Saturday, August 23, 2025

সতীর্থ বিজয়নের ইস্তফা দাবি কংগ্রেসের, কী করবেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

দু’দলের কোনওটাই আঞ্চলিক দল নয়৷ দু’দলেই জাতীয়স্তরের নীতিনির্ধারক বাহিনী আছে৷ দেশজুড়ে দলের চলার পথ কেমন হবে, কোন দল বন্ধু হবে, কারা শত্রু হবে, এ সবই তারা স্থির করে৷ ভোটপ্রাপ্তি ইদানিং তলানিতে ঠেকলেও কংগ্রেস এবং সিপিএম এখনও জাতীয় দল৷ ফলে দুই দলের রাজ্য শাখার পক্ষে দলের শীর্ষস্তরের অনুমোদন ছাড়া তেমন বড় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়৷

এ রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএম ইদানিং যে হাত ধরাধরি করে কঠিন রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করছে, দুই দলের জাতীয়স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই কাজ তারা করতেই পারতো না৷ তাই এটা ধরেই নেওয়া যায়, দু’দলই, তাদের নতুন বন্ধুর সঙ্গে সখ্য মজবুত করতে যতখানি আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতে এআইসিসি এবং পলিট ব্যুরো বা সিসি’র সম্মতি আছে৷ রাজ্যে দুই দলই এখন নিজেদের চরম অস্তিত্ব-সংকট থেকে রক্ষা পেতে অন্য দলটিকেই ‘ক্রাচ’ হিসাবে ব্যবহার করছে৷ এরা বিধানভবনে গিয়ে বিধানচন্দ্র রায় কতখানি “গনতন্ত্রপ্রিয় তথা বিরোধী দলগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন”, তা বলছেন৷ আবার ওরা আলিমুদ্দিনে গিয়ে জানিয়ে আসছেন, “জ্যোতি বসুই জোট-রাজনীতির জনক৷ তাঁর দেখানো পথ ধরেই আজ দুই দল হাতে হাত ধরে ‘সহচরী’ হয়েছে৷ ” আপাতত বাংলায় এমনই খাদহীন হনিমুন পর্ব চলছে৷ দু’দলের শীর্ষমহলও বেশ খুশি৷

কিন্তু এই প্রেম আদৌ নেই কেরলে৷ ওই রাজ্যে কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারেনা৷ কেরলে সদাসর্বদা এ ওর মুণ্ডপাত করেই চলেছে৷ এসবও দু’দলের শীর্ষস্তর জানে৷ এই ইস্যুতে হাই-কম্যাণ্ড বা পলিট ব্যুরোর সদা-অস্পষ্ট ব্যাখ্যা একেবারেই ‘কনভিন্সিং’ নয়৷ তবুও ঠেকা মেরে চলছিলো৷ কারন, তেমন বড়-সড় কোনও স্বার্থের সংঘাত ঘটছিলো না৷

কিন্তু এবার কী হবে ?

শুক্রবার সিপিএমের সবেধন নীলমনি, দেশের একমাত্র ‘লাল’ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের একেবারে পদত্যাগ দাবি করে বসেছে কংগ্রেস৷
“সোনা পাচার মামলায় সরাসরি যুক্ত আছেন
পিনারাই বিজয়ন”, এই অপরাধে তাঁকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে, জোরালো এমন দাবিই তুলেছে কংগ্রেস৷

ওদিকে, কঠোর UAPA আইনে অভিযোগ দায়ের করে শুক্রবার থেকেই NIA সোনা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করেছে৷ এটা নিশ্চিত, NIA তদন্তকারী দল জেরা করবে বিজয়নকেও৷ সোনা-পাচারের এই চাঞ্চল্যকর তথা গুরুতর অভিযোগের তদন্তভার গত বৃহস্পতিবারই NIA-এর হাতে তুলে দিয়েছে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

এই ইস্যুতে পুরো ফাটা বাঁশে আটকে যাচ্ছে কংগ্রেস৷ বিজেপির “আগ্রাসী তথা প্রতিহিংসাপরায়ণ” রাজনীতির শিকার হতে চলেছেন কেরলের দাপুটে বিজেপি-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী, অথচ কেরল-কংগ্রেস এই ইস্যুতে কেন্দ্রের ঘোষিত সিদ্ধান্তেই সহমত প্রকাশ করে বিজয়নের ইস্তফা চাইছে৷ শুধুই নাম-কে -ওয়াস্তে বিজয়নের ইস্তফা দাবি করা নয়, শুক্রবার কেরলজুড়ে পথে নেমে কংগ্রেস, যুব কংগ্রেস, যুব লিগ ও যুব মোর্চা বিজয়নের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখিয়েছে৷ কোঝিকোড়, কোচি, কান্নুরে তো এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পুলিশকে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়৷ এর ফলে কংগ্রেসের ক্ষোভ আরও শতগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কংগ্রেসের দাবি খুবই ছোট, যেহেতু CMO-র নাম জড়িয়েছে এই মামলায়, তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজয়নকে পদত্যাগ করতে হবে৷

এই পরিস্থিতিতে কী করবে রাজ্যের কংগ্রেস – বাম জোট ?

একটি পথ তো সব সময়ই খোলা৷ গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা৷ এমন একটা ভাব করা যেন কেরল রাজ্যটি বিদেশের৷ সেখানে কী হয়েছে, তাতে আমাদের কী, এই ভাব দেখিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট চালিয়ে যাওয়া৷

কিন্তু এবার তো সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে জঙ্গি বিক্ষোভে নেমেছে কংগ্রেস৷ বিজেপি’র সুরে সুর মিলিয়ে দলের পলিট ব্যুরোয় তাঁর সতীর্থ বিজয়নের ইস্তফা যারা চাইছে, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে এখনও প্রেমপর্ব চালাবেন সূর্যকান্ত মিশ্র ?
এমনিতেই তো দু’দলের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে, তার উপর ভুলভাল বুঝিয়ে বিজয়ন-ইস্যু এড়িয়ে গেলে, দু’দলের হাতে পেন্সিল ছাড়া কিছুই থাকবে না৷

আর কংগ্রেস তো জোটের সমর্থনে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানাতেই পারে কেরল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা রমেশ চেন্নিথালাকে৷ বহুবার এ রাজ্যে এসেছেন, সভা করেছেন৷ ছাত্র রাজনীতির কাল থেকেই চিনি চেন্নিথালাকে৷ স্পষ্টবক্তা৷ সিপিএম সম্পর্কে তাঁর ধারনা
রাজ্যভিত্তিক নয়৷ চেন্নিথালাকে দিয়ে জোটের সমর্থনে একটা সভা করাতেই পারে প্রদেশ কংগ্রেস, নিদেনপক্ষে ভার্চুয়াল সভাই হোক৷

spot_img

Related articles

আর জি কর মামলা: সুদীপ্ত রায়ের বাড়িতে CBI তল্লাশি

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (R G Kar Madical College And Hospital) আর্থিক নয়ছয়ের তদন্তে শ্রীরামপুরের তৃণমূল...

বাংলার ‘ফাইল’ খুলতে এসে খুলে গেল বিবেকের জ্ঞান: জানেন না অবনীন্দ্রনাথের নাম!

তাঁর যত কাজ সবই বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলিকে টার্গেট করে। রাজ্যগুলিকে বদনাম করতে বিজেপির তালিমে তিনি পারদর্শী হয়েছেন যথেষ্ট।...

ক্ষমা চাইলেন ‘ধূমকেতু’ পরিচালক, নচিকেতাকে খোলা চিঠি কৌশিকের

'ধূমকেতু' (Dhumketu)সাফল্য উপভোগের মাঝেই হঠাৎ করে নিজের করা কাজের জন্য ক্ষমা চাইলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (Kaushik Ganguly)। 'স্মৃতি...

মোলিনার কোচিংয়ে খেলার জন্যই মোহনবাগানে মেহতাব সিং

ক্লাবের নাম মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট(MBSG) এবং যার কোচ হোসে মোলিনা (Jose Molina)। এই দুটো নামের জন্যই কলকাতার বাকি ক্লাবকে...