শাহি-ভাষণ ‘গোল গোল’ হলে ক্ষতিই হবে বঙ্গ-বিজেপির, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

CAA অনুমোদনের পর হওয়ার পর এই প্রথমবার রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই CAA-র জন্য আজ, রবিবার শহিদ মিনারে শাহকে অভিনন্দনও জানাবে বঙ্গ-বিজেপি। তবে রাজ্য-বিজেপি তাকিয়ে আছে জনসভায় অমিত শাহের ভাষণের দিকে৷ রাজ্য বিজেপির নেতারা মনে করছেন, অমিত শাহ আগামী পুরসভা ও বিধানসভা ভোটের ‘রোডম্যাপ’ জানাতে পারেন, যে পথে হাঁটলে এ রাজ্যে বিজেপির সাফল্যের বাণ ডাকবে৷

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ১৮ আসন জেতার সেই ‘হনিমুন-পিরিয়ড’ আজও কাটাতে পারেনি বঙ্গ-বিজেপি৷ গত মে মাস থেকে রাজ্য এক পা-ও এগোতে পারেনি বিজেপি৷ উল্টে বঙ্গ-বিজেপির সভাপতির জেতা বিধানসভা আসন খুইয়েছে৷ মাস দেড়েক আগে নতুন রাজ্য সভাপতি দায়িত্ব নিলেও, আজ পর্যন্ত নতুন রাজ্য বা জেলা কমিটি গড়া যায়নি৷ সব মিলিয়ে, তলানিতে ঠেকেছে দলের কর্মী- সমর্থকদের মনোবল৷ এই পরিস্থিতিতে কেমন শাহি-ভাষণ চাইছে বঙ্গ-বিজেপি ?

◾পুরভোটের আগে অমিত শাহের ভাষণ দলের কর্মীদের চাঙ্গা করে তুলুক, এমনই চাইছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। এই কাজ যে তাদের দিয়ে হবেনা, সেটা ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছেন রাজ্য নেতারা৷ তাই রাজ্য নেতাদের ভরসা দিল্লি৷

◾CAA-র বিরুদ্ধে বাংলাতেও প্রতিবাদ চলছে৷ লোকসভায় ১৮টি আসন জেতার প্রচার এখন আর খাচ্ছে না৷ CAA-র পক্ষে প্রচার করেও পুরভোট জেতা যাবেনা৷ বরং ব্যুমেরাং হতে পারে৷ তাহলে পুরভোটের প্রচারের পথ কী হবে, তা বলে দিন শাহ৷

◾CAA- বিরোধিতার অর্থ যে হিন্দুধর্মের বিরোধিতা, শহিদ মিনারের মঞ্চে তেমনই বোঝান শাহ, রাজ্য নেতাদের একাংশ এমন চাইলেও এর বিরোধিতা করছেন দলের অন্য অংশ৷ এই প্রচার করেই তো দিল্লিতে ৭০ আসনের মধ্যে ৮ আসন মিলেছে৷ বাংলায় মেরুকরণের রাজনীতিতে ঝুঁকি বেশি বলেই এই অংশ মনে করছেন৷ তার থেকে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বলুন শাহ৷ বাংলার প্রায় সব জেলায় বিজেপি নেতা- কর্মীদের উপর রাজ্যের শাসক দলের অত্যাচারের কথাই বলুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

◾ দিল্লি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর হতে পারে৷
দিল্লির আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর৷ সেই পরীক্ষায় শূন্য পেয়ে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ দিল্লি-হিংসা সামলাতে যিনি ব্যর্থ, তার মুখে অন্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার সমালোচনা অনেকটা “স্ট্যাণ্ড-আপ” কমেডির মতোই শোনাবে, এমন ধারনা পোষণ করছেন একাধিক গেরুয়া নেতা৷ তাহলে কী বলে কর্মীদের তাতাবেন শাহ ?

◾ উন্নয়নের প্রশ্নে শাহ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগুন, এমন কথা দলের অনেকে বলছেন৷ এই অংশ চাইছেন, শাহ বলুন, কেন্দ্রীয় সরকারের বহু প্রকল্প এ রাজ্যে ঢুকতে দিচ্ছে না তৃণমূল সরকার। কিন্তু পাল্টা যুক্তি উঠেছে দলের মধ্যেই৷ মোদি সরকারের দু’দফায় এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র এ রাজ্যে এমন কোনও উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়নি বা শেষ করেনি, যা দৃষ্টান্ত হতে পারে৷ যে প্রকল্পের কথা বলে ভোট চাওয়া যায়৷ রাজ্যের সামাজিক প্রকল্পগুলির ধার,ভার বা গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশি৷ সুতরাং উন্নয়ন নিয়ে ফের গোল গোল কথা বললে, রাজ্যবাসী কিছুতেই তা মানবে না৷ নির্দিষ্ট কিছু ঘোষনা থাকুক শাহি- ভাষণে, এমনই চাইছেন বিজেপির একাংশ৷

মোটের উপর রাজ্য বিজেপিও ‘কনফিউজড’ ! শাহি-ভাষণে ঠিক কোন কথা থাকলে, সে সব নিয়ে পুরভোটের আগে প্রচারে নামা সম্ভব হবে, সেটাই ধরতে পারছে না বঙ্গ-বিজেপি৷

সব মিলিয়ে এরপর হাতে থাকে অমিত শাহের সেই “গোল-গোল” বক্তৃতাই৷ সেই ভাষণে শহিদ মিনারে হাততালি শোনা যেতে পারে, কিন্তু ওই শাহি- বার্তা নিয়ে কলকাতা-সহ শতাধিক পুরসভার ভোটে বিজেপি কি ভোট আদায় করতে পারবে ?

কপালের ভাঁজ সম্ভবত চওড়া হচ্ছে বঙ্গ-বিজেপির!

Previous articleঅভিষেক-পিকে জুটির হাত ধরে কাল নতুন ইনিংস শুরুর পথে তৃণমূল
Next articleএবার কি মোদিজিও বলবেন, ‘কাগজ আমি দেখাবো না’