অঙ্ক পক্ষে না থাকলে এবারও রাজ্যসভায় CAB ফেলবেন না মোদি-শাহ

রাজ্যসভায় দরকার ১২১ ভোট, আছে ১০৬, CAB পাশ করাতে কী করবেন শাহ ?

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এই নাগরিকত্ব বিল সংসদে পেশ করেছিলো মোদি সরকার। তখনও একইভাবে লোকসভায় বিলটি পাশ হয়ে যায়। কিন্তু রাজ্যসভার সমীকরণ নিজেদের পক্ষে না থাকায় বিলটি পেশ করার ঝুঁকি নেয়নি বিজেপি তথা সরকার। এবারও সংখ্যা মেলাতে না পারলে বিল পেশ করার ঝুঁকি সরকার নেবে কি’না সন্দেহ আছে৷

টানা বিতর্কের পর সোমবার মাঝরাতে লোকসভায় পাশ হয়েছে CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। আজ,বুধবার ওই বিল যাচ্ছে রাজ্যসভায়। এখানে এই বিল পাশ করানো সরকারের পক্ষে কতখানি সহজ ?

একদমই সহজ নয় জেনেও সরকার পক্ষ আশাবাদী ৷

রাজ্যসভার মোট আসন ২৪৫, যদিও বর্তমানে সাংসদ সংখ্যা ২৪০ জন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য অমিত শাহের প্রয়োজন ১২১ ভোট। এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় বিজেপির নিজেদের সাংসদ-সংখ্যা ৮১ জন। বিজেপির সঙ্গে এই বিলের পক্ষে আছেন ১২৮ জন সাংসদ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে মাত্র ৭ জন বেশি।

অন্য দিকে, বিরোধীদের পক্ষে রয়েছে ১০৯ জন। ব্যবধান খুবই কম, ফলে রাজ্যসভার ছবি বদলে যেতে পারে যে কোনও সময়ে৷ ওদিকে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে শিবসেনা। লোকসভায় শিবসেনা নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে ভোট দিলেও, রাজ্যসভায় তেমন নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা।

শিবসেনাকে নিয়ে বিজেপির আশঙ্কা থাকলেও শরিক JDU, অকালি এবং অগপ এবারও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। NDA-র বাইরে থাকলেও বিলকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছে বিজু জনতা দল। নাগা পিপলস ফ্রন্টের সমর্থন NDA-র পক্ষে থাকবে বলে বিজেপি আশা করলেও, তাদের চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে সংশয় রয়েছে। মেঘালয়ে আগাথা সাংমার দল জানিয়ে দিয়েছে, তারা ভোটাভুটিতে অংশই নেবেন না।

শেষ খবর, কিছু ছোট দলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা প্রায় সফল করতে পেরেছে বলে বিজেপি দাবি করছে৷।
অন্য দিকে, বিরোধীদের পাল্টা লড়াইয়ের প্রস্তুতি তুঙ্গে। TRS লোকসভায় বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় আশাবাদী বিরোধীরা৷ এই বিলে সরকার লোকসভায় ৩৩৪-১০৬ ভোটে জিতলেও, রাজ্যসভায় দুই শিবিরের ব্যবধান কম হওয়ায় লড়াই প্রবল হওয়ার আশঙ্কা করছে দু’পক্ষই।
বর্তমানে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন NDA-র সাংসদ রয়েছেন ১০৬ জন। তাদের দরকার আরও ১৫ জন রাজ্যসভার সাংসদের সমর্থন। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA-র রাজ্যসভায় বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬২। UPA এবং NDA’এর বাইরের দলের মিলিত সাংসদ সংখ্যা ৪৪। অন্যান্য বিরোধীরা রয়েছেন ২৮ জন।

এনডিএ’র ১০৬ সাংসদের মধ্যে বিজেপির রয়েছেন ৮৩ জন। নীতিশ কুমারের ৬ জন, শিরোমনি অকালি দলের ৩ জন, আরপিআইয়ের ১ জন এবং অন্যান্যরা ১৩ জন।
UPA-র মধ্যে কংগ্রেসের রয়েছে ৪৬ সাংসদ, RJD-র 4 জন, NCP-র ৪ জন, DMK-র ৫ জন সাংসদ এবং অন্যান্যরা ৩। সব মিলিয়ে ৬২ জন সাংসদ।

UPA এবং NDA’এর বাইরে রয়েছে তৃণমূলের ১৩ জন, সমাজবাদী পার্টির ৯ জন,TRS-এর ৬ জন, CPM-এর ৫ জন, BSP-র ৪ জন, AAP ৩, PDP ২, CPI ১ এবং JDS ১ জন সাংসদ। সব মিলিয়ে ৪৪ জন সাংসদ। লোকসভায় এই দলগুলো বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল।

অন্যান্য বিরোধীদের মধ্যে AIADMK ১১ জন সাংসদ, BJD-র ৭ জন, শিবসেনার ৩ জন, YSRCP ২ জন, TDP ২ এবং অন্যান্য ৩ জন। মোট ২৮ জন। এই দলের সাংসদরা সোমবার লোকসভায় বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

অর্থাৎ, এই মুহূর্তে NDA-র নিজস্ব শক্তি অনুযায়ী রাজ্যসভায় পাশ করানো যাচ্ছে না নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। কিন্তু সোমবার এই বিলের উপর লোকসভার ভোটাভুটির সময় দেখা গিয়েছিল, AIADMK, BJD, YSRCP, TDP সহ অন্যান্যদের একটি অংশ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষেই ভোট দিয়েছিল। রাজ্যসভায় সেই পার্টিগুলোর সাংসদে মোট সংখ্যা ২৮ জুড়লে, NDA-র পক্ষে রাজ্যসভায় সহজেই বিল পাশ করানো সম্ভব। কারণ, তখন অন্যান্যদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA-র মিলিত সাংসদ সংখ্যা হবে ১৩৪, যা প্রয়োজনীয় সংখ্যা ১২১ এর চেয়ে অনেকটাই বেশি।

এখন দেখার রাজ্যসভায় কোন দল কোনদিকে পা রাখে৷

Previous article১১দিনের লং মার্চ শেষে লড়াইয়ের বার্তা নিয়ে আজ সমাবেশ কলকাতায়
Next articleরাজ্য-রাজ্যপাল লড়াইয়ের জের, আচার্যের পায়ে বেড়ি পড়াল সরকার