আমফানের তাণ্ডবে বালিয়াড়ায় নার্সারি স্কুল এখন শুধুই সাইনবোর্ড

পিয়াল গুহ বন্দ্যোপাধ্যায়

করোনা সংক্রমণ রুখতে সরকারি নির্দেশে স্কুলে যাওয়া বন্ধ লকডাউনের আগে থেকেই। তারপর এল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। তছনছ করে দিল সবকিছু। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বালিয়াড়ায় একটা স্কুল ছিল ওদের; ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি। সরকারি অনুদান ছিল না। পড়ুয়াদের মাসিক বেতনে চলত স্কুল। তাও অবশ্য নিয়মিত মিলত না। কিন্তু লেখাপড়া চলত। কেজি থ্রি পর্যন্ত বাচ্চারা পড়ত সেখানে। কিন্তু আমফানে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে শিক্ষার সেই আচ্ছাদন। কোনও রকমে দাঁড়িয়ে আছে দরমার বেড়াগুলি। দু একটা ছাদের টালি ইতিউতি বুঝিয়ে দিচ্ছে এককালে মাথার উপর ছাদ ছিল। ছিল একখানা বৈদ্যুতিক পাখা। ঝড়ের দাপটে পাখা মেলে সে কোথায় উড়ে গিয়েছে? তা জানা নেই কারও। একটা আলমারি ছিল। তারমধ্যে থাকত বই, খাতা এমনকী অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার। তাও নেই; হাজিরাও নেই, হাজিরা খাতাও নেই। আছে শুধু ছোটদের স্কুলের আসার অদম্য ইচ্ছা।

কিন্তু স্কুল কোথায়? কয়েকটি বাঁশের খুঁটির উপর একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু। আছে সাইনবোর্ড। ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টালের বালিয়াড়া মৌজায় ‘বালিয়ারা অভিমন্যু স্মৃতি নার্সারি কেজি স্কুল’-এর ইংরেজি শিক্ষিকা রাখি মাইতির অভিযোগ, আমফানের পর থেকে স্কুলের জন্য কোনও সাহায্য আসেনি। মেলেনি কোনও অনুদান। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যবে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর কথা বলুক না কেন ‘অভিমন্যু স্মৃতি নার্সারি কেজি স্কুল’ কবে থেকে চালু করা যাবে- তা নিয়ে সন্দিহান রাখি মাইতি।
কিন্তু ছোট ছোট পড়ুয়ারা- তারা তো স্কুলে ফিরতে চাইছে। এতদিন বাড়ি বসে থাকতে তাদের একটুও ভালো লাগছে না। তাই তারা দেখিয়ে দিল তাদের ক্লাসরুম, একটি হুক দেখিয়ে বলল, “এখানে পাখা ছিল”। সবই ছিল। তাদের শিক্ষা ছিল, হাজিরা খাতা ছিল, বইপত্র ছিল, মাথার উপর ছাউনি ছিল, গরমকালে পাখা ছিল। কিন্তু সবই আজ অতীতের খাতায়। বর্তমান শুধু কিছু বাঁশের খাঁচা আর ভবিষ্যৎ জানা নেই। কবে আসবে একটা সাহায্য? কবে আবার জালানো যাবে শিক্ষার প্রদীপ? এই পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন রাখি মাইতি। তাঁর আর্জি সরকার তাঁদের সাহায্য করুক। তাহলে আবার এই খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলটি চালাতে পারবেন তাঁরা।

Previous articleঅমিত শাহের ভার্চুয়াল সভা, কী বললেন তিনি?
Next articleকৃষ্ণাঙ্গ হত্যার জের, ট্রাম্পের পাশে নেই তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা