আর পাঁচজন মহিলার মতোই দেহের গঠন তাঁর। বাহ্যিক দিক থেকে তিনি একজন সম্পূর্ণ নারী। কিন্তু চিকিৎসা করাতে এসেই হঠাৎ বদলে গেল তাঁর পরিচয়। জানতে পারলেন তিনি একজন পুরুষ!
বীরভূমের বাসিন্দা বছর তিরিশের ওই মহিলা প্রচন্ড পেটে ব্যথার চিকিৎসা করাতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন স্বামীর সঙ্গে। মহিলার পেটে ব্যথার চিকিৎসা করতে গিয়ে য়ে রোগ আবিষ্কার করলেন চিকিৎসকরা, তা ২২ হাজার জনের মধ্যে একজনের হয়। চিকিৎসায় ধরা পড়ে তিনি মহিলাই নন, আদপে তিনি পুরুষ! টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি।
টেস্টিকুলার ক্যান্সার পুরুষদের যৌনাঙ্গের ক্যান্সারের একটি প্রকার। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এই ধরণের ক্যান্সার মহিলাদের হওয়া সম্ভব নয়, শারীরিকগত ভাবেই। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই আলাদা। চিকিৎসক অনুপম দত্ত ও সৌমেন দাস দেখেন ওই মহিলার শারীরিক পরিচয় বিপরীত লিঙ্গের।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ওই মহিলা অ্যান্ড্রোজেন ইনসেনসিটিভিটি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এই ধরণের রোগে আপাত দৃষ্টিতে কোনও মহিলার মধ্যে সমস্যা ধরা পড়ে না। তবে তাঁদের কখনও জরায়ু বা ডিম্বাশয় তৈরিই হবে না। জন্ম থেকেই এই
দুটি অঙ্গ ওই মহিলার শরীরে থাকবে না। ফলে মাতৃত্বের সম্ভাবনা একেবারেই নেই তাঁর মধ্যে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষানিরীক্ষার পর পেটে ব্যথার কারণ স্পষ্ট হয় চিকিৎসকদের কাছে। দেখা যায় তাঁর শরীরে ছোট থেকেই তৈরি হয়েছে টেস্টিক্যালস, যা মূলত পুরুষদের শরীরে থাকে ও শুক্রাণু তৈরি করে। বায়োপসি রিপোর্টেই এই তথ্য ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা জানান ডাক্তারি পরিভাষায় এর আরেক নাম সেমিনোমা। এই টেস্টিক্যালস গড়ে ওঠার ফলে ওই মহিলার শরীরে কখনও নারী শরীরের হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরিই হয়নি। শরীরে ভিতরে এই জটিলতা থাকার ফলেই সম্পূর্ণ নারী তিনি হয়ে উঠতে পারেননি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিরল এই রোগ সাধারণত জিনঘটিত সমস্যার জন্য হয়। পরে জানা গিয়েছে ওই মহিলার পরিবারের দুই আত্মীয়ারও এই সমস্যা ছিল। ওই মহিলার বোনেরও একই সিনড্রোম ধরা পড়েছে।

বীরভূমের ওই মহিলার আপাতত চিকিৎসা চলছে। কেমোথেরাপির জেরে কিছুটা সুস্থ রয়েছেন তিনি।