তৃণমূলের ছাঁট মাল দিয়ে তৃণমূলের বিরোধিতা হয় না! বিস্ফোরক কৃশানু মিত্র

অভিজিৎ ঘোষ

তৃণমূলের ছাঁট মাল দিয়ে কি তৃণমূল বিরোধিতা হয়? যারা ভাবছেন বিজেপি এলে পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে বা সমস্যাগুলোর অনেকটাই সমাধান হবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।

কৃশানুর বিস্ফোরণ। মানে এক সময়ে বিজেপির তরুণ তুর্কী নেতা কৃশানু মিত্রর বিস্ফোরক বক্তব্য। একসময় ডাকসাইটে বিজেপি নেতা, টেলিভিশনের পর্দায় পরিচিত মুখ, মিছিল-মিটিং আন্দোলনের অন্যতম বক্তা, বিজেপির মুখপাত্র এবং ২০১৬ সালে কামারহাটিতে মদন মিত্রর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী। এ হেন কৃশানু রাজ্যে বিজেপির ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে সুতো ধরে টেনে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন বিজেপির ‘বিকল্প’ নীতিকেই। কটাক্ষের সুরে বলেছেন একটা সরকারের বদলে আর একটা সরকার। এটা কী পরিবর্তন? না প্রত্যাবর্তন? কৃশানু এমন একটি প্রশ্ন তুলেছেন, যেটা সম্ভবত বিজেপির কাছে বাংলার অনেকেরই প্রশ্ন। সুবক্তা এবং বই-পত্তর নিয়ে ঈষৎ নাড়াচাড়া করার অভ্যাস কৃশানুর বক্তব্যে। বলছেন, বিজেপি নাকি পরের বার ক্ষমতায় আসবে। তর্কের খাতিরে তা মেনে নেওয়া গেল। এই অবস্থায় বিজেপির কাছে কৃশানুর প্রশ্ন,

এক. বাংলা, বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা, ধর্ম একইভাবে আমরা রক্ষা করতে পারব তো? নাকি এখানেই পরিবর্তন হয়ে যাবে, বাঙালিকে কম্প্রোমাইজ করতে হবে। বাঙালির দ্বারা, বাঙালিকে দিয়ে, বাঙালির জন্য একটা সরকার হবে, নাকি মৈথিলি, অবধি, খাড়িবলি বা একাধিক ভাষাকে হিন্দি যেভাবে ঘিরে ফেলেছে, হরিয়ানা বা ত্রিপুরাতেও যা অনেকটা হয়েছে, সেরকম হবে এই বঙ্গে?

দুই. মাড়োয়ারি আর গুজরাতিরা পুঁজি নিয়ন্ত্রণ করবে, আর কোনও একটা এলাকার মানুষ বা বাঙালিরা তাদের শ্রম দিয়ে পুঁজি বাড়াবে। এটা কতদিন চলবে? রেলের বরাত কারা পায়? করোনার কিট বা অন্যান্য সরঞ্জামের বরাত কোন বাঙালি তুলেছে বলে আপনার কাছে খবর আছে?

তিন. দলের জতীয় সভাপতি এলে রাজ্যের সভাপতি অন্য গাড়িতে যাবেন আর জতীয় সভাপতির হুড খোলা জিপের পাশে অবাঙালি পর্যবেক্ষক হাত নাড়বেন, এটা একটা ভয়ানক ট্রেন্ড। এই চিত্রটা দেশের অন্য কোনও রাজ্য যেখানে বাংলার থেকেও বিজেপি দুর্বল, সেখানেও সম্ভব নয়, বলা উচিত বিজেপি করার সাহসও পাবে না।

তাহলে পথ? দলের এই আসল সমস্যা থেকে নিজেদের দূরে রেখে যেনতেন প্রকারেন ক্ষমতায় আসার চেষ্টার কারণেই বছর তিনেক আগে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন কৃশানু। এক সময়ের তাত্ত্বিক নেতা কৃশানু বলছেন এটাকে আগে থামাতে হবে। তারপর পরের ধাপে যাওয়া। সংঘের আদর্শে উদ্বুদ্ধ তরুণ তুর্কী কৃশানুর পরিষ্কার কথা, যদি সঙ্ঘ বা বিজেপির বাঙালিকরণ হতো, বা যারা এই ভাবধারায় বিশ্বাস করে বলে দাবি করে তাদের বাঙালিকরণ হতো তাহলে মানা যেত। কিন্তু এই যে ট্রেন্ড এরা তৈরি করেছে, তা রুখতে নজর রাখতে হবে এদের বাইরে বেস্ট কে আছে, তাকে খোঁজা, যারা আমার নূন্যতম চাহিদা মেটাতে পারবে। অবিজেপি, অতৃণমূল সরকার বলে কিছু হয় না। আজকের দিনে এটা ভোট কাটার যন্ত্র। বিজেপি বা তৃণমূল বা অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে ডমিসাইল রিজার্ভেশন কী হবে? আমার বাঙালির ঐতিহ্য, পরম্পরা, কৃষ্টি কি রক্ষা করতে পারব? নাকি অনিচ্ছাকৃত বিয়েতে যেভাবে বিয়ের পর মেয়েকে বাবা অন্য কারওর হাতে তুলে দেয়, বাঙালিও তার বাঙালিত্ব এবার এক শ্রেণির হাতে তুলে দিতে চলেছে?

কৃশানুর প্রশ্নের উত্তর আছে কি বিজেপি নেতাদের কাছে?

Previous articleকৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডের হত্যায় অভিযুক্ত পুলিশের স্ত্রী চাইলেন বিবাহ বিচ্ছেদ
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ