টক-শো’তে মারোয়াড়ি- সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য নেতার, দলের বক্তব্য নয়, টুইটে জানালো তৃণমূল

সর্বভারতীয় এক টিভি চ্যানেলে দলের প্রতিনিধি হিসাবে এক বক্তার বক্তব্যে চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ ওই মন্তব্যের জেরে পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়েছে যে বুধবার সকালে তৃণমূল টুইট করে জানাতে বাধ্য হয়েছে, ওই বক্তার মন্তব্যের সঙ্গে দলের বিন্দুমাত্র যোগ নেই৷ তার ব্যক্তিগত মন্তব্যকে দলের মতামত হিসাবে ধরা ঠিক হচ্ছেনা৷

কিন্তু এ কথা বলার আগেই একটি সম্প্রদায় সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কার্যত অনাস্থা প্রদর্শন করা শুরু করে দিয়েছে৷ তৃণমূলের এই বক্তব্য সরকারিভাবে জানানো হলেও এখনও বোঝার উপায় নেই ক্ষত উপশম হয়েছে কি’না ৷ দলের প্রতিনিধির বক্তব্যে দায়বদ্ধতার চরম অভাবের খেসারত আগামীদিনেও দিতে হয় কি’না, তা নিয়ে দলের অন্দরে আশঙ্কা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

সর্বভারতীয় এক টিভি চ্যানেলে মঙ্গলবার করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনায় তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবেই অংশ নিয়েছিলেন ওই ভদ্রলোক৷ আলোচনা চলাকালীন এ রাজ্যে অত্যাবশকীয় জিনিসপত্রের সংকট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ তখনই এই বক্তা এ রাজ্যের সরকার ও শাসক দলকে ‘রক্ষা’ করতে ‘অন-এয়ার’ বলেন, “রাজ্যের মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশকীয় জিনিসপত্র মজুত করে কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে৷ ওই সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যবসায়ীরাই এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে৷”

চরম বিদ্বেষমূলক এই মন্তব্যে আগুনে যেন ঘি ফেলা হয়৷ স্বাভাবিকভাবেই ওই টক-শো’য় অংশ নেওয়া বাকিরা তীব্র প্রতিবাদ জানান, এই মনোভাব পোষন করার জন্য তুমুল সমালোচনা চলে তৃণমূল এবং দলের সুপ্রিমোর৷ সঞ্চালক প্রসঙ্গটি জিইয়ে রাখেন৷ একের পর দর্শকের ফোন ঢোকানো হয়৷ প্রতিটি ফোনেই কুৎসিত মন্তব্য করা হয় তৃণমূলের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে৷

এরপর বুধবার সকালেই আসরে নামে মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের একাধিক সংগঠন৷ রাষ্ট্রীয় অহিংসা মঞ্চ, ভারতবর্ষীয় মারোয়াড়ি সমাজ সরাসরি চিঠি দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো-র উদ্দেশ্যে ৷ এই চিঠিতে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, একটি চ্যানেলের টক শো’তে এক তৃণমূল নেতা মারোয়াড়িদের সম্পর্কে বলেছেন, মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা কালোবাজারের সঙ্গে যুক্ত৷ এটাই কি দলের ঘোষিত অবস্থান ?
তৃনমূলের এক নেতা প্রকাশ্যে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে তাতে আপত্তি জানাই৷
চিঠিতে বলা হয়েছে,
এটা সত্যি যে মারোয়াড়ি সম্প্রদায় বহু শতাব্দী ধরে পশ্চিমবঙ্গে বাস করছেন৷
মারোয়াড়িরা শান্তিকামী সম্প্রদায় এবং কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ রাজ্যে ব্যবসা করে এবং বিভিন্ন শিল্প পরিচালনা করে। এই সম্প্রদায় রাজ্যের কল্যাণে রাজস্ব এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এই মারোয়াড়ি সম্প্রদায় কেবল পশ্চিমবঙ্গে বা ভারতে নয়, গোটা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল বা দলের কোনও নেতা এই সম্প্রদায়ের দিকে এভাবে আঙুল তোলেননি৷ এক তৃণমূল নেতার এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অপ্রয়োজনীয় মন্তব্যে মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে৷ মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিষ ছড়ানো হয়েছে। মারোয়াড়ি সম্প্রদায় সব সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সমর্থন করেছে৷ চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমাদের প্রশ্ন, টেলিভিশন বিতর্কে তৃণমূলের ওই নেতা যে মন্তব্যে করেছেন তার কোনও প্রমাণ নেই৷
প্রমাণ ছাড়া এ জাতীয় উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য সমাজকে বর্ণ ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছে এবং মারোয়াড়ি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷
আমরা টেলিভিশন বিতর্কে তৃণমূলের ওই নেতার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই৷ এ ব্যাপারে ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এই বিষয়ে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ চাইছি।”

এর পরেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তৃণমূল কংগ্রেস টুইট করে জানিয়েছে, ওই বক্তার নিজস্ব বক্তব্য দলের বক্তব্য নয়৷ তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই ‘অভিযুক্ত’ বক্তাকে আগামীদিনে আর কখনই দলের তরফে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হবেনা৷

তৃণমূল এ প্রসঙ্গে দলের কথা জানিয়ে দিয়েছে, এখন দেখার মারোয়াড়ি সম্প্রদায় বিষয়টি ঠিক কীভাবে নিয়েছে৷

Previous articleত্রুটিপূর্ণ কিট নিয়ে ফের কামান দাগলেন অভিষেক
Next article“বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা চলছে”, তথ্য দিয়ে বললেন মমতা