কম্পিউটার হ্যাক করা থেকে খুনের হুমকি। কিছুই বাদ দেয়নি চিন সরকারের পোষা গুণ্ডারা। বিশ্ব মহামারি নিয়ে চিনের চক্রান্তের গোপন তথ্য ফাঁস করতে আমেরিকায় পালিয়ে এসেছেন হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট লি মেং ইয়ান। তাঁর অভিযোগ, আজ এই ভয়ঙ্কর বিশ্ব মহামারির পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী চিন। ওরা আগে থেকে সব জানত। ইচ্ছে করে গোটা দুনিয়ার কাছে তথ্য চেপে গিয়েছিল। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া মারণ ভাইরাসের বিপদ সম্পর্ক সময়মত কিছুই জানায়নি। উল্টে, চিনের যেসব চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ভাইরাসের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের ভয় দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, হেনস্থা করে মুখবন্ধ করে দিয়েছিল শি জিনপিং প্রশাসন। খুনের হুমকি পাওয়ার পর নিজের কাছে থাকা সব প্রমাণ নিয়ে মার্কিন মুলুকে পালিয়ে এসে এভাবেই চিনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন হংকংয়ের ভাইরোলজিস্ট লি। তিনি বলেন, গত বছর ডিসেম্বরের আগেই চিনে সার্স-১ এর মত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাসের চরিত্র ছিল সার্সের থেকে আলাদা, আরও সংক্রামক। হংকং স্কুল অব পাবলিক হেলথের ভাইরোলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ লি জানিয়েছেন, তাঁর গবেষণা ভাইরাস নিয়েই। মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সার্স ভাইরাস নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি। লি মেং ইয়ান বলেন, উহান থেকে সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলাম আমি। হংকংয়ের বিশেষ বায়োসেফটি ল্যাবে এই নতুন ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। তখনই বোঝা গিয়েছিল যে, এই ভাইরাল স্ট্রেন অনেক বেশি প্রাণঘাতী। ভাইরাস মোকাবিলার পথ খোঁজা শুরুর সময়ই তাঁর কাছে হুমকি ফোন আসতে থাকে বলে জানিয়েছেন লি। তাঁর কম্পিউটারও হ্যাক করা হয়। ব্যক্তিগত তথ্যেও নজরদারি শুরু হয়।

লি জানান, চিনের সরকারি আধিকারিকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানিয়েছিল ইনফ্লুয়েঞ্জার মত ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। কিন্তু নতুন এই ভাইরাসের সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন সার্স-কভ-২ এর কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিল তারা। ফলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিপদ সম্পর্কে চিনের বাইরের দুনিয়া তখন আন্দাজও করতে পারেনি, সতর্ক থাকারও সুযোগ পায়নি। লি জানান, মহামারির বিপর্যয় সম্পর্কে আগাম অনুমান করতে পারলেও চিনে দাঁড়িয়ে একথা বললে তাঁকে খুন হয়ে যেতে হত। কারণ চিন সরকার এই সংক্রান্ত তথ্য চেপে রাখতে অসম্ভব গোপনীয়তার পথ নিয়েছিল। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গত ২৮ এপ্রিল লি হংকং থেকে ফ্লাইট ধরে আমেরিকায় পালিয়ে আসেন। সঙ্গে নিজের গবেষণার রিপোর্ট, ল্যাবের গোপন ক্যামেরা ও সেন্সরও নিয়ে যান। লি-র কথায়, আমার জীবন এখনও সঙ্কটে। হংকংয়ে নিজের বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। আমেরিকায় পালিয়ে এসেছি দুনিয়ার কাছে শুধু এই সত্যিটা বলার জন্য।
