দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত বিজেপিতেই, দিল্লিতে নাটক তুঙ্গে

বিধানসভা ভোটের আগে এসপার-ওসপার করার যুদ্ধ।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত দলেই। দিলীপ ঘোষ হঠাও। দিলীপ পারছেন না। দিলীপকে দিয়ে হবে না। দিল্লিকে এইসব বুঝিয়ে এখন ডাকানো হয়েছে রিভিউ মিটিং। মূল লক্ষ্য, হয় দিলীপকে সরানো। না হয় ক্ষমতা খর্ব।

কে দিলীপ ঘোষ?
তপন শিকদারের পর রাজ্য বিজেপির সবচেয়ে সক্রিয়, জনপ্রিয় ও সফল সভাপতি।

কে দিলীপ ঘোষ?
বিজেপির রাজ্যের একমাত্র নেতা যিনি জীবনের প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েই বিধায়ক, দ্বিতীয়বার দাঁড়িয়ে সাংসদ হয়েছেন।

কে দিলীপ ঘোষ?
যাঁর জমানায় দল আঠারোটি সাংসদ পেয়েছে। তৃণমূলের থেকে মোট ভোটের তফাৎ মাত্র 17 লক্ষ। দূরত্ব 4 শতাংশ।

কে দিলীপ ঘোষ?
যিনি বিতর্কিত। গ্রাসরুটের কর্মীদের কাছে লড়াকু নেতা। যিনি রাস্তায় থাকেন। আরএসএস করার অভিজ্ঞতা উজাড় করে বিজেপির হাল ধরেছেন।

কিন্তু দিলীপবাবু শান্তিতে নেই।
রাজ্য বিজেপির চিরকালীন রোগ।
দল এগোলেই কাঠিবাজি।
ইনি টুইট করবেন, উনি উল্টো বলবেন, তিনি দিল্লিকে নোট পাঠাবেন। সভাপতি ঠিক নয়। দল ঠিক চলছে না।

সেই খেলা আবার শুরু।
নেতৃত্বে মূলত কেউ কেউ, যে বা যারা তৃণমূল থেকে এলেও বছর দুই শবাসনে থাকার পর তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে ব্যর্থ হচ্ছেন। অতএব চিরকালীন স্বভাবের কাঠিবাজি চালিয়ে এখন দিলীপবিরোধিতায় ব্যস্ত। আর এসব খেলায় কিছু অতৃপ্ত আত্মা জুটেও যায়। মূলত তৎকাল বিজেপিরা এখন লাগাম ধরতে মরিয়া।

দিল্লি ভাবছে, একটু নাড়াচাড়া করে দেখাই যাক।

দিলীপবাবুর সঙ্গে কারা আছেন? সূত্রের খবর, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসু, দেবশ্রী চৌধুরী, অগ্নিমিত্রা পাল, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা।

দিলীপবাবুর উল্টোশিবিরে কারা? মুকুল রায়, শমীক ভট্টাচার্যরা। এই শিবির আবার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।

লকেট চট্টোপাধ্যায় কোথায়? সূত্র বলছে, নতুন সাধারণ সম্পাদককে যথাযথ কাজ ও গুরুত্ব না দিয়ে ” বিরক্ত” করা হয়েছে। তিনি একটু দূরে। তবে এখনও পুরোপুরি দিলীপবিরোধী হননি।

রাহুল সিনহা নিজস্ব আলাদা মেজাজে থাকেন। সঙ্গে রীতেশ তেওয়ারি।

সব্যসাচী দত্ত, সৌমিত্র খানরা মুকুলবাবুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলেও প্রকাশ্য দিলীপবিরোধিতায় নেই এখনও। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে হাজির করানো হচ্ছে দিলীপবিরোধী শিবিরের উদ্যোগে।

অর্জুন সিং দিলীপ ঘোষের দিকেই থাকছেন।

মুকুলশিবির এবং আরও কেউ কেউ বলছেন, বাংলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাওয়া আছে। দিলীপ সেটা কাজে লাগাতে পারছেন না। দল বিধানসভা ভোটে পারবে না। অভিজ্ঞ মুকুলকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। লোকসভার ধাক্কা সামলে নিচ্ছে তৃণমূল।

দিলীপশিবির বলছে, সমানে সভাপতির কাজে কাঠি করা হচ্ছে। এই করেই দলের ক্ষতি চলছে। দল যথেষ্ট ভালো চলছে। কিন্তু ক্ষমতার লোভে চক্রান্ত হচ্ছে দলেই। অনেকে তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছে। সেটা না পেরে এখানে ঘোঁট পাকাচ্ছে।

এই অবস্থায় দিল্লিতে কদিন বৈঠক চলবে।

একাংশ চায়, নতুন সভাপতি।
অথবা দিল্লির হস্তক্ষেপে রাজ্য কমিটিতে বদল। মুকুলকে হয় সভাপতি, না হলে সর্বভারতীয় বড় পদ। রাজ্যে দায়িত্ব দিয়ে।

অন্য অংশ চায়, সভাপতিকে শান্তিতে কাজ করতে দেওয়া হোক। অবিরাম সমান্তরাল উৎপাত বন্ধ হোক।

সূত্রের খবর, দিল্লি এই উৎপাত বন্ধ না করলে খোদ দিলীপবাবুও রেগেমেগে ইস্তফা দিতে পারেন। তখন বিপ্লবীদের হাল ধরতে হবে।

আসলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই পরের কথা, এখন আগে দিল্লিতে চলছে এরাজ্যের বিজেপি বনাম বিজেপি।

একটি অংশ চাইছে দিলীপবাবুকে পদচ্যুত করতে বা ক্ষমতা খর্ব করতে। কিছুদিন ধরেই নানা বক্তব্য জমা দিয়েছে তারা দিল্লিতে। মুকুলবাবুর শিবিরও দিল্লিকে বুঝিয়েছে এভাবে ঠিকঠাক চলছে না।

দিল্লি নড়ে বসে সকলকে ডেকেছে।
এখন দেখার বিষয় কারা হাসিমুখে দিল্লি থেকে ফেরে।

আরও দেখার বিষয়, দিল্লির নেতারা দিলীপবিরোধী গোষ্ঠীর চাপের কাছে কতটা নতিস্বীকার করেন।

মুকুল রায়ের শিবিরের খবর, দিলীপকে ব্যাকফুটে যেতে হবে। দলের লাগাম হাতে নিয়েই ফিরবেন মুকুল রায়।

 

Previous articleকরোনা চিকিৎসায় খরচ কত? জেনে নিন খুঁটিনাটি
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ