Monday, November 10, 2025

ফুটবলের “কালা পাহাড়” থেকে যেভাবে নেত্রীর প্রিয় “তমা” হয়ে উঠেছিলেন তমোনাশ

Date:

Share post:

প্রায় সাড়ে তিন দশকের রাজনৈতিক সম্পর্ককে কেড়ে নিয়েছে মারণ ভাইরাস করোনা। প্রথমদিন থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সাথী, তাঁর বহু লড়াই-আন্দোলনে সহযোদ্ধা তমোনাশ ঘোষ। আজ তিনি নেই। তবে রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি। আজ যা লোকমুখে ঘোরাফেরা করছে। ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্প শোনাচ্ছেন তাঁর পরিচিতরা।

তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য তমোনাশ ঘোষ ছিলেন আর পাঁচটা নেতার থেকে আলাদা। মিতভাষী তমোনাশ অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মতো নিজেকে কখনও জাহির করেননি। ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। ছিল না ঔদ্ধত্যপূর্ণ পূর্ণ আচরণ। টেলিভিশনের পর্দায় না থেকে রাজনীতির ঊর্ধে উঠে সকলের জন্য নীরবে কাজ করেছেন। জড়াননি কোনও বিতর্কে। সারদা-নারদা-রোজভ্যালি তাঁকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি। তবে দলীয় কোষাধ্যক্ষ হওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-ইডির জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু বাইরে এসে একটিও শব্দ উচ্চারণ করেননি। সুতরাং, তাঁর অকাল মৃত্যু শুধু তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস নয়, বঙ্গ রাজনীতির কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। যে কোনও দলের কাছেই সম্পদ তমোনাশ ঘোষের মতো ব্যক্তিত্ব।

তমোনাশ ঘোষ চিরকাইল মাটিতে পা রেখে চলতেন। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নিতেন। মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। যাকে বলে ডাউন টু আর্থ। আর সেই কারণেই বোধহয় ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী পেলেও তার কোনোদিন প্রয়োজন হয়নি তমোনাশের।

ছাত্রজীবনে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে একজন ভালো ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি ছিল লম্বা-সুঠাম চেহারার তমোনাশের। বড় চেহারার জন্য সেন্ট্রাল ডিফেন্স পজিশনে খেলতেন। বিভিন্ন ক্লাবে খেলে অনেক ট্রফি জেতার ইতিহাস আছে তাঁর। ফুটবলের রক্ষণ-এ তিনি এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, মাঠে তাঁকে সকলে “কালা পাহাড়” বলেই ডাকতেন।

হাজরা আশুতোষ কলেজে পড়াকালীন রাজনীতির আঙিনায় হাতেখড়ি তমোনাশের। সে সময় তিনি কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদে নাম লিখিয়ে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন। আবার থাকতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়াতেই। আজকের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সেই পথচলা শুরু। তখন থেকেই নেত্রীর কাছে প্রিয় “তমা” হয়ে উঠেছিলেন।

১৯৯৮ সালে ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার দিন থেকেই আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে দলের কোষাধ্যক্ষ-এর দায়িত্ব সামলেছেন তমোনাশ ঘোষ। এরপর ২০০১ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতা বিধানসভা থেকে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের জন্য বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। তবে ২০০৪ থেকে ২০০৮, এই চারবছর তৃণমূলের মহাবিপর্যয়ের মধ্যেও নেত্রীর হাত ছেড়ে যাননি তমা। এরই মধ্যে ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ঘনিষ্ঠ চন্দনা ঘোষ দস্তিদারের কাছে পরাজিত হতে হয়েছিল তমোনাশকে। কিন্তু মানসিকভাবে হেরে যাননি তিনি। ছেড়ে দেননি হাল।

এবার ২০১১ সাল ঐতিহাসিক বিধানসভা নির্বাচনে। বামেদের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের যুদ্ধে সিপিএমকে খড়কুটোর মতো উড়িয়ে দিয়ে সেই ফলতা থেকেই ফের নির্বাচিত হন তমোনাশ। তারপর আর কোনও নির্বাচনে বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। ফলতায় তাঁর রক্ষণে আঁচ পর্যন্ত লাগতে দেননি “কালা পাহাড়” তমোনাশ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-মাটি-মানুষের সরকারের মন্ত্রীসভায় জায়গা হয়নি তাঁর। মন্ত্রী না হওয়ার জন্য কোনও আক্ষেপ বা অভিমানও ছিল না নেত্রীর প্রিয় তমার মনে। যদিও তাঁর গুরুত্ব ও আনুগত্যকে কোনওদিন অস্বীকার করেননি মমতা। মন্ত্রী না করলেও দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন নিগমের চেয়ারম্যান করেছিলেন তিনি। দলীয় কোষাধ্যক্ষ, বিধায়কের পাশাপাশি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সেই পদেই আসীন ছিলেন নেত্রীর প্রিয় “তমা”।

spot_img

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...