আনলক ও করোনা-শহিদরা, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

ভারতবর্ষের স্বাস্থ্যমন্ত্রক সোমবার জানিয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা-শহিদ হয়েছেন ২০৬ জন৷ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৮৩ জন৷ সব মিলিয়ে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৬১১ জন৷ শহিদের সংখ্যা বেড়ে এখন ৭১৩৫। যত সময় যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি খারাপ থেকে অতি খারাপ হচ্ছে ভারতে৷

এরইমাঝে রবিবার সামনে এসেছে দিল্লি AIIMS-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়ার সতর্কবার্তা। তিনি বলেছেন, “সংক্রমণের শীর্ষস্তর এখনও ভারত পার করেনি। এখনও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে”। গুলেরিয়ার অভিমত, “সংক্রমণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ কোনও সুবিধা লকডাউন থেকে মেলেনি।”

দেশের পরিস্থিতি যখন এতখানি ভয়াবহ এবং আতঙ্কজনক, যখন গড়ে প্রতিদিন ৯০০০ মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, যখন গড়ে প্রতিদিন ২০০ ভারতবাসী ‘শহিদ’ হচ্ছেন,
ঠিক তখনই কেন্দ্র দেশে চালু করেছে ‘আনলক ০১’৷ একে একে সব কিছু খুলছে৷ যেটুকু বাকি ছিলো, তাও খুলে গেলো আজ সোমবার থেকে৷ এবার আক্রান্তের গড় ১৫ হাজার পৌঁছে যাবে, মৃত্যুহারও বাড়বে পাল্লা দিয়ে৷ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাশুল তো দিতে হবে এ দেশের মানুষকেই৷ ভেবে দেখা দরকার, সরকারি এই সিদ্ধান্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪-বি ধারায় বিচার্য কি’না !

আজ বা কাল, জবাব তো দিতেই হবে, যে কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন ঘোষণা করে ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চরম ব্যর্থ হয়েছে, সেই সরকার কোন আক্কেলে ভেবে বসেছে, ‘আনলক’ ঘোষণা করলে ভাইরাস পালানোর পথ পাবে না ? জানা নেই কোনও ‘ব্ল্যাক ম্যাজিক’- এ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধহস্ত কি’না?

আসলে আমাদের দেশের মতো প্রচারসর্বস্ব, লোক দেখানো যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা কোনও দেশই খেলছে না৷ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই খুবই বিজ্ঞানসম্মত অন্যান্য দেশে৷ এ দেশের মতো কাছাখোলা লকডাউন নয়, অসম্ভব কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে অন্যান্য দেশ৷ লকডাউনে দেশের প্রতিট মানুষ যাতে ঘরে থাকেন, বাইরে না বেরোন সে ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলো সবাই৷ দেশের মানুষকে মিথ্যা, মনগড়া ‘তথ্য’ জানানোর জন্য কোনও দেশেই কোনও আইটি সেল ছিলো না৷ ফড়ে, দালাল, স্তাবকদের প্রশাসনের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি৷
তার ফলও ওরা পেয়েছে হাতে নাতে ৷ ভারত-সহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যখন এখনও এই ভাইরাসের সামনে নতজানু, তখন কিন্তু করোনা শূন্য দেশগুলির তালিকায় ঢুকেছে নিউজিল্যান্ড -সহ একাধিক দেশ৷

ভারতবর্ষ এখনও সংক্রমণের শীর্ষস্তর পার করতে পারেনি। ওদিকে কেটে গিয়েছে তিনটে মাস৷ লকডাউনের নামে ছেলেখেলা হয়েছে৷ ভুল সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের সবপ্রান্তে দায়িত্ব নিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে তো প্রশাসনই ৷ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এখনও দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে ভারতের করোনা-মুক্ত হতে ৷ আর তার মধ্যেই দেশের সরকার ‘আনলক’ -এর পথে হাঁটলো !
সরকার কাদের চাপে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে, আজ বা কাল তা প্রকাশ্যে আসবেই৷ এক শতাংশ বেনিয়াকে বাঁচাতে, নিরানব্বই শতাংশ মানুষকে অসহায় বানানোর অধিকার কে কাকে দিয়েছে ?

ভারতবাসী আপাতত দর্শক৷ একের পর এক দেশ করোনা- মুক্তির ঘোষণা করবে, আর এ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক প্রতিদিন সকালে ঘোষণা করবে এদেশের কত লক্ষ করোনা আক্রান্ত হলেন৷ জানাবে, কত হাজার মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রের ভুল ও দিশাহীন পদক্ষেপে ‘করোনা- শহিদ’ হলেন ৷
শহিদের তালিকা দীর্ঘায়িত করার দায় কার ?

বিপর্যয় মোকাবিলার যুদ্ধে শুধুমাত্র আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা জানানোর তৎপরতা দেখাতে কোনও সরকার লাগেনা৷ আদৌ কোনও সরকার না থাকলেই বা আর কত ক্ষতিবৃদ্ধি হতো ?

Previous articleক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর কাছে ওষুধ পৌঁছে মানবিকতার নজির দিনহাটা থানার
Next articleকরোনা-আবহেই মোদির জন্য আসছে ৮ হাজার কোটির দু’টি নতুন বিমান