Thursday, November 13, 2025

হাল্লারাজার মন্ত্রী-ই করোনা যুদ্ধের শেষ অস্ত্র, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

কণাদ দাশগুপ্ত

চার নম্বর লকডাউন শেষ হওয়ার মুখে৷ কাটতে চলেছে প্রায় ৬৫ দিন৷ গোটা দেশ টানা লকডাউনে৷ অথচ করোনায় সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ? দেশবাসীর স্বাস্থ্য তথা জীবন নিয়ে সমানে চলছে ছিনিমিনি খেলা ! চতুর্থ দফার লকডাউনের শেষ পর্যায়েও দেশে করোনায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত।

গত ২৪ মার্চ, ২০২০, দেশজুড়ে এক নম্বর লকডাউন ঘোষণার দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর কাছে ২১ দিন চেয়েছিলেন করোনা- নিয়ন্ত্রণের জন্য৷ সেদিন মোদিজি ঘোষণা করেছিলেন, ২৫ মার্চ, ২০২০ থেকে ১৪ এপ্রিল,২০২০, এই ২১দিন দেশজুড়ে চলবে লকডাউন৷ দেশবাসী সরকারের পাশে থেকে এই ২১ দিন ঘরবন্দি থাকলেই ‘গ্রেফতার’ করা যাবে করোনাভাইরাসকে৷

২১ দিনে কিছুই হয়নি৷ এর পর দ্বিতীয় দফায় ১৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে, তৃতীয় দফায় ৪ মে থেকে ১৭ মে, চতুর্থ দফায় ১৮ মে থেকে ৩১মে পর্যন্ত গোটা দেশে টানা লকডাউন৷ ২১দিনের আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৬৬ দিন ভারতকে তালাবন্ধ করে রাখলেন নরেন্দ্র মোদি৷ কিন্তু কাজের কাজ কতখানি হলো ?

গত ৫-৬ দিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকার দেশে করোনা সংক্রমণে যে ছবি তুলে ধরছে, তা ভয়াবহ৷
হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের হিসেব বলছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬,৫৬৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৯৪ জনের৷ এটা একদিনের হিসেব৷ এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৫৮, ৩৩৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪,৫৩১ জন রোগীর। ৩ সপ্তাহ সময় চাওয়া দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ৮ সপ্তাহের বেশি সময় দিয়েছেন দেশের মানুষ৷ অপরিসীম ব্যর্থতা পরতে পরতে ফুটে উঠছে৷ এখনও দেশে একদিনে করোনায় মরছেন ১৯৪ জন৷

এই মূহুর্তে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, গত ১৪ মে ভারতবর্ষে কোয়ারাইন্টাইনে ছিলেন সাড়ে ১১ লক্ষের কিছু বেশি মানুষ ৷ এর ঠিক ১২ দিন পর, ২৬ মে’র হিসেব বলছে ভারতে কোয়ারান্টাইনে ছিলেন ২২ লক্ষ ৮১ হাজার ২৫০ জন। মাত্র ১২ দিনে কোয়ারান্টাইনে থাকা মানুষদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এর দায় কার ? করোনা-সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশের সরকার এইভাবে ব্যর্থ কেন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেবে না৷

আসলে যে কায়দায় দেশে লকডাউন নামক স্ট্যান্ড-আপ কমেডি চলছে তাতে এই হিসেব খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়৷ পরিযায়ী শ্রমিকদের যাতায়াত , বিদেশ থেকে নাগরিকদের উদ্ধার করে আনা আর দেশের মধ্যে ঘরোয়া উড়ান আর ট্রেন চলাচলের কারণে করোনারোগীর সংখ্যা যে বাড়তোই, মোদি-শাহ এটা না জানার মতো নির্বোধ নন৷ এই পরিনতি অপেক্ষা করছে তা জেনেও কি এই ধরনের ‘মানুষ-মারা’ সিদ্ধান্ত ওনারা নিয়েছিলেন ? দেশের অন্য রাজ্যের তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আজও কম থাকলেও, ছত্তীসগঢ়, ওড়িশা, বিহার, অসমে করোনা- আক্রান্তের সংখ্যা আজ বেশ উদ্বেগজনক। এই উদ্বেগ বাড়িয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য, বিদেশ থেকে লোকজনকে দেশে আনার জন্য এবং ঘরোয়া উড়ান আর ট্রেন চলাচল চালু করে দেওয়ার কারণে৷ তাই মাত্র ১২ দিনেই কোয়ারান্টাইনে থাকা মানুষদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।

এটাও ঠিক, লকডাউন আরও একদফা বাড়ানো হবেই৷ এবং একইসঙ্গে লকডাউনে ছাড় দেওয়ার বৃত্ত-ও আরও বড় করা হবে৷ গত বেশ কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে নিত্যনতুন ছাড়ের ঘোষণা করেই চলেছে কেন্দ্র৷ তা সত্ত্বেও এই লকডাউনের ভণ্ডামি চালিয়ে যাওয়া হবে৷ কিসের লকডাউন ? কেন লকডাউন ? লকডাউন যদি সত্যিই লকডাউন না হয়, তাহলে কেন্দ্র এই ‘রামলীলা’ চালিয়ে যাচ্ছে কেন ? এ প্রশ্নের জবাব মিলবে না৷ তবুও পঞ্চম লকডাউন নিশ্চিত৷

তবে চরমতম এই ব্যর্থতা ঢাকতে শুধুই ‘লকডাউন’ দেশের মাটিতে এবার আর বিকোতে নাও পারে৷
এই লজ্জা ঢাকার মরিয়া কিছু প্রয়াস তো নিশ্চিতভাবেই দিল্লির কোনও প্রাসাদে চলছে৷ কিন্তু কৌতূহল একটাই, কেমন হবে করোনা- ঠেকানোর সেই ‘পাশুপাত’ অস্ত্র ?

শোনা যাচ্ছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে চরমতম ব্যর্থতা ঢাকতে এবার নতুন রূপরেখা নিয়ে আসরে নামতে চলেছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷ ৪ দফার লকডাউনের প্রভাব দেশে ঠিক কতখানি পড়লো, সেই ‘রিপোর্ট’ তৈরি হচ্ছে৷ এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ১ জুন পরবর্তী কৌশল ঘোষণা করতে চলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
ফের নতুন মোড়কে কিছু ভালো ভালো কথা শোনানো হবে৷ দেশবাসী শুনবেন৷

বাস্তব এটাই, করোনা- নিয়ন্ত্রণের কোনও কৌশল বা বিজ্ঞান এই মূহুর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আর নেই৷ সব তাস খেলা হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো হবেনা, ‘দেখনদারি’-র কাজটা চালিয়ে যেতে হবে৷ তাই পঞ্চম পর্যায়ের “কাছাখোলা” লকডাউন ফের ঘোষণা হবেই৷ সঙ্গে ফের কিছু দুর্বোধ্য নির্দেশিকা৷

কেন্দ্র চাইছে দেশবাসীর নজর করোনা থেকে সরাতে৷ করোনাকে আলোচনার বাইরে রাখতে৷ সেক্ষেত্রে করোনার থেকেও বড় ঘটনা সামনে আনতে হবে৷ দেশবাসী কতখানি ‘দেশপ্রমী’ তা বোঝানোর বাধ্যকতা তৈরি করা না গেলে ‘করোনা-মুক্তি’ ঘটবে না৷ পঞ্চম লকডাউনে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হাতে সময় মিলবে৷ তাই এই মুহুর্তে গল্পের মতো শোনালেও, আগামী এক বা দু’সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় সেনা যদি ব্যস্ত হয়ে ওঠে চিন, পাকিস্তান অথবা নিদেনপক্ষে নেপালের সীমান্তে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই৷
কোনও চিকিৎসক বা গবেষক বা বিশেষজ্ঞ নয়, করোনা-সংক্রমণ থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতে এই মূহুর্তে প্রয়োজন গুগাবাবা-র হাল্লা রাজার মন্ত্রীর মতো একজন৷ যিনি একবার ‘যুদ্ধ চাই যুদ্ধ’ বলে বাজারে নামলেই করোনা ভ্যানিশ ! ওদিকে সলতে পাকানোর কাজটাও তো ঠিকঠাকই চলছে৷

‘দেশপ্রেম’-এর বাজার চিরকালই তো তুঙ্গে৷

Related articles

আগামী বছর আরও বড় কিছু করব-Big Jump: “জনগণের উৎসব Kiff”-র সমাপ্তিতে বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর 

“আমরা আগামী বছর আরও বড় কিছু করব…Big Jump“-৩১ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আচমকা হাজির হয়ে...

কমিশনের হিসাবে ফর্ম পৌঁছে বিলিতে ১ নম্বর, তবু বাংলায় প্রশিক্ষণই অসম্পূর্ণ BLO-দের!

৪ নভেম্বর থেকে দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ইউনিমারেশনের কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। ১১ নভেম্বরের মধ্যে...

বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি, মৃত্যু শ্রমিকদের, আহত বহু

বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) বারাবাঁকি জেলা। বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকা বিস্ফোরণ (Blast) হয় বাজি...

শেষ হল আমেরিকায় চলা দীর্ঘতম শাটডাউন, অর্থনীতিতে বড় ধাক্কার সম্ভাবনা

আমেরিকায় চলা দীর্ঘতম শাটডাউন (Shutdown) শেষ হল। ১ অক্টোবর থেকে আমেরিকায় (America) অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল। ‘স্পেন্ডিং বিল’ অর্থাৎ...
Exit mobile version