রাজ্য, কেন্দ্র বললেও এখন ধর্মস্থানে যাবেন না, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

8 জুন থেকে 100% কর্মী নিয়ে সরকারি- বেসরকারি দপ্তর খোলার সিদ্ধান্ত তিন/চার ঘন্টার মধ্যেই পুনর্বিবেচনা ও সংশোধন করেছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি ক্ষেত্রে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মী 50% থেকে বাড়িয়ে 70%। আর বেসরকারি ক্ষেত্রে যথাসম্ভব “ইনডোর” থেকে কাজ। কর্মীদের হাজিরা নিয়ে সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

এই পুনর্বিবেচনা সঠিক। সময়োচিত। বিকেলের ওই আগের ঘোষণা অপরিকল্পিতভাবে না হলে আরও ভালো হত। তবে সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করেছেন।

এখন ধর্মস্থান নিয়েও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা দরকার।
যদি কেন্দ্রও ছাড় দেয়, তাহলেও মানুষের জন্য খোলা ঠিক নয়।
আর কেন্দ্রের নির্দেশে ছাড় না থাকলে আবার অকারণ ধন্দ।
নিশ্চয়ই করোনাকে নিয়েই আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে , অর্থনৈতিক স্রোতে ফিরতে হবে। কিন্তু ধর্মস্থান সেই অগ্রাধিকার তালিকায় এখনই পড়তে পারে না। বিশেষত এই পোড়া দেশে সমস্যাদীর্ণ সমাজে ধর্ম এমন একটা জিনিস, মানুষ সুযোগ পেলে আবেগে ছুটে গেলে নিয়মের লাগাম পরানো খুব কঠিন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন: 1 জুন থেকে মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বার খুলবে। একসঙ্গে 10 জনের বেশি ঢোকা যাবে না। গেটে স্যানিটাইজ করতে হবে। বড় উৎসব বা জমায়েত হবে না।

সবাই সব মানলে ঠিক আছে।

কিন্তু আমাদের মত সমাজে এই মাপকাঠি মানবে কে? মানাবে কারা?

এই পরিস্থিতিতে ধর্মস্থান জরুরি নয়। অগ্রাধিকার নয়। বাড়ি থেকে প্রার্থনাই সঠিক।

দশ ঢুকবেন। বেশ। তাহলে বাইরে অপেক্ষমান ভিড়ের কী হবে? সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে কে?

ধর্মস্থানে ঢোকার সময় স্যানেটাইজ করতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আদৌ এটা করতে পারবে? সম্ভব?

ধর্মস্থানের সামনে উপকরণের বহু দোকান থাকে। তার ভিড় কে সামলাবে। অনেকে পুজো দিতে যাওয়ার আগে ফুল, মিষ্টির উপর স্যানেটাইজার রাসায়নিক দিতে চাইবেন না। কে সামলাবে?

প্রত্যন্ত এলাকার মন্দির, মসজিদের ভিড় আদৌ ঠেকানো সম্ভব হবে? নাকি এটাতেও পুলিশের কাজ বাড়বে?

করোনার বিপদ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন এভাব ধর্মস্থান খোলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা দরকার।

অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ। কিন্তু তাই বলে এই বিপদ বাড়ানো কিছুতেই ঠিক হবে না।

রেল ঠাসাঠাসি করে শ্রমিক পাঠাচ্ছে, এটা ঘোরতর আপত্তির। এগুলি অনেক আগে থেকে সুষ্ঠুভাবে করা যেত। কিন্তু এখন সেই বিরক্তির প্রতিক্রিয়ায় লাগামছাড়া সিদ্ধান্ত জটিলতা বাড়াবে।

শুক্রবার রাতেই শুনেছি, দক্ষিণেশ্বর, বেলুড়সহ একাধিক মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তাঁরা 1 জুন থেকে মন্দির জনসাধারণের জন্য খুলতে পারবেন না। আরেকটু সময় লাগবে।

সঠিক সিদ্ধান্ত। যদি না বিশেষ কারণে বদল করেন।

আশা করব মসজিদ, গীর্জা, গুরুদ্বার কর্তৃপক্ষও; এবং বাকি মন্দিরগুলিও একই সিদ্ধান্ত নেবেন।

যেসব মন্দিরের বিগ্রহ রাস্তা থেকে দেখা যায়, সেখানে জটিলতা কম। নিত্যপূজার সময় এমনিই লোকে দেখেন। কিন্তু আরতি বা বিশেষ সময়ের ঠাসাঠাসি ভিড় বিপজ্জনক হতে পারে।

আপাতত দ্বিমুখী অনুরোধ।

এক) রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন। এমনকি কেন্দ্র ছাড় দিলেও আপনারা ছাড় দেবেন না। এই মুহূর্তে ধর্মস্থান মানুষকে চিকিৎসা বা অন্ন, কোনোটাই দেবে না। উপাসনা হোক নিজগৃহে।

দুই) যদি রাজ্য এবং কেন্দ্র, দুই সরকারই উপাসনালয় খোলার কথা বলে; তাহলেও, আমার-আপনার মত সাধারণ মানুষ দয়া করে ধর্মস্থানে যাবেন না। কিছুতেই না। বড় বড় লোকদের সমস্যা হলে বড় বেসরকারি হাসপাতাল আছে। আমজনতার জন্যে কিন্তু সাধারণ সরকারি ব্যবস্থা। নিজের ভালো নিজে বুঝুন। ধর্মস্থানের ভিড় থেকে দূরে থাকুন।

আমিও উপরওয়ালায় বিশ্বাস করি। প্রার্থনা করি। আমি নাস্তিক নই। কিন্তু এই কঠিন মুহূর্তে কোনো একটি ধর্মস্থানে যাওয়ার সঙ্গে ধর্মপালনের কোনো সম্পর্ক নেই। ধর্ম বাড়ি থেকে পালন করা যায়। মানসিক শান্তি পেতে ধর্মস্থানে গেলেন আর শারীরিক অশান্তির শিকার হলেন; এই পথে হাঁটবেন না।

যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকুন। জরুরি কাজ বা কর্তব্যে যতটা দরকার, ততটা বেরোতেই হবে।

সর্বশক্তিমান উপরওয়ালা শুধু ধর্মস্থানে আছেন এবং আমাদের বাড়িতে বা আকাশে বাতাসে নেই; এটা ভুল।
উপাসনা করুন, বাড়িতে, একান্তে।
ধর্মস্থানে যাওয়ার সময় ভবিষ্যতে অনেক পাবেন।

সরকার হয়ত আস্তে আস্তে স্বাভাবিকতা ফেরানোর জন্য এই ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু নিজের ভালো নিজে বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও বোধহয় আজকের দিনের বড় কাজ।

 

Previous articleফের রেকর্ড ভেঙে ভারতে একদিনে করোনা আক্রান্ত ৭,৯৬৪!
Next articleকরোনা নিয়ে গুজরাত সরকারকে দুরমুশ করতেই বদলে গেলো হাইকোর্টের এজলাশ