Monday, August 25, 2025
অভিজিৎ ঘোষ

নিজামুদ্দিনের ঘটনা দেশে করোনার পরিস্থিতিকে ক্রমশ ঘোরাল করছে। এই নিজামুদ্দিন দেশের ‘অন্ধকূপ’ হবে না তো? বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, নিজামুদ্দিন আগামিদিনে দেশের করোনা সংক্রমণের আঁতুড়ঘর হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ইতিমধ্যে এই সভায় যাওয়া মানুষের মধ্যে তেলেঙ্গানায় ৬জন, কাশ্মীরে ও কর্নাটকে ১জনের মৃত্যু হয়েছে। যে আন্দামান নিকোবরে করোনার ‘ক’ ছিল না, সেই আন্দামান থেকে ১০জন গিয়েছিলেন নিজামুদ্দিনে। তার মধ্যে ৯জনই করোনায় আক্রান্ত। আরও আতঙ্কের বিষয় হলো এই বাংলা থেকে ৭০জন সেই নিজামুদ্দিনে গিয়েছিলেন। তাদের এখন খুঁজে পেতে মরিয়া রাজ্য প্রশাসন। পাওয়া গিয়েছে ১৬জনকে। পাঠানো হয়েছে কোয়ারান্টাইনে।

করোনার প্রকোপ যখন ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনে ব্যাপক আকার নিয়েছে, তখন দিল্লির বুকে কম করে দশটি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই ধর্মসভা কী করে হলো? জবাব নরেন্দ্র মোদি আর অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেই দিতে হবে। এই প্যান্ডেমোনিয়াম তৈরির কারণ তো তাঁরাই জানাবেন। মুখ্যমন্ত্রী কেন এই করোনার পরিবেশে তিন হাজার মানুষের জমায়েত হওয়ার অনুমতি দিলেন? আর ভিসা দিয়ে বেআইনিভাবে বিদেশের প্রতিনিধিরা কী করে ধর্মপ্রচার করলেন তা প্রধানমন্ত্রী জানাবেন তো!

এখানেই শেষ নয়, ১৫-১৭মার্চ এই জামাত হওয়ার পর হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিরা। সেই সংখ্যাটা বিরাট। বিদেশি প্রতিনিধিদের অনেকে ধর্মস্থানের মধ্যে বেআইনিভাবে রয়ে গেলেন। এই অবস্থার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার কেন ফেলল? বিদেশি প্রতিনিধিদের পত্রপাঠ কেন বিদায় করা হলো না? ভিসার নাম ধরে ধরে তাদের বের করে দিলে এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা কমত। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে তো এটাই দরকার ছিল।

আর কেজরিওয়াল সাহেব, দিল্লির হিংসা ছড়ানোর সময় তো বাড়িতে ঢুকে বসেছিলেন। ৫০-এর বেশি মানুষ মারা যাওয়ার পর মুখ খুলেছিলেন। এবারও তাই। জামাতে বিদেশিরা এসে করোনা ছড়ানোর পর তাদের ফেরানো, কোয়ারান্টাইনের কথা ভাবেননি। এখন লোক দেখানো মিটিং করে আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার কথা বলেছেন। নির্লজ্জের মতো আচরণ। মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর ২৮মার্চ অবধি প্রায় দেড় হাজার মানুষ জমায়েত করে ছিলেন। বারবার চিঠি দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। শুধু জমায়েত সরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু লক ডাউনের পরেও কী করে এই জমায়েত রইল? নিজামুদ্দিন এলাকার বিধায়ক আপের, সাংসদ বিজেপির, আর পুরসভা বিজেপির। কে দায় এড়াবেন!

শাস্তির কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এই চেষ্টা কেন? এতে কী সংক্রমন বন্ধ হবে? প্রত্যেকটি রাজ্য থেকে প্রতিনিধি ছিলেন। অসমে সবচেয়ে বেশি, ২১৬জন, পশ্চিমবমঙ্গের ৭৩জন। প্রত্যেকটি রাজ্যের প্রতিনিধিরা ফিরে গিয়েছেন। তারা তো সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন। ৩৪০জন হাসপাতালে। তাদের কতজন পজিটিভ হবেন? দিল্লি পুলিশের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কাছে কোনও উত্তর আছে কী? এটা তো আর যাই হোক কংগ্রেসের রাজত্বকালের সময় নয় যে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে রেহাই দেওয়া যাবে। তাহলে? যেখানে জমায়েত হলো, তার ৫০মিটার দূরে পুলিশ থানা। তারা কী করোনাকে প্যারাসিটামল খাওয়া জ্বর মনে করছিলেন?

নিজামুদ্দিনের দৌলতে রাজ্যে রাজ্যে এই পরিস্থিতি অশনি সঙ্কেত হতেই পারে। গোষ্ঠী সংক্রমণের শুরুয়াৎ কী হয়ে গেল? আগামী এক সপ্তাহে পরিষ্কার হয়ে যাবে নিজামুদ্দিন ভারতে করোনা সংক্রমণের এপি সেন্টার হবে কিনা। সেদিন কিন্তু মোদি-অমিত-কেজরিওয়ালকেই জবাব দিতে হবে।

Related articles

গাজায় সাংবাদিকসহ ১৯ জনের মৃত্যু! নীরব নেতানিয়াহু

দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজায় ফের রক্তক্ষয়ী হামলা চালাল ইজরায়েলি সেনা। সোমবার দুপুরে গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও...

শ্রমশ্রী প্রকল্পে ভুয়ো আবেদন রুখতে কড়া নজরদারি রাজ্যের 

ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত শ্রমশ্রী প্রকল্পে প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীরাই সুযোগ পান, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ...

আদিবাসী উন্নয়ন আরও সুদূর প্রসারি করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, সৌজন্য উড়িয়ে বৈঠকে অনুপস্থিত বিজেপি

আদিবাসী উন্নয়ন নয়, রাজনীতিই যে তাদের লক্ষ্য তা আরও একবার প্রমাণ করল বিজেপি (BJP)। আমন্ত্রণ পেয়েও সৌজন্যের জবাব...

DHFC-র হারের পরই ক্লাব থেকে কর্তাদের ছোট করার চেষ্টা, জবাব দিলেন মানস

ডুরান্ড কাপের(Durand Cup) ফাইনালে পৌঁছে সকলকে চমকে দিয়েছিল ডায়মন্ডহারবার এফসি(DHFC)। বাংলার ফুটবলকে যে দল নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তাদের...
Exit mobile version