শিক্ষা দফতরকে অমান্য করেই ফি বৃদ্ধি জি ডি বিড়লার! প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ অভিভাবকদের

রাজ্যজুড়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় লকডাউন চলছে। সেখান থেকে এখনও পুরোপুরি বেরোনো সম্ভব হয়নি। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক মাস ধরে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সারা দেশজুড়ে চলছে আনলক ওয়ান ফেজ ওয়ান। এই পরিস্থিতির মাঝে স্কুলের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে দক্ষিণ কলকাতার নামী ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুল জি ডি বিড়লার সমনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অভিভাবকেরা সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে প্ল্যাকার্ড-ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কেন অন্যায়ভাবে ফি নেওয়া হচ্ছে লকডাউনের সময়, সেই প্রসঙ্গ তুলে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আজ, শনিবার বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিন। মূলত এই বিক্ষোভ দেখানো হয় স্কুলের পেরেন্টস এসোসিয়েশনের উদ্যোগে।

অভিভাবকদের এই অ্যাসোসিয়েশনের তরফে স্কুল কর্তৃপক্ষ লকডাউন-এর সময় এমন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফি নিয়েছে, যেগুলি প্রাসঙ্গিক নয় বলে দাবি করে তাঁরা অবিলম্বে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি বসে বৈঠকের দাবি রেখেছেন। অভিভাবকদের এই এসোসিয়েশন স্কুলের কাছে স্যানিটাইজার এবং যাবতীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করারও দাবি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লকডাউন শুরু হওয়ার পরপরই রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিতে কোনওরকম ফি বৃদ্ধি না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। বেসরকারি স্কুলগুলোকে স্কুল শিক্ষা দফতর কার্যত নির্দেশিকা জারি করেছিল শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনে স্কুলগুলির কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায়। ওই নির্দেশিকায় বেসরকারি স্কুলগুলি যেন কোনওভাবেই ফি বৃদ্ধি না করে তার স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও কলকাতা-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল তাদের ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অনড় থাকে।

যা নিয়ে স্কুলগুলির অভিভাবকেরা ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, লকডাউন চলাকালীন একাধিক স্কুল বাস ভাড়া থেকে শুরু করে ল্যাবরেটারি ফি-সহ বেশকিছু খাতে ফি অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি করেছে।

যা নিয়ে অভিভাবকেরা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষা সচিব এবং একাধিক জায়গায় ই-মেইল মারফত অভিযোগ করলেও তার কোনও সুরাহা হয়নি। স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলোতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক কোন কোন খাতে এই লকডাউন চলাকালীন ফি বাড়ানো হয়েছে তার রিপোর্ট নেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক জেলাগুলির বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনে চলার জন্য। তারপরেও একাধিক স্কুল অনড় থাকে স্কুল ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে। এবং একই সঙ্গে তারা অটল থাকে একাধিক খাতে টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে।

এর প্রতিবাদে গত সোমবার, অর্থাৎ ১ জুন থেকে দক্ষিণ কলকাতার জি ডি বিড়লা স্কুলের অভিভাবক অ্যাসোসিয়েশন বিক্ষোভ শুরু করেন। গত সোমবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে স্কুলের সামনে সোশ্যাল ডিসটেন্স মেনে স্বল্প কিছু অভিভাবক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেও আজ শনিবার তা জনজোয়ারে পরিণত হয়।

অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি গত তিন মাসে একাধিকবার যেভাবে টাকা নেওয়া হয়েছে তা প্রত্যাহার করার আবেদন রাখেন। যদিও এখন পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে অভিভাবকদের এই অবস্থান-বিক্ষোভ-এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনও সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

অভিভাবকদের আরও অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে কোন কোন কারণে ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিশুদের এবং শিক্ষার্থীদের এই মহামারি পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য কি কি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকদের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রত্যেকটি বাস এবং টয়লেটের সামনে মহিলা এটেনডেন্ট নিয়োগ করতে হবে।

Previous articleকরোনা: বাংলার সর্বশেষ তথ্য
Next articleসুন্দরবনে ত্রাণ নিয়ে সাধন পান্ডে ফ্যানস ক্লাব