বরখাস্ত বা বেতন কাটার অধিকার দিলেন মোদি-শাহ, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

‘মাস্ক’ সরে যাচ্ছে, এবার বেরিয়ে আসছে আসল মুখ৷

এই মুখটা বেশ চেনা৷ মাঝে কিছুদিন রং-চং মেখে করোনা-মঞ্চে ‘অ্যাক্টিং’ করতে হয়েছিলো ‘দরদী’, ‘সহমর্মী’, ‘ভদ্রলোক’-এর চরিত্রে৷

ওসব এখন অতীত৷ এখন পুরোটাই আসল উনি৷ এটাই তো উনি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷

গত ২৯ মার্চ, করোনা বা লকডাউনের শুরুর সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রক এক নির্দেশ জারি করেছিলো৷ বলা হয়েছিলো, “লকডাউন পর্বে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কর্মীদের পুরো বেতনই দিতে হবে৷ এই নির্দেশ না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে”৷

তখন সর্বস্তরেই বেশ প্রশংসা পান মোদি-শাহ৷ দেশের চাকুরিজীবী মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোদিজির উদ্বেগ দেখে দেশবাসী ( এর মধ্যে ভক্তকুল-ও আছে) ধরে নেন, রাষ্ট্র এই মহা সংকটে পাশে আছে৷ ভক্তরা বাজারে নামেন থালা-বাটি বাজাতে, হ্যারিকেন জ্বালাতে৷ কিছু ভক্ত তো সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদি-শাহের এততো প্রশংসা করেন, জীবনে যা বাবা-মায়ের নামেও করেননি৷

এবার এই ভক্তকুলকে প্রতিদানে অনেক কিছুই ফিরিয়ে দিলেন মোদিজি- শাহজি৷ ১৭মে লকডাউন-০৪ পর্বে যে নির্দেশিকা মোদিজি- শাহজি-র নির্দেশে জারি হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে,
লকডাউন পর্বে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কর্মীদের পুরো বেতনই দিতে হবে, এমন কোনও উল্লেখ নেই৷ ফলে ধরেই নেওয়া যায়, ২৯ মার্চের ওই নির্দেশ ফেরত নিয়ে নিয়েছেন মোদিজি৷ দেশের চাকুরিজীবী মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজেদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন এই জুটি৷ এই নির্দেশ নিশ্চিতভাবেই যে ওনারা দিয়েছেন আম্বানি-আদানি মার্কা ‘বেওসায়ি’-দের চাপে, তা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার হয়না৷ সাম্প্রতিক নির্দেশকে সামনে এনে এইসব বেওসায়ি-দের আর কর্মীদের বেতন কমানো, বেতন কাটা বা প্রয়োজনে তাদের ছাঁটাই করায় আর কোনও বাধা রইল না৷

কেন্দ্রীয় সরকার এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করায় এবার দেশজুড়ে কর্মী ছাঁটাইয়েরও জোয়ার লাগবে৷ নিরন্ন মানুষের লাইন দীর্ঘায়িত হবে৷ তাতে অবশ্য মোদিজির অবশ্য অসুবিধা হবে না৷ মাথায় রাখতে হবে, এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করতে হবে, এমন কোনও নির্দেশ দেশের কোনও আদালতই কিন্তু দেয়নি৷
কারোরই অজানা নয়,
দিনদুয়েক আগে স্যুইগি, উবের জানিয়েছে, লকডাউনের জন্য ব্যবসায়িক মন্দার কারণে কয়েক হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। এবার বাকিদেরও এ পথে হাঁটতে বাধা রইলো না৷

গত ২৯ মার্চ কেন্দ্র যে নির্দেশিকাটি জারি করেছিলো, সেখানে ছিলো ৬টি SOP বা
স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর ছিলো। ওই ৬টির মধ্যে যার ৫-টিই ছিল, লকডাউনে দেশের মধ্যে যাতায়াত বা চলাফেরা সংক্রান্ত। এই ৫টি SOP আগামী দিনেও বজায় থাকবে বলে ১৭ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে৷

খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ১৭ মে শুধুমাত্র তুলে নেওয়া হয়েছে লকডাউন পর্বে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি এবং পাশাপাশি নির্দেশ অমান্য করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশটি।

ফলে, বেসরকারি সংস্থায় চাকরি যারা করেন, তাঁরা তৈরি থাকুন, যতই লকডাউন থাকুক, গণ-পরিবহন অমাল হোক, নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের ‘দক্ষ’ ব্যবস্থাপনায় যে কোনও মুহুর্তে আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে বরখাস্ত করতে পারে, আপনার বেতন কমাতে পারে বা বেতন কাটতে পারে৷ সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার আপনার পাশে থাকবে না৷

এবার না হয় ঠিক করুন কী করবেন ? দুটো পথই তো খোলা৷
হয় ভাবতে বসুন সেদিন থালা বাজিয়ে বা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে যে সমর্থন মোদিজিকে করেছিলেন, সেই সমর্থন গ্রহণ করার যোগ্যতা বা অধিকার ওনার আর কতখানি আছে? এবং ভাবুন, ভবিষ্যতে ফের এদের সমর্থন করবেন কি’না ?

অথবা, যে কোনও সময়ে চাকরি খোয়াতে পারেন, এই ‘খুশি’তে আরও একবার থালা বাজিয়ে বা হ্যারিকেন জ্বালিয়ে সেলিব্রেটও করত পারেন৷

চয়েস ইজ ইওর্স !

_____