরের অংশ দিয়ে প্রাণে বাঁচিয়ে দিলেন শ্বশুরকে৷ বেনজির এই ঘটনা নদিয়ার চাপড়ার এলেমনগর গ্রামের৷

অন্য সংসারের মেয়ে তাঁর সংসারে এসে সবাইকে আপন করে নেবে, আর পাঁচটা শ্বশুরের মতো
সম্ভবত এইটুকুই আশা করতেন শ্বশুর সুলতান মল্লিক৷ শ্বশুরের
সেই ‘সামান্য’ আশা-কে একশো মাইল পিছনে ফেলে নিজের শরীরের অংশ দিয়ে শ্বশুরের প্রাণ বাঁচালেন বৌমা জাহানারা৷ এ ঘটনায় এলেমনগর গ্রামে ধন্য ধন্য রব উঠেছে
জাহানারা’র নামে৷ সেটাই তো স্বাভাবিক ৷

সুলতান মল্লিক৷ বছর 55-র সুলতান পেশায় ছিলেন গাড়িচালক। বছর তিনেক আগে জানা যায়, তাঁর যকৃত বা লিভারে সমস্যা আছে৷ টিউমার হয়েছে। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়৷ দীর্ঘ চিকিৎসাতেও কোনও উন্নতি না হওয়ায় সুলতানকে দক্ষিণ ভারতে নিয়ে যান ছেলেরা৷ বড় ছেলে আশিসের কথা, “হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুর তিন হাসপাতালে যোগাযোগ করি৷ তিন হাসপাতালই জানায়, বাবার লিভারে টিউমার হয়েছে। দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে।” মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাঁদের৷ প্রথমে সুলতানের তিন ছেলেকে পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, বড়ছেলের সঙ্গে রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করলেও তাঁর ‘ফ্যাটি লিভার’ হওয়ায় সেই লিভার কাজে লাগবে না। তারপর যোগাযোগ করা হয় একাধিক আত্মীয়ের সঙ্গে। কেউ এগিয়ে আসেনি।
তখনই সবাইকে চমকে দিয়ে বাড়ির বড় বউ জাহানারা’র প্রস্তাব, “আমার লিভারে কাজ হবে না? একবার পরীক্ষা করাও৷ যদি মিলে যায়, তাহলে আমিই লিভার দেবো বাবাকে।’’ শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় সবাই। বলে কী এসব? জাহানারা অনড়৷ ফলে শুরু হয় প্রস্তুতি৷। মিলে যায় ব্লাডগ্রুপ। লিভারও ঠিকঠাক৷ বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে চাননি যে, বৌমা স্বেচ্ছায় শ্বশুরকে লিভার দিতে রাজি হয়েছেন৷ পুলিশকে বলা হয় তদন্ত করতে৷ জেলা পুলিশের রিপোর্ট দেখার পর হাসপাতাল আশ্বস্ত হয়। জাহানারা তাঁর বাপের বাড়ির সকলের সঙ্গেও চিকিৎসকেরা কথা বলার পর বেঙ্গালুরুর ওই হাসপাতাল লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

জাহানারার আপ্লুত স্বামী আশিস বলেন, ‘‘12 বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে। সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনায় ওকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করলাম। সারাজীবন ওর কাছে আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ থাকবে।’’

যাঁকে নিয়ে এতকিছু সেই এইট পাশ গৃহবধূটি কিন্তু শান্ত গলায় বলেছেন, ‘‘বাবা অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসারকে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকলে গোটা সংসার আরও সুখে থাকবে। আমি যা করেছি সংসারের ভালোর জন্যই করেছি, ঠিকই করেছি৷”
গত সোমবার টানা 20 ঘণ্টা ধরে হয়েছে অপারেশন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অপারেশন সফল। বেঙ্গালুরুর হাসপাতাল থেকে কান্না ভেজা গলায় সে কথা জানালেন সুলতান৷ বললেন, ‘‘কথায় বলে, বৌমা হল মেয়ের মতো। সেই জন্য তাঁরা শ্বশুরকে ‘বাবা’ বলে। কিন্তু এ বার তো ওর শরীরের অংশ ধার করে আমাদের বাবা-মেয়ের মধ্যে সত্যিকারের রক্তের বন্ধন তৈরি হল। এমন বৌমা লোকে ভাগ্য করে পায়।’’

সুলতান ও জাহানারার এই ব্যতিক্রমী নজির থেকে কি কিছু শিক্ষা নেবে ঘরোয়া বিবাদে দীর্ণ সমাজ ?

Previous articleভাইপো অজিত ও বিজেপির যোগাযোগের কথা জানতেন বলে স্বীকার করলেন পাওয়ার
Next articleদেশ থেকে পালিয়ে নিত্যানন্দ নাকি দ্বীপ কিনে নিয়েছেন!