Tuesday, December 16, 2025

অপরাজিতা সেন

প্রবল করোনা সংক্রমণ।
আবার নতুন করে বহু এলাকায় কড়াকড়ি।
করোনা আক্রমণ ও মৃত্যু কেমন যেন কাছাকাছি চেনাশোনাদের বৃত্তেও এসে পড়ছে।

আসলে আমরা অতিপাকা, অতিচালাক এবং অতিরাজনীতির ভক্ত।
আমাদের ফাজলামির কারণে আজ বিপদটা ঘরে ঢুকছে।

কথায় কথায় অন্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করে লাভ নেই।
আজ বিপদটা আমরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি।
হয়ত সুস্থ হওয়ার হার ভালো, কিন্তু, সংক্রমণ আর তার পরের হয়রানিটা বিরক্তিকর।

প্রথম থেকে আমরা সতর্ক হইনি।
প্রথমে শুনেছি এটা সিরিয়াস নয়। দিল্লির দাঙ্গা থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল।
তারপর আমরা বলে বেড়িয়েছি লকডাউনে কিসসু হয় না।
তারপর আমরা জ্ঞান দিতে ব্যস্ত ছিলাম কেন আগে হয়নি।
তারপর আমরা মুসলিম এলাকায় বলতে লাগলাম লকডাউন কেন্দ্র করতে বলেছে। আমরা করিনি। কী করব বলুন?
আমরা ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরিদের ছবি ছাপতে লাগলাম জনগণের টাকায়।
আমরা কোমরবিডিটি আলাদা করে মানুষের ভয়টাই কমিয়ে দিলাম।
আমরা লোকের ঘাড়ে উঠে রোজ বাজার করলাম, রাস্তায় আড্ডা মারলাম।
আমরা করোনা ইস্যুটা ফাজলামি আর রাজনীতিতে নিয়ে গেলাম।

আমরা বললাম, কই, আমাদের রাজ্য থেকে তো পরিযায়ী শ্রমিক ফিরছে না। অন্য রাজ্য থেকে আমাদের রাজ্যে ঢুকছে কেন?

হায় রে! আমরা ভাবলাম না কয়েক দশকের নেতিবাচক রাজনীতিতে আমাদের লোকেরাই অন্য রাজ্যের শিল্প এলাকায় যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা ফিরছে। এখানে শিল্পতালুক কই যে অন্য রাজ্য থেকে ঢালাও এসে কাজ করে?

আমরা হাত ধোয়া শেখাতে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। আবার হাতে হাত লাগার সব আয়োজন করে দিয়েছি।

কিছু এলাকা দেখে গোড়াতে মনেই হয়নি লকডাউন চলছে।
কী ভাষা। মোদির লকডাউন মানি না।
অথচ জোরে বলার কেউ নেই যে দেশটা মোদির কেনা নয়। আপনার ভালো আপনি বুঝুন। পুলিশ এলাকাবিশেষে নীরব।
সকালে বাজারহাটে পিকনিকের আমেজ।

যাঁরা প্রথম থেকে কড়াভাবে মানলেন লকডাউন, তাঁদের স্বেচ্ছাবন্দিত্ব কার্যত ব্যর্থ করে দিল অন্য অংশের বেপরোয়া বিশৃঙ্খলা।

সরকার আর ডাক্তারবাবুরা নিয়ম বলতে পারেন।
আমরা না মানলে কে কী করবে!

সংক্রমণ বাড়ছে।
দিল্লি, মুম্বাইয়ের মত আমাদের রাজ্যে অত বহিরাগত, যাতায়াত নেই।
তবুও বাড়ছে।

রাজ্য সরকার লড়ছে। তবে যথাযথ লড়াইটা শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। তার আগে অনেকে ফুটেজ খেয়ে গেল। বিশ্ব পরামর্শদাতা কমিটির ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরিদের কাছ থেকে সরকারি টাকায় ওদের শ্রীমুখের ছবি ছাপার টাকা ফেরত নেওয়া হোক।

বামজমানা থেকেই চলছে, নেতা, মন্ত্রী বড়লোকদের জন্য বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল আছে। আমজনতার জন্য সরকারি হাসপাতাল, মোবাইলে যার ছবি ছড়ালে মোবাইলই নিষিদ্ধ হয়ে যায়!

রাজ্য সরকার এখন মরিয়া চেষ্টা করছে উপযুক্ত সব পদক্ষেপের।
বিপদটা বিশ্বের। এর সঙ্গে সরকারের ব্যর্থতার সম্পর্ক নেই। প্রথম থেকে এই সহজ বাক্যটা মনে রাখলে বিতর্ক কম হত। এই যে এখনও সুরক্ষার মত ল্যাবকে কোভিড টেস্ট বারণ নিয়ে জল্পনা ছড়াচ্ছে, এটাও কিন্তু নেতিবাচক।
আর, এতদিনে,এখন অন্তত আমরা, জনগণ, পুরো মেনে চলি। কাজ করতে হবে। তবে সতর্কতা নিয়ে। আপনি মানলেন। আমি মানলাম না। লাভ কীসের?

আবার এতদিন পরেও অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে সমস্যা। আমরা প্রথম থেকে ফাজলামি করেছি। এখন দরকারের সময় ভিড় বাস আর বাড়তি ভাড়ার চাপ। এখন কিছু না কিছু কাজে ফেরার আর্থিক তাগিদ।

এটা থাকবে।
কাজ শুরু করতেও হবে।
তবে সতর্কতার বিধি মেনে।
পুলিশ দয়া করে সব এলাকায় সমানভাবে কড়া হোক। দুধেল গরু বা দুধহীন ষাঁড়, বৈষম্য করে আর ক্ষতি বাড়াবেন না। সব জায়গায় কড়াকড়ি থাকুক।
অন্যথায়, অগাস্ট মাস কিন্তু কাঁদিয়ে ছাড়বে।

 

Related articles

মোটা অঙ্কের বাজেট নিয়ে মিনি নিলামে নামছে কেকেআর, দল পেতে পারেন ঈশ্বরণ

মঙ্গলবার আবুধাবিতে ২০২৬ সালের আইপিএলের মিনি নিলাম(IPL Mini Auction)। ৭৭টি জায়গার জন্য নিলামে উঠবেন ৩৫০ ক্রিকেটার। এই ৩৫০...

বাংলা না কি জ্বলছে! গদি মিডিয়ার অপপ্রচারকে ধুয়ে দিলেন সাধু থেকে আমজনতা

বাংলা না কি জ্বলছে! এখানে খুন-জখমের রাজনীতি চলছে! আক্রান্ত হিন্দু! গদি মিডিয়া এই খবর করতে এসেছিল কলকাতায় আর...

রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা! কেন্দ্রের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে লোকসভায় সোচ্চার তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে বাগে আনতে না পেরে এবার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো লঙ্ঘন করে...

মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা! রাজ্যসভায় বিজেপির পর্দাফাঁস সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের

পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মতুয়াকে ভুল বুঝিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করছে মোদি সরকার ও বিজেপি—এমনই অভিযোগ তুলে সোমবার...
Exit mobile version