Wednesday, August 27, 2025

অনেকেরই মনে আছে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল-শীর্ষনেতৃত্ব একরকম হুঁশিয়ারি দিয়েই বলেছিলো, কলকাতায় দলের কোনও কাউন্সিলর ‘লিড’ দিতে না-পারলে আগামী পুরভোটে তাঁকে প্রার্থী করা হবে না।

খুবই সঙ্গত এবং যুক্তিসঙ্গত ‘হুঁশিয়ারি’৷ ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন তৃণমূলের কাছে ছিলো অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ৷ বিজেপি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলো৷ কলকাতায়
তৃণমূলস্তরের কাউন্সিলরদের মধ্যে যারা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যারা ব্যর্থ হয়েছেন, ধরে নেওয়া যেতেই পারে, এলাকায় তাঁদের অনেকেই গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছেন৷
তৃণমূল সুযোগ দিয়েছিলো বলেই যারা কাউন্সিলর হতে পেরেছিলেন, দাপট বেড়েছে, বৈধ-অবৈধ প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী হয়েছেন৷ অথচ, ২০১৯ সালে দলের তুলনামূলক কঠিন সময়ে তাঁরা দলের কাজে লাগতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ সেই ব্যর্থতার ‘শাস্তি’ দিতে দল যদি এবার সত্যিই ইচ্ছাপ্রকাশ করে, কোনও অবিচার-ই করবেনা৷

লোকসভা ভোটে কলকাতা পুর এলাকার ফলাফলে স্পষ্ট, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল জয়ী হলেও কলকাতার মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রায় ৫০-৫৫ জন তৃণমূল কাউন্সিলরই নিজেদের ওয়ার্ডে পিছিয়ে আছেন৷ ফলে, ভোটের আগে দলের সেই ফরমান মানতে হলে কার্যত ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে৷ ‘হেরে যাওয়া’ তৃণমূল কাউন্সিলররা ভোটের আগে বুঝতেই পারেননি গেরুয়া-ঝড় এই কলকাতাতেও এত তীব্র৷
অথচ গত পুরসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে এই সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতেছিলো ১০০০ থেকে ১৫ হাজার পর্যন্ত ভোটে।
তাহলে কি এই কাউন্সিলররা
জন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন? মুষ্টিমেয় কয়েকজনকেই গোটা ওয়ার্ড ভেবে বসেছিলেন?

একেবারে ‘গ্রাউণ্ড লেভেল’-এর ছবি সবার আগে ধরা উচিত কাউন্সিলরদেরই৷ তাঁরাই দলের চোখ৷ তাঁদেরই নিয়মিত যোগাযোগ থাকার কথা এলাকার মানুষের সঙ্গে৷ কিন্তু এই পরিবর্তন তাঁরা ধরতে পারেননি৷ অনেকেই মনে করেন, কলকাতার অধিকাংশ তৃণমূল- কাউন্সিলরের ‘বডি- ল্যাঙ্গুয়েজ’ ঠিক কাউন্সিলর-সুলভ নয়৷ তাঁদের হাঁটা-চলা, কথাবার্তা অথবা তথাকথিত ব্যস্ততা অনেকক্ষেত্রে মন্ত্রী-সাংসদদের হার মানায়৷ শহরের নাগরিকরা অধিকাংশ কাউন্সিলরের প্রাথী হওয়ার আগের এবং জেতার ছ’মাস পরের গেট-আপ দেখে বিস্মিতই হন৷ এমন অসংখ্য কাউন্সিলর আছেন, যারা নিজেদের ‘সামান্য’ কাউন্সিলর ভাবতে লজ্জাবোধ করেন৷ এমন অসংখ্য মহিলা কাউন্সিলর আছেন, যারা নিয়মিত ঘরকন্নার কাজে ব্যস্ত, আর সেই ওয়ার্ডের মানুষ ওই কাউন্সিলরের স্বামী, জামাইবাবুর বা তাঁর অন্য কোনও “স্বজন”-এর দাপট দেখছে৷ ফলে যতদিন গিয়েছে, এরা ততটাই সাধারন মানুষের
ভালবাসা হারিয়েছেন ৷ সত্যি বলতে কী, কিছু কাউন্সিলর তো এই ‘কাউন্সিলর’ শব্দটিকেই এলাকায় ভীতিজনক করে তুলেছেন৷ আর এসবেরই মাশুল দিয়েছে দল৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের ভাবমূর্তির সুযোগ নিয়েই বেড়ে উঠেছে বিজেপি৷
নাহলে, কলকাতায় তৃণমূলের এই লজ্জাজনক ফল হতে পারেনা৷

লোকসভায় দলের যে সব কাউন্সিলর ‘লিড’ দিতে পারেননি, তাঁদের আগামী পুরভোটে প্রার্থী না করার সিদ্ধান্তে তৃণমূল শীর্ষস্তর অথবা প্রশান্ত কিশোর অনড় থাকলে, তৃণমূলের বাড়তি কোনও ক্ষতি হবেনা৷ রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় যতদিন তৃণমূল থাকবে, ততদিন এদের পক্ষে ভোটের মুখে
অন্যে দলের প্রার্থী হয়ে জিতে আসা কার্যত অসম্ভব, নানা অনিবার্য কারনেই৷ এই ঝুঁকি তাই তৃণমূল নিতেই পারে৷ এই কঠিন সিদ্ধান্তে একুশের ভোটে আখেরে তৃণমূলের লাভই হবে৷

Related articles

বিরক্ত মিঠুন? এড়াচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক কর্মসূচি

বারবার রং বদল করে আপাতত গেরুয়াতে ঠেকেছেন ডিস্কো ড্যান্সার মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty)। ভোটের আগে বা বিজেপির. (BJP)...

আরজি কর কাণ্ডে ভুয়ো প্রচারের অভিযোগ! নোটিশ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীকে

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়া অভয়ার মৃত্যুকে ঘিরে ভুয়ো প্রচার মামলায় নোটিশ ধরাল কলকাতা পুলিশ। পুলিশের...

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...
Exit mobile version