সতীর্থ বিজয়নের ইস্তফা দাবি কংগ্রেসের, কী করবেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

দু’দলের কোনওটাই আঞ্চলিক দল নয়৷ দু’দলেই জাতীয়স্তরের নীতিনির্ধারক বাহিনী আছে৷ দেশজুড়ে দলের চলার পথ কেমন হবে, কোন দল বন্ধু হবে, কারা শত্রু হবে, এ সবই তারা স্থির করে৷ ভোটপ্রাপ্তি ইদানিং তলানিতে ঠেকলেও কংগ্রেস এবং সিপিএম এখনও জাতীয় দল৷ ফলে দুই দলের রাজ্য শাখার পক্ষে দলের শীর্ষস্তরের অনুমোদন ছাড়া তেমন বড় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়৷

এ রাজ্যের কংগ্রেস এবং সিপিএম ইদানিং যে হাত ধরাধরি করে কঠিন রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করছে, দুই দলের জাতীয়স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই কাজ তারা করতেই পারতো না৷ তাই এটা ধরেই নেওয়া যায়, দু’দলই, তাদের নতুন বন্ধুর সঙ্গে সখ্য মজবুত করতে যতখানি আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতে এআইসিসি এবং পলিট ব্যুরো বা সিসি’র সম্মতি আছে৷ রাজ্যে দুই দলই এখন নিজেদের চরম অস্তিত্ব-সংকট থেকে রক্ষা পেতে অন্য দলটিকেই ‘ক্রাচ’ হিসাবে ব্যবহার করছে৷ এরা বিধানভবনে গিয়ে বিধানচন্দ্র রায় কতখানি “গনতন্ত্রপ্রিয় তথা বিরোধী দলগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন”, তা বলছেন৷ আবার ওরা আলিমুদ্দিনে গিয়ে জানিয়ে আসছেন, “জ্যোতি বসুই জোট-রাজনীতির জনক৷ তাঁর দেখানো পথ ধরেই আজ দুই দল হাতে হাত ধরে ‘সহচরী’ হয়েছে৷ ” আপাতত বাংলায় এমনই খাদহীন হনিমুন পর্ব চলছে৷ দু’দলের শীর্ষমহলও বেশ খুশি৷

কিন্তু এই প্রেম আদৌ নেই কেরলে৷ ওই রাজ্যে কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারেনা৷ কেরলে সদাসর্বদা এ ওর মুণ্ডপাত করেই চলেছে৷ এসবও দু’দলের শীর্ষস্তর জানে৷ এই ইস্যুতে হাই-কম্যাণ্ড বা পলিট ব্যুরোর সদা-অস্পষ্ট ব্যাখ্যা একেবারেই ‘কনভিন্সিং’ নয়৷ তবুও ঠেকা মেরে চলছিলো৷ কারন, তেমন বড়-সড় কোনও স্বার্থের সংঘাত ঘটছিলো না৷

কিন্তু এবার কী হবে ?

শুক্রবার সিপিএমের সবেধন নীলমনি, দেশের একমাত্র ‘লাল’ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের একেবারে পদত্যাগ দাবি করে বসেছে কংগ্রেস৷
“সোনা পাচার মামলায় সরাসরি যুক্ত আছেন
পিনারাই বিজয়ন”, এই অপরাধে তাঁকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে, জোরালো এমন দাবিই তুলেছে কংগ্রেস৷

ওদিকে, কঠোর UAPA আইনে অভিযোগ দায়ের করে শুক্রবার থেকেই NIA সোনা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করেছে৷ এটা নিশ্চিত, NIA তদন্তকারী দল জেরা করবে বিজয়নকেও৷ সোনা-পাচারের এই চাঞ্চল্যকর তথা গুরুতর অভিযোগের তদন্তভার গত বৃহস্পতিবারই NIA-এর হাতে তুলে দিয়েছে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

এই ইস্যুতে পুরো ফাটা বাঁশে আটকে যাচ্ছে কংগ্রেস৷ বিজেপির “আগ্রাসী তথা প্রতিহিংসাপরায়ণ” রাজনীতির শিকার হতে চলেছেন কেরলের দাপুটে বিজেপি-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী, অথচ কেরল-কংগ্রেস এই ইস্যুতে কেন্দ্রের ঘোষিত সিদ্ধান্তেই সহমত প্রকাশ করে বিজয়নের ইস্তফা চাইছে৷ শুধুই নাম-কে -ওয়াস্তে বিজয়নের ইস্তফা দাবি করা নয়, শুক্রবার কেরলজুড়ে পথে নেমে কংগ্রেস, যুব কংগ্রেস, যুব লিগ ও যুব মোর্চা বিজয়নের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত দেখিয়েছে৷ কোঝিকোড়, কোচি, কান্নুরে তো এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পুলিশকে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয়৷ এর ফলে কংগ্রেসের ক্ষোভ আরও শতগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কংগ্রেসের দাবি খুবই ছোট, যেহেতু CMO-র নাম জড়িয়েছে এই মামলায়, তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিজয়নকে পদত্যাগ করতে হবে৷

এই পরিস্থিতিতে কী করবে রাজ্যের কংগ্রেস – বাম জোট ?

একটি পথ তো সব সময়ই খোলা৷ গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা৷ এমন একটা ভাব করা যেন কেরল রাজ্যটি বিদেশের৷ সেখানে কী হয়েছে, তাতে আমাদের কী, এই ভাব দেখিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট চালিয়ে যাওয়া৷

কিন্তু এবার তো সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করে জঙ্গি বিক্ষোভে নেমেছে কংগ্রেস৷ বিজেপি’র সুরে সুর মিলিয়ে দলের পলিট ব্যুরোয় তাঁর সতীর্থ বিজয়নের ইস্তফা যারা চাইছে, সেই কংগ্রেসের সঙ্গে এখনও প্রেমপর্ব চালাবেন সূর্যকান্ত মিশ্র ?
এমনিতেই তো দু’দলের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে, তার উপর ভুলভাল বুঝিয়ে বিজয়ন-ইস্যু এড়িয়ে গেলে, দু’দলের হাতে পেন্সিল ছাড়া কিছুই থাকবে না৷

আর কংগ্রেস তো জোটের সমর্থনে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানাতেই পারে কেরল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা রমেশ চেন্নিথালাকে৷ বহুবার এ রাজ্যে এসেছেন, সভা করেছেন৷ ছাত্র রাজনীতির কাল থেকেই চিনি চেন্নিথালাকে৷ স্পষ্টবক্তা৷ সিপিএম সম্পর্কে তাঁর ধারনা
রাজ্যভিত্তিক নয়৷ চেন্নিথালাকে দিয়ে জোটের সমর্থনে একটা সভা করাতেই পারে প্রদেশ কংগ্রেস, নিদেনপক্ষে ভার্চুয়াল সভাই হোক৷

Previous articleমহামারির মোকাবিলায় কমানো হলো রেপো রেট : আরবিআই গভর্নর
Next articleটিটাগড়ে পরপর ৫টি গুলিতে ঝাঁঝরা কলেজ ছাত্র, ধৃত দুই কুখ্যাত সমাজবিরোধী