কোভিড ১৯-এর আশঙ্কার মেঘ উড়িয়ে দিচ্ছে রাতের নীল আকাশ

সঞ্চিতা রায়, রাঁচির বাসিন্দা

লকডাউন কবে কাটবে জানি না। এক এক সময় মনে হচ্ছে, এই সময় কলকাতায় থাকলেই ভাল হত। আবার রাঁচির যা আবহাওয়া আর কলকাতায় যেরকম গরম পড়েছে শুনছি, তাতে মনে হচ্ছে লকডাউনের সময়টা এখানে থাকাটা মন্দ নয়। স্বামীর কর্মসূত্রে একমাস আগেই কলকাতা থেকে ঝাড়খন্ডের রাজধানী রাঁচিতে আসা। ভেবেছিলাম আশপাশের ঝরনা, জঙ্গল, পাহাড় সব ঘুরে দেখব। এই সময় রাঁচি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কথা সবাই জানে। ভূগোল বই থেকে শুরু করে গল্প-উপন্যাস সবেতেই বাঙালির এই ‘প্রিয় পশ্চিমের’ কথা পড়েছি অনেকবার। এখন থাকতে বেশ ভালই লাগছে। কিন্তু গৃহবন্দি দশায় কোথাও ঘুরে দেখা হয়নি এখনও। কারণ এখানে এসে থিতু হয়ে বসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। একটা সুবিধে হয়েছে- আমার পুত্রের কলেজ ছুটি হওয়ার জন্য সেও আমাদের সঙ্গেই থাকতে পারছে।

দেশ জুড়ে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, তখনও ঝারখান্ড ছিল সুরক্ষিত। আক্রান্তের খবর তেমন মেলেনি। কিন্তু ৩১ মার্চ থেকে পরিস্থিতিটা বদলে গেল। একজন মালয়েশিয়ান মহিলার শরীরে ধরা পড়ল কোভিড ১৯। জানা গেল, রাঁচির একটি ধর্মীয় স্থানে তিনি আরও ২৩ জনের সঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন। প্রশাসন অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে। আর তার সঙ্গেই আতঙ্ক বেড়েছে আপাত শান্ত শহরে। সবাই ভাবছে ওই ২৩ জন কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে বাইরে বেরোতে হচ্ছে বাড়ির লোককে। আর সব সময় ভয় উঁকি মারছে ছোঁয়াছুঁয়ির মাধ্যমে, জিনিসপত্রের মাধ্যমে বাড়িতে ঢুকে পড়ল না তো মারণ ভাইরাস। হাত থেকে শুরু করে জিনিসপত্র ধুয়ে চলেছি অবিরাম। মেনে চলছি বিশেষজ্ঞ ও সরকারি পরামর্শ।
তবে বেলা পড়ে এলে, সন্ধের আগে আকাশে চোখ মেললে অসম্ভব শান্তি আসে মনে। হালকা ঠান্ডা হওয়া, নীল আকাশে দিগন্ত জুড়ে পড়ন্ত সূর্যের আভা। আশা জাগায় রাত কেটে যাবে; নতুন সূর্য উঠবে। আমি আমার স্বামী-সন্তান নিয়ে হুড্র, জোনার বিভিন্ন ঝরনা দেখতে যাব। ম্যাকলাস্কিগঞ্জের জঙ্গলে যাব। টেগর পাহাড়ে দেখতে যাব রবীন্দ্রনাথের বাড়ি। আর সেই যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে এখন বাড়িতে থাকাই শ্রেষ্ঠ উপায়।

Previous articleকরোনার জের: ৯০ বছরে এতবড় সঙ্কট হয়নি, জানাল আইএমএফ
Next articleরাজ্যে ধেয়ে আসছে ঝড়, সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ শিলাবৃষ্টি