Thursday, August 28, 2025

ফুটপাথবাসীদের ক্ষুধা মেটানোর সঙ্গেই সামাজিক দূরত্ব বিধির পাঠ দিচ্ছেন মানবিক পুলিশ অফিসার

Date:

“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”। কবি সুকান্তের লেখা কবিতার লাইনগুলি আজকের বাস্তবের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ক্ষুধার সঙ্গে পরিচিত মানুষগুলো পূর্ণিমা চাঁদের রূপ দেখে ঝলসানো রুটি মনে করে। সেই ভাবনা থেকেই কবির কলমে জায়গা করেছিল এই কবিতা।

দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে না পারা মানুষগুলো এই লকডাউনের দিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েছেন। নিজের পেটের কথা তো দুরস্ত, ঘরে থাকা ছোট ছোট সন্তান আর বৃদ্ধ মা-বাবার মুখে অন্ন কোথা থেকে আসবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষগুলির। আর এই দুঃসময়ে একান্ত ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দুঃস্থ-অসহায় ফুটপাতবাসী ভবঘুরে মানুষগুলির মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন বারুইপুর জি আর পি এস-এর ভারপ্রাপ্ত অধিকারিক অর্নব দত্ত।

একদিন-দুদিন নয়, লকডাউনের প্রতিটি দিন এই অভুক্ত মানুষদের পাশে এসে দাড়িয়েছেন তিনি, লকডাউনের ৪৭ দিন ধরে একই ভাবে এই মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন অর্ণববাবু ও তার সহকারিরা। ক্ষুধার্তদের মুখে অন্ন না তুলে এখনও একদিনও নিজের মুখে অন্ন নেননি অর্ণব দত্ত।

তাঁর কাছে প্রতিদিন কম-বেশি ১০০ জন ক্ষুধার্ত মানুষ আসেন পেটের জ্বালা মেটাতে। তিনি হাসি মুখে নিজে হাতে পরিবেশন করে তাদেরকে পেট ভরে খাইয়ে তৃপ্ত করেন। নিজেও তৃপ্তি পান।

শুধু তাই নয়, নিজের পরিবারের মতো এই মানুষগুলির মুখে একেকদিন একেক রকম নতুন আইটেমের খাবার পরিবেশন করেন তিনি। আমাদের সবদিন একই খাবার খেতে ভালো লাগেনা, মাঝে মধ্যে একটু ভালমন্দ খাবার আশা আমরা সকলেই করে থাকি। আর সেই ভাবনা মাথায় রেখে কোনওদিন তাঁর মেনুতে থাকে ভাত-ডাল-আলুচকা। কোনওদিন ডিম-সোয়াবিন। আবার কোনওদিন দেশি রুই-কাতলা কিংবা মাংস। সঙ্গে কমন আইটেম চাটনি-পাপড়-দই কিংবা পায়েস-মিষ্টি।

আট থেকে আসি, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই মিলে একসঙ্গে বসে একান্নবর্তী পরিবারের মত লকডাউনের প্রতিদিন এইভাবেই ক্ষুধা মিটিয়ে যান এখান থেকে। তবে অর্ণব দত্তের একটাই শর্ত। দূরত্ব রাখো বজায়, পেট ভরে খাও বেজায়।

সম্প্রতি সিস্টেমে পরিবর্তন এনেছেন অর্ণব দত্ত। এখন আর প্লাটফর্ম-এ পাশাপাশি বসে খাওয়া নয়। কিছুটা বুফে সিস্টেমের মতো ব্যবস্থা। সারি ধরে প্লেট-ফয়েলে রেডি থাকছে গরম গরম খাবার। আর সামাজিক দূরত্ব ও নিয়মানুবর্তিতা বজায় রেখে একে একে তা নিজেরাই তুলে নিচ্ছে ফুটপাতবাসী আবাল বৃদ্ধবনিতা।

এদিনও তার ব্যতিক্রম হলো না। মেনুতে ছিল ফ্রায়েড রাইস, ও কাশ্মীরি আলুর দম। তবে মেনু বড় বিষয় নয়। দেখুন ফুটপাতবাসী তথাকথিত “অশিক্ষিত” গরিব মানুষগুলি যেভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলো, তা এককথায় নজিরবিহীন। শিক্ষনীয়ও বটে। আর প্রতিনিয়ত তাদের এই শৃঙ্খলা পরায়ণতার পাঠ দিচ্ছেন ওসি অর্ণব দত্ত।

Related articles

হাসিনার প্রত্যাবর্তনে ভয় পাচ্ছে বিএনপি! নির্বাচন ভণ্ডুলের আশঙ্কা খালেদা জিয়ার দলের

বাংলাদেশ(Bangladesh) জুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। চাপের মুখে পড়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে...

রেস্তোরাঁয় বিল মেটাতে না পেরে বাসন ধুয়েছিলেন! ঘরভাড়া মেটাতে হিমশিম খেতেন আশিস

বলিউড (Bollywood) অভিনেতা আশিস বিদ্যার্থী (Ashish Vidyarthi)। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও আর্থিক সমস্যার...

দু’দিনেই তিন হাজার আবেদন! পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে বিপুল সাড়া

রাজ্যে ফিরেছেন কর্মসংস্থানহীন বহু শ্রমিক। তাঁদের আর্থিক সুরাহার লক্ষ্যে নবান্নের উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘শ্রমশ্রী’ অ্যাপ। আর যাত্রা শুরুর...

ওয়াক ফর প্যারালিম্পিকসে হাঁটলেন একাধিক বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাথলিটরা

প্রতিবছরের মতো এই বছরও হয়ে গেল সিভিলিয়ান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে walk for paralympics পদযাত্রা। এই পদযত্রা শুরু হয়েছিল...
Exit mobile version