Friday, December 19, 2025

তিনি ভেকধারী ‘বুদ্ধিজীবী’ সাজেন না, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

বঙ্গ-বিজেপিতে দিলীপ ঘোষকে অপছন্দ করেন, এমন লোকজন কম নয়৷ তা সত্ত্বেও মসৃনভাবেই
দিলীপবাবু ‘সেকেণ্ড টার্ম’ রাজ্য বিজেপির শীর্ষপদে চলে এলেন৷ এর কারন একাধিক৷

দিলীপ- বিরুদ্ধ লবি গোপনে শলা-পরামর্শ চালালেও প্রকাশ্যে সভাপতি পদে একটি নামও সামনে আনতে পারেনি৷ এই পদে যাওয়ার ইচ্ছা বঙ্গ-বিজেপির কয়েকজন নেতার থাকলেও একে অপরকে সহ্য করতে না পারার জন্য আলোচনা দানা পাকেনি৷ অথচ একাধিক জেলার নেতারা দিলীপ ঘোষকে এবার আর এই পদে চাননি৷ কিন্তু জেলার নেতারা এই ইস্যুতে রাজ্য নেতাদের সাহসের অভাব দেখে অনেক দূর এগিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যান৷
রাজ্যস্তরের যে নেতারা এবার সভাপতি হতে চেয়েছিলেন, তাঁরা নিজেদের গণ্ডির বাইরে সেকথা তুলে ধরতে পারেন নি কিছুটা দিল্লির ভয়েও৷ তাছাড়া এরা কেউই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন৷ রাজ্য সভাপতি জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবিধা অনেক৷ দলের বাকি সাংসদ বা বিধায়করা বিধানসভা ভোটের মুখে সভাপতি পদে বসার যোগ্যতা এখনও অর্জনই করেননি৷

দলের অন্দরে দিলীপ ঘোষের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত না হলেও, সভাপতি হতে বাকি যারা আশাবাদী ছিলেন, তাদের থেকে কিছুটা বেশিই আছে৷ কেউ পরের পর নির্বাচনে হেরেই চলেছেন, কেউ সবেমাত্র দলে এসেছেন৷ কেউ হঠাৎই কোটায় রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন৷ এখনও রাজ্যটাই ঠিকঠাক চেনেন না৷ দলে এদের ‘শত্রু’-ও কম নয়৷ ফলে একজন এগোতে চাইলে, অন্যজন কাঁকড়ার মতো টেনে ধরেছেন তাঁকে৷ মাঝে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সভাপতি পদে ছবি-সহ একটি নাম ভাসানো হয়েছিলো৷ বলা হয়, বিদ্যার সমুদ্র এই ভদ্রলোকের সভাপতি হওয়া নাকি ‘পাকা’ হয়ে গিয়েছে৷ তাঁর পিছনে নাকি দিল্লির গোটা হাই কম্যাণ্ড এবং মোহন ভাগবত আছেন বলে দাবিও করা হয়েছিলো৷ আসলে, যারা এই নামটি খাওয়াতে চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের কারোরই সক্রিয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা-ই নেই৷ রাজনীতি বলতে এরা বোঝেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অবান্তর জ্ঞান দেওয়া৷ এই বালখিল্য ইচ্ছা তাই এদের ঘরের চৌকাঠও পেরোয়নি৷ সব মিলিয়ে, সামনে ফাঁকা মাঠ-ই পেয়েছেন দিলীপ ঘোষ৷

দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দলের দিল্লি-লবি’র একাংশও সক্রিয় ছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রকাশ্যেই তাঁকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” পর্যন্ত বলেছেন৷ সেই মন্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন বিজেপির ‘নব্য থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’ সাংসদ রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের মতো কিছু কেন্দ্রীয় নেতাও সমানে দিলীপ-বিরোধী একটি লবিকে হাওয়া দিয়ে গিয়েছেন৷ দলের অন্দরে চর্চা হয়েছে, দিল্লির শীর্ষস্তরের নেতাদের মদত ছাড়া এই বাজারে বাবুল সুপ্রিয় বা স্বপন দাশগুপ্তের ‘সাহস’ হতো না প্রকাশ্যে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধাচরন করা৷ কিন্তু সেই সব চেষ্টাও তো কাজে লাগলো না৷

দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে দলের একাংশ বারে বারে অভিযোগ তুলেছে, তাঁর কথাবার্তা দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে। এই অভিযোগ মূলত তারা’ই তুলেছে, যাদের প্রত্যক্ষ এবং সক্রিয় রাজনীতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধ্যানধারনাও নেই৷ দিলীপবাবুর কিছু কথা শালীনতার মাত্রা ছাড়ালেও তার রাজনৈতিক সুফল পেয়েছে সামগ্রিকভাবে বিজেপি৷ দল প্রচার এবং চর্চার মধ্যে ছিলো এর ফলে৷ এবং এসবের প্রতিক্রিয়া দিতে তৃণমূলের শীর্ষমহলকেও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে৷ এ ধরনের মন্তব্য করে বিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত রাখা, আধুনিক রাজনীতির একটি অংশ৷ তাছাড়া, যারা এসবের প্রতিবাদ করছেন, অতীতে বিরোধী নেতাদের সম্পর্কে অশোভন কথা বলার তাঁদের ট্রাক-রেকর্ডও বাঁধিয়ে রাখার মতো৷ তাই দিলীপ ঘোষের কিছু মন্তব্য মাত্রাছাড়া হলেও তা একশো ভাগ সফল হয়েছে দলকে এবং নিজেকে প্রচারের আলোয় রাখতে৷

শাসকদলের চাপে কিছুটা নেতিয়ে যাওয়া কর্মী- সমর্থকরাও উৎসাহিত হয়েছেন দিলীপের এ ধরনের ‘আগুনখেকো’ ভাবমূর্তিতে৷ তাছাড়া, দলকে এবং দলের কর্মীদের ‘তাজা’ রাখতে নিজের গায়েই এভাবে কাদা মাখতে কবে কোন সভাপতি সক্রিয় হয়েছেন?

দিলীপ ঘোষের প্লাস-পয়েন্ট, সচেতনভাবেই তিনি নিজেকে তথাকথিত “বুদ্ধিজীবী” হিসাবে প্রোজেক্ট করেননি৷ বাংলায় ক্ষমতা দখল করতে এই মুহুর্তে আধখানা বুদ্ধিজীবীরও প্রয়োজন নেই৷ ক্ষমতায় এলে মৌচাকের পাশে নিশ্চিতভাবেই ঝাঁকে ঝাঁকে ‘থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক’ জুটে যাবে৷ এখন দরকার এমন একজন কাণ্ডারি, যিনি কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের বুস্ট-আপ করতে পারবেন সবদিক থেকে৷ সেই কাজে সফল তিনি৷

সেই লজিকে বঙ্গ-বিজেপিতে এই মুহুর্তে দিলীপ ঘোষ বিকল্পহীন৷ সন্ধিক্ষণে সঠিকহাতেই ব্যাটন তুলে দিয়েছে দিল্লির বিজেপি৷

আরও পড়ুন-গুরুতর অভিযোগ না থাকলে কলকাতায় ‘সিটিং’ কাউন্সিলরদের রাখছে তৃণমূল,কণাদ দাশগুপ্তের কলম

spot_img

Related articles

বহরমপুরে টানা তিনদিন আটকে রেখে গণধর্ষণ, পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত গ্রেফতার ২

বহরমপুরে এক আদিবাসী মহিলার উপর ভয়াবহ নির্যাতনের (Sextual harassments) অভিযোগ। তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি ফাঁকা...

মার্লিন গ্রুপের উদ্যোগে কলকাতায় জাতীয় বধির ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের জমকালো উদ্বোধন

শীতের কলকাতায় জমজমাট ক্রিকেট, তবে এই  ক্রিকেট ম্যাচ একটু আলাদা, ২২ গজের নিয়ম এক, কিন্তু যারা খেলতে নেমেছেন...

বাংলায় আবার নিশ্চয়ই মমতার সরকার হবে, বাঙালিরাই দেশের ভবিষ্যৎ বলে দেয়: সংসদ চত্বরে সরব জয়া

তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দীর্ঘদিন সুসম্পর্ক সমাজবাদী পার্টির (SP) রাজ্যসভার (RajyaSabha) সাংসদ...

মেসি ইভেন্টের আর্থিক তদন্তে ইডি, শতদ্রুর বাড়িতে পুলিশের হানা

মেসি ইভেন্টে বিশৃঙ্খলা কাণ্ডে তদন্তে ইডি(ED )। শতদ্রু দত্তের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদনের তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।...