বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উচিত কোভিডে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান প্রকাশের সময় ভারতের এক অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের ‘অত্যাশ্চর্য অডিট মডেল’ ফলো করা। তাতেই মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা একধাক্কায় কমে আসবে, এই পরিস্থিতিকে অতটা বিপর্যয় বলেও আর মনে হবে না, বিশ্বজুড়ে মৃত্যুমিছিল চলছে বলে যে ভয় ভয় ভাব জাগছে তাও দিব্যি দূর হয়ে যাবে।
মুখ্যমন্ত্রীকে এখন বলতে হচ্ছে অডিট কমিটি তিনি জানেন না। কারা বোঝালেন তাহলে? কারা বুদ্ধি দিলেন? মানুষের মধ্যে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি আর বহু বিতর্কের পর আজ মুখ্যসচিবের ব্যাখ্যায় আত্মবিশ্লেষণ কেন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বড় সংকট আসেনি মনে হলেও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিচালকরা সেই ভাবনা মানুষের মন থেকে দূর করে দিতে চান। তাতে মানুষ ভয় না পেয়ে আরও বেশি সতর্ক হবেন নাকি বেপরোয়া, তাতে রোগ সংক্রমণের হার কমবে নাকি ধামাচাপা দিতে দিতে আরও ছড়িয়ে পড়বে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে যেটা স্পষ্ট তা হল একটা সম্পূর্ণ অচেনা নতুন ভাইরাসের সংক্রমণে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা ধামাচাপা দিলে তা জনস্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেখেলা করার সামিল। এবং এটা অন্যায়। রাজনৈতিক বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এই অন্যায় থেকে পার পাওয়া যায় না। আর একবার এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলে মানুষও এরপর সব কিছুতেই সংশয় প্রকাশ করতে থাকবেন। সত্যি তথ্য দিলেও মনে হবে জল মেশানো নেই তো? আদৌ স্বচ্ছতা আছে তো? কোনও প্রশাসনের জন্য তা নিশ্চয়ই সম্মানের নয়!
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য অনেক ঘোরে।
কিন্তু এবার বহু এলাকা থেকে মানুষের অভিজ্ঞতা আর মুখ্যসচিবের হিসেবে ফারাক আসছে। একটি ফোন অডিও ঘুরছে। সত্যি হলে ভয়ঙ্কর। মিথ্যা হলে বন্ধ করা হোক।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যই বলছে, কোভিড সংক্রমণ নিয়ে এই রাজ্যে মারা গিয়েছেন ১০৫ জন। এরপরেও ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মত করে বলা হচ্ছে কোভিডে মৃত্যু ৩৩ আর করোনা আক্রান্ত বাকি ৭২ জনের কো-মরবিডিটিজনিত। এটা নতুন কী? কোনও রোগব্যাধিহীন সুস্থ মানুষ যে করোনায় আক্রান্ত হলেই মারা যাবেন না এবং বয়স্ক ও অন্যান্য ক্রনিক ডিজিজ থাকা মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ যে বিপজ্জনক তা বুঝতে গালভরা অডিট কমিটি তৈরির দরকার কী? ভারতের বাকি সব রাজ্য এবং সারা পৃথিবীতেই তো একই চিত্র, কো-মরবিডিটি থাকলে করোনা সংক্রমণে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ইতালি, আমেরিকা সর্বত্র। কেউ তো এই অজুহাতে মৃত্যুসংখ্যা চেপে যাচ্ছে না! একজন হাইপ্রেশার, ডায়াবেটিস বা সিওপিডির রোগী অথবা কিডনি, হার্টের সমস্যা বা অন্য কোনও কঠিন অসুখে ভুগতে থাকা মানুষ করোনায় আক্রান্ত হলে মারা যেতে পারেন এই তথ্যই দেখিয়ে দিচ্ছে এদের জন্য কতটা সাবধানতা দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বে করোনায় প্রাণ হারানো অধিকাংশ মানুষই এই গোত্রের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব নিজে দিল্লির সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এপর্যন্ত যত মৃত্যু হয়েছে তার ৮৬ শতাংশই কো-মরবিডিটির ফলে। আর এই রাজ্যে এধরনের মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যু নয় বলে সর্বভারতীয় তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই তথ্য গোপনের প্রবণতা আদতে জনস্বাস্থ্য সংকটকেই আরও ঘোরালো করে তুলছে। জনমনে তৈরি হওয়া বিভ্রান্তি কাটাতে তথাকথিত অডিট কমিটির চিকিৎসকরা এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনও সাংবাদিক সম্মেলন করার সৎসাহস দেখাননি। তাঁদের যুক্তি যদি এতই জোরালো হবে তবে তাঁদের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে দেওয়া হচ্ছে না কেন? ভয় কীসের? উল্টে ধারাবাহিক প্রশ্নে ব্যাকফুটে যেতে হচ্ছে কেন?
এই গোটা পরিস্থিতি তৈরি করলেন কিছু আমলা আর চিকিৎসক।
অথচ মানুষের অসন্তোষের লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছে গোটা সরকার।
এর কি দরকার ছিল??