লকডাউনে অর্থনীতির বেহাল দশা ছিলই। তার উপরে আমফানে বিধ্বস্ত দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে দেখছি, পড়ছি, শুনছি। সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। কিন্তু নাগরিক হিসেবে, রাজ্যবাসী হিসেবে আমাদেরও কি কিছুটা দায় বর্তায় না এই দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর? এই ভাবনা নিয়েই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পৌঁছে গিয়েছিলাম মৌসুনি দ্বীপে। অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দ্বীপের পশ্চিমাঞ্চল। সেখানে গিয়ে আমরা সাধ্যমতো ত্রাণ সামগ্রী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি হতদরিদ্র মানুষগুলোর হাতে। আমার সঙ্গী ছিলেন পার্থ মণ্ডল, অনন্যা, সুদেষ্ণা ও পার্থ। এছাড়া ওখানকার স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ছিলেন। আর ছিল আসানসোলের একটি দল।

রবিবার সকালে কলকাতা থেকে গাড়িতে নামখানা। ওখান থেকে ফেরি, তারপরে টোটো করে সবাই পৌঁছে গিয়েছিলাম মৌসুনি আইল্যান্ডের পশ্চিম প্রান্ত বালিয়াড়া মৌজায়। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়েছিলাম ওই প্রান্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের বাস সেখানে। ৪০০ পরিবার যাতে ত্রাণ পেতে পারে সেরম একটা ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। ত্রাণ সামগ্রী এক জায়গায় জড়ো করে সুশৃংখল ভাবে সেগুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মুড়ি, বিস্কুট থেকে শুরু করে বেবি ফুড, চাল, ডাল, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন- যথাসাধ্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

করোনার থাবা এখনও সক্রিয়। তাই প্রতি মুহূর্তে আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কার কথা। সে কারণে নিজেরাও যেমন মাস্ক পরেছিলাম, তেমনই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতেও সাবান, মাস্ক তুলে দিয়েছি।
সব মিটিয়ে সাড়ে পাঁচটার সময় যখন ওই অঞ্চল থেকে চলে আসছি, সূর্য যখন পশ্চিমদিকে ঢলে পড়েছে। গোধূলির আলোয় উজ্জ্বল দিগন্ত। আর ত্রাণ-সামগ্রী হাতে পেয়ে হতদরিদ্র, বিধ্বস্ত মানুষগুলির মুখে তখন সেই আলোর প্রতিফলন আর হাসির উদয়। আর সেই হাসি আমাদের অনুপ্রেরণা দিল আবার এরকম প্রান্তিক মানুষদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার। মৌসুমী দ্বীপে নতুন পাতানো বন্ধুদের কথা দিলাম, আবার যাবো আমরা; এবার অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে। কারণ, লকডাউন আর আমফানের দাপটে আরও অনেক মানুষই যে বিপর্যস্ত। সাধ্যমতো তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারলে এই অসময়েও কিছুটা ভালো লাগা অনুভব করব।
