Thursday, May 15, 2025

মরুঝড়ের কারণ গেহলট-পুত্র ? কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

মরুরাজ্য রাজস্থানের শাসক কংগ্রেসের এক এবং দু’নম্বর নেতা, অশোক গেহলট ও শচীন পাইলটের মধ্যে এই বিরোধের কারন কী শুধুই বিতর্কিত সেই পুলিশ-নোটিস ?

একদমই নয়৷

নিজের ছেলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতেই অশোক গেহলট ‘টোপ’ সাজিয়েছিলেন যাতে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে ওঠেন শচীন পাইলট৷ বয়স বা অভিজ্ঞতা কম থাকার কারনেই সম্ভবত সেই ফাঁদে ধরা পড়ে গিয়েছেন পাইলট৷

আসলে, অনেকদূর পর্যন্ত ভেবে রেখেছেন চোস্ত রাজনীতিক গেহলট৷ এমন ছক সাজিয়েছেন, যাতে দলের হাই কম্যাণ্ড তথা সাধারণ মানুষের কাছে শচীন পাইলটকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদলোভী’ বানানো যায়, যাতে ‘বিজেপি’র এজেন্ট’ বানানো যায়৷ সেই পরিকল্পনায় অনেকটাই সফল হয়েছেন গেহলট৷ তবে এখন তিনি নিজেও নিশ্চিত নন, তাঁর সরকার আদৌ রক্ষা করা যাবে কি’না৷ তবে যদি রাজস্থানে মাঝপথেই ভেঙ্গে যায় কংগ্রেস সরকার, একথা এখনই বলা যায়, সেক্ষেত্রে তার জন্য দায়ি থাকবেন কংগ্রেস হাই-কম্যাণ্ড, আরও স্পষ্টভাবে বললে, গান্ধী- পরিবার এবং অশোক গেহলট৷ গেহলটের আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রাখা তাসের খবর হাই কম্যাণ্ড জানতো না, এটা হতেই পারেনা৷ প্রশ্ন, সব জেনে বুঝেও হাই কম্যাণ্ড হারাকিরি-র পথ বেছে নিলো কিসের স্বার্থে ?

গেহলটের লুকিয়ে রাখা তাসের নাম বৈভব গেহলট, বাবার নাম অশোক গেহলট৷ যে কোনও ভাবে বৈভব-কে রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে নেমে পড়েন বাবা৷ রাজস্থানের কংগ্রেস রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত বৈভবের পারফরম্যান্স কী ? বাবা-র ভোটের সময় নির্বাচনী কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করতেন৷ তারপর ২০১৪ সালে পাইলট রাজস্থান কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর গেহলটের সুপারিশে বৈভব রাজ্য কংগ্রেসের সম্পাদক হন৷ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে বৈভব গেহলট কার- রেন্টালের বড় ব্যবসা করতেন৷ এখনও তা চালু আছে এবং আরও বড় হয়েছে৷ বাবার সঙ্গে দিল্লি যাতায়াত করে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে ফেলেন৷ এমনই চাইছিলেন সিনিয়র গেহলট৷ আর সেই ‘কানেকশন’কে কাজে লাগিয়ে অশোক গেহলট সফল হন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বৈভব গেহলটকে যোধপুর কেন্দ্রে দলের প্রার্থী করতে৷ রাহুল গান্ধী নিজে এই নামে সিলমোহর লাগান৷ পরাজিত হন বৈভব প্রায় পৌনে ৩ লক্ষ ভোটে৷ এরপর অশোক গেহলট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেন৷ বৈভব হয়ে গেলেন রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ৷ ২০২০ সালে রাজস্থানের রাজ্যসভা আসনে প্রার্থী হিসাবে একবার বৈভবের নাম উঠেছিলো৷ এআইসিসি নেতা কে সি ভেনুগোপাল প্রার্থী হওয়ায় বৈভব বাদ পড়েন৷ মোট ৩ আসনের ভোটে ২টি লাভ করে কংগ্রেস ৷ এই হচ্ছে বৈভবের পলিটিক্যাল গ্রাফ৷

বৈভবকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া অশোক গেহলট৷ এর কারনও আছে৷
মুখ্যমন্ত্রী ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মাঠ তৈরি করতে শুরু করেছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। গেহলট বুঝেছেন, কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ড ২০১৮ সালে পাইলটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করেছে বটে, কিন্তু ২০২৩ সালের পর এই তরুণ নেতাকে আটকানো মুশকিল৷ তখন গেহলটের বয়স হবে ৭৪, ওই বয়সে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ সুতরাং এর মধ্যেই বৈভবকে ‘তৈরি’ করতে হবে৷ কিন্তু শচীন পাইলট কংগ্রেসে থাকলে বৈভবের “উন্নতি” অসম্ভব৷ তাই অন্য খেলা শুরু হলো৷ মুখ্যমন্ত্রী সরকারি প্রতিটি কাজে সরাসরি উপেক্ষা শুরু করলেন উপ- মুখ্যমন্ত্রীকে৷ মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ডেপুটির মধ্যে ‘শত্রুতা’ একটু একটু করে প্রকাশ্যে চলে আসে৷ কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এক ঘটনার কথা সবাই জানে৷ রাজস্থানের সব জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের এক ভিডিও- কনফারেন্সে, যখন মুখ্যসচিব গেহলটকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রীকে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন কিনা, তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আরে ছোদো” (ভুলে যান)। ঘটনচক্রে পাইলটও ওই ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি ওই মন্তব্যও শুনতে পান। পাইলটের হাতে থাকা পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের কাজেও সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু করেন গেহলট৷ আসলে গেহলট এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছিলেন, যাতে পাইলট নিজেই ইস্তফা দেন৷ একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে রটানো শুরু হয়, গেহলট সরকার ফেলে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হতে পাইলট চক্রান্ত শুরু করেছে৷ দিল্লিকে বোঝানো হয়, শচীন বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পাইলটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছার কথা সবাই জানে৷ তাই দিল্লিও গেহলটের কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়নি৷ তাই সোনিয়া-রাহুল কথাই বলেননি শচীনের সঙ্গে৷ আসলে গেহলট’ই তার ডেপুটি এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে ‘মুক্তি’ দেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্থান রাজনীতিতে এই সংকটের সূত্রপাত ঘটিয়েছেন।
তাঁকে রাজনৈতিকভাবে শেষ করার গেহলটের দীর্ঘমেয়াদী গেম-প্ল্যান দুর্ভাগ্যবশত শচীন পাইলট পড়তে পারেননি৷ যখন বুঝেছেন, তখন থেকেই এ সব কথা বলতে চেয়েছিলেন সোনিয়া- রাহুলকে৷ কিন্তু পারেননি৷ দু’জনের কেউই সময় দেননি৷ শোনা যাচ্ছে, সোনিয়া গান্ধী নাকি দলের নেতাদের বলেছিলেন, শচীনকে দাবি মতো মুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়া সম্ভব নয়। তবে তাঁকে দলে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আরও শোনা যাচ্ছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নাকি ফোন করেছিলেন পাইলটকে আর রাহুল গান্ধী নিজে ফোন করেছিলেন কি না, তা আদৌ স্পষ্ট নয়।

এদিকে বুধবার সকালেই হাই কম্যাণ্ড এবং অশোক গেহলটের ‘তথ্যে’ আপাতত ঠাণ্ডা জল ঢেলেছেন শচীন পাইলট৷ তিনি বলেছেন, বিজেপিতে যাচ্ছি না, কংগ্রেসেই অাছি৷ পাইলট কংগ্রেসে থেকে গেলে গেহলটের বিপদ শতগুণ বৃদ্ধি পাবে সন্দেহ নেই৷ ফলে, পাইলটকে দলত্যাগ করতে বাধ্য না করে অথবা দল থেকে বহিষ্কার না করিয়ে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট থামবেন বলে মনে হয়না৷

_____

spot_img

Related articles

বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ! রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষায় ডাহা ফেল ৫১ জীবনদায়ী ওষুধ

রাজ্যের বাজারে ফের মিলল জাল ও নিম্নমানের ওষুধের হদিশ। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সাম্প্রতিক নমুনা পরীক্ষায় গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ...

অ্যাক্রোপলিস মলে মাতৃত্বের জাদুতে মাতোয়ারা শহর, বিশেষ দিনে সম্মানিত হলেন মা ও সন্তানরা

“মা” শব্দটি শুধু একটিমাত্র ডাক নয়—এ এক অনুভব, এক শক্তি। সেই মাতৃত্বের জাদুকেই সম্মান জানিয়ে মাতৃ দিবস উপলক্ষে...

চেন্নাইকে টেক্কা বাংলার! মৃত্যুর মুখ থেকে রুক্মিণীকে ফিরিয়ে আনল হাওড়ার হাসপাতাল

‘উন্নত চিকিৎসা মানেই দক্ষিণ ভারত’— এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন উদাহরণ তৈরি করল হাওড়ার নারায়ণা হাসপাতাল। বাইকের ধাক্কায়...

মরণোত্তর অঙ্গদানে অনন্য দৃষ্টান্ত! চার জনকে নতুন জীবন দিলেন জয়েশ 

মৃত্যুর পরেও চারটি প্রাণে জীবনপ্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন দমদমের কাশিপুরের যুবক জয়েশ লক্ষ্মীশঙ্কর জয়সওয়াল। মাত্র ২৫ বছর বয়সে...