গেরুয়া নেতাদের ‘স্ট্যাণ্ড-আপ কমেডিয়ান’ বানালেন দিল্লিবাসী

টানা ২৭ বছর বিজেপি’র অধরা থাকলো দেশের রাজধানী দিল্লি৷

দিল্লি-দখল করতে এবার মরিয়া ছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ৷ ভোট প্রচারে প্রতিশ্রুতির জোয়ারের পাশাপাশি হুমকিও ছিলো বিরামহীন৷ দিল্লির ভোটের ফল বুঝিয়ে দিয়েছে মোদি- শাহদের যাবতীয় বক্তব্যকেই ‘স্ট্যাণ্ড-আপ কমেডি’-র বাইরে আর কিছু ভাবেননি দিল্লিবাসী৷ একজন কমেডিয়ানের উপস্থিত জনতার সামনে কোন বিশেষ বিষয়কে হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিমায় সরাসরি উপস্থাপনকে ‘স্ট্যান্ড আপ কমেডি’ বলে৷ ভোটের ফল বলছে দিল্লিতে বিজেপি প্রায় সেই কাজই করেছে৷

এই উপ-রাজ্যে বিজেপি- রাজ ছিল শেষবারের মতো ছিলো ২২ বছর আগে৷ প্রয়াত সুষমা স্বরাজ ১৯৯৮ সালের অক্টোবরে শেষবারের জন্য ৫২দিনের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন৷ তার পর থেকে ওই চেয়ারের ধারেকাছেই যেতে পারছে না গেরুয়া-নেতারা৷

২০২০ সালে ফের ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় এলো আম আদমি পার্টি৷ যদি না কোনও ‘পরিকল্পিত’ অঘটন ঘটে, তাহলে দিল্লিতে সেই ২০২৫ সাল পর্যন্ত ‘বিরোধী’-ই থাকতে হবে “দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী” নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ-কে৷ সেই ২০১৪ থেকে দিল্লিতে ঘাঁটি গেড়েছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে জিতে আসা বিজেপি’র রথী-মহারথী নেতারা৷ মোদিজি, শাহজি তো আছেনই৷ কিন্তু ২০২০ সালেও কোনও কিছুই কাজে এলো না৷ মোদিজি ক্ষমতায় আসার পরের বছর, ২০১৫ সালে, দিল্লি বিধানসভার ভোট হয়েছিলো৷ তখনও ‘হনিমুন-পিরিয়ড’ কাটেনি৷ বিজেপি’র গায়ে তখনও নতুন বৌ-এর গন্ধ৷ সেবার মোদিজির একাধিক সভা সত্ত্বেও ৭০ আসনের দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি পায় মাত্র ৩টি আসন৷ বাকি ৬৭ আসনই চলে যায় আম আদমি পার্টির দখলে৷

দিল্লিতে কোনওদিনই বিজেপির রেকর্ড ভালো নয়৷ এই উপ-রাজ্যে বিজেপি-রাজ ছিল দু’দশক আগে৷ ১৯৫২ সালে দিল্লিতে বিধানসভা চালু হওয়ার পর কখনই টানা ৫ বছর শাসনক্ষমতায় টিঁকে থাকতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৫২ থেকে এ পর্যন্ত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৭ জন৷ প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন কংগ্রেসের চৌধুরি ব্রহ্মপ্রকাশ,দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও কংগ্রেসের, গুরমুখ নিহাল সিং৷ এরপর ১৯৫৬ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত বিলোপ ঘটানো হয় বিধানসভার৷ ১৯৯৩ সালে দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির মদনলাল খুরানা৷ পদে ছিলেন ২ বছর ৮৬ দিন৷ ১৯৯৬-তে মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপিরই সাহিব সিং বর্মা ৷ তিনি এই পদে থাকতে পেরেছেন ২ বছর ২২৮ দিন৷ দিল্লির পঞ্চম এবং প্রথম মহিলা-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ১৯৯৮ সালের ১২ অক্টোবরে দায়িত্ব নেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ৷ তাঁর কার্যকালের মেয়াদ ছিল মাত্র ৫২ দিন৷ সুষমা স্বরাজই দিল্লিতে বিজেপির আপাতত শেষ মুখ্যমন্ত্রী৷ সুষমা-বিদায়ের সঙ্গেই দিল্লিতে বিজেপি-রাজ খতম হয় ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর৷ সুষমা স্বরাজের পর ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত৷ আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন মাত্র ৪৯ দিন, ২০১৩-র ডিসেম্বরের শেষভাগ থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি’র শুরু পর্যন্ত৷ ২০১৫-র নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন সেই কেজরিওয়াল৷ তখন থেকে দিল্লিতে টানা আপ-জমানা৷ এবারও বিজেপিকে লজ্জায় মুখ ঢাকতেই হচ্ছে৷

দিল্লির এবারের নির্বাচন বিজেপির কাছে ছিলো অতীব গুরুত্বপূর্ন৷ এবারও দিল্লি হাতছাড়া হওয়ায় গোটা দেশেই বিজেপির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ এমনিতেই তো দখলে থাকা একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হচ্ছে৷ তার উপর এবারও দেশের রাজধানী বিজেপির অধরা, ফলে মোদি-শাহের বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট রইলো না৷ ২০১৫ সালের দিল্লির ভোটে নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও দলকে সাফল্য এনে দিতে পারেননি৷ এবার ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া ছিলেন মোদি-শাহ জুটি, কিন্তু দিল্লিবাসী এবারও ছুঁড়ে ফেলে দিলো বিজেপিকে৷

Previous articleপ্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-সফরসূচি
Next articleকেন হার, দলকে ভাবতে হবে : দিলীপ