Sunday, May 4, 2025

এই ২৪শে চলে গিয়েছিলেন শমিত ভঞ্জও…

Date:

Share post:

উত্তম-পরবর্তী প্রজন্মের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নায়ক ছিলেন তিনি। কিন্তু টালিগঞ্জ তাঁকে চিনতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন অভিনেতার সঠিক মূল্যায়ন করেনি সময় । ২৪ জুলাই উত্তমকুমারের মৃত্যুদিন। ২০০৩ সালের একই দিনে শেষ নিঃশ্বাস ত‍্যাগ করেন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম নক্ষত্র শমিত ভঞ্জও। মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যু দিন পালন করা হলেও, শমিত ভঞ্জর মৃত্যু দিন পালন করা হয়না এই দিনটিতে। মৃত্যুর পরে এই অভিনেতাকে নিয়ে তেমন চর্চাও হয়নি বাংলা সিনেমা জগতে। এমনটা মনে করেন অনেকেই। তবে কি বাংলা সিনেমা জগৎ ভুলে গিয়েছে ‘আপনজন’-কে!

তিনি ছিলেন যৌবনের দূত। বাংলার ‘দামাল ছেলে’। অভিনয় করবেন বলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। অনুমতির তোয়াক্কা করেননি। তপন সিংহের মতো নামী পরিচালকের ঘরে ঢুকে বলেছিলেন, “অভিনয় করতে চাই।” সুযোগ এসেছিল।  ‘ছেনো’ হয়ে জয় করেছিলেন আপামর বাঙালির হৃদয়।  পঞ্চাশের দশক। মেদিনীপুরের তমলুকে পদুমবসান এলাকায় হরিসভার মাঠের কাছে বাড়ি ছিল ভঞ্জদের। বর্ধিষ্ণু পরিবার।

নাটক, তবলা, ফুটবল, ভলিবল নিয়ে মেতে থাকতেন তিনি। পাড়ায় কোনও ঝামেলা হলে ‘অ্যাকশন’এর মুডে। তখন একেবারেই বদলে যেত তাঁর চরিত্র। বন্ধুরা একটু তটস্থও থাকতেন। পাড়ার লোকে তাঁকে চিনতেন ‘বুবু’ নামে। তমলুকের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো ছেলেটাই যে একদিন হবে ‘আপনজন’এর ছেনো, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র হরি, ‘জবান’এর বিনু, কিংবা ‘গুড্ডি’র নবীন তা কেউ কল্পনা করতে পরেন নি।

প্রথম নাটকে অভিনয় ১৯৬০-৬১ সাল নাগাদ। ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নাটকে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন শমিত। তখন ১৬-১৭ বছর বয়স। অভিনেতার ঘনিষ্ঠদের মতে, ‘আপনজন’ সিনেমায় ছেনো গুন্ডার ওই প্রাণবন্ত অভিনয়ের মূলে রয়েছে ছোটবেলার অভিনয় চর্চা।

শমিতের জীবনের শেষ ছবি ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আবার অরণ্যে’। পরিচালক গৌতম ঘোষ। ১৯৯৫ সালে তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত দু’টি ছবির নাম যথাক্রমে ‘প্রতিধ্বনি’ ও ‘মোহিনী’। এই সময় থেকেই তাঁর শরীর তেমন ভাল যাচ্ছিল না। ১৯৯৮-’৯৯ সাল নাগাদ তাঁর কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে।

শমিত ভঞ্জের খুব ইচ্ছে ছিল বন্ধু গৌতম ঘোষের কোনও ছবিতে অভিনয় করার। গৌতম ঘোষেরও সেই একই ইচ্ছা ছিল। কিছুতেই সেটা আর হয়ে ওঠেনি। শমিতের জীবনের শেষ দিনগুলো যখন ঘনিয়ে আসছিল, তখনই গৌতম ‘আবার অরণ্যে’ ছবির পরিকল্পনা করছিলেন। ছবিটি করতে গেলে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির অভিনেতাদের ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরিচালক গৌতম যেদিন অভিনেতা শমিতের বাড়ি গিয়ে ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দিলেন, শমিত শরীরের সব কষ্ট ভুলে লাফিয়ে ওঠেন। শমিতের ডাক্তার প্রশ্ন করেছিলেন, “আপনি কি শুটিং করতে যাবেনই?” শমিতের উত্তর ছিল, “অবশ্যই। এটাই হয়তো আমার শেষ অভিনয়।”
আনন্দে, আড্ডায় শুটিং হত। ‘বুবু’-কে ঘিরে সবাই খুব মেতে উঠেছিছিলেন।

ছবি শেষ হওয়ার পর ছবির প্রথম প্রিন্ট শমিত দেখেছিলেন। খুব ইচ্ছে ছিল, মুক্তির পর একশো দিনের শোয়ে যাবেন দর্শকের সঙ্গে বসে ছবিটা দেখতে। তা আর হয়নি।

spot_img
spot_img

Related articles

চল্লিশ চাঁদের আয়ু, উৎপল সিনহার কলম

আমার কবিতা অসহায় যত পাগলি মেয়ের প্রলাপ আমার কবিতা পোড়া ইরাকের ধ্বংসে রক্তগোলাপ আমার কবিতা মেধা পাটেকর শাহবানু থেকে গঙ্গা আমার কবিতা অলক্ষ্মীদের বেঁচে...

রোমারিও শেফার্ডের ঝোড়ো ইনিংস, ধোনিদের হারাল বিরাটরা

শেষ মুহূর্তে রোমারিও শেফার্ডের(Romario Shepherd) একটা ঝোরো ইনিংস। আর সেটাই যেন কলকাতা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর(RCB) জয়ের রাস্তাটা প্রশস্ত...

যেতে পারেন: দিলীপ নিয়ে কর্মীদের ‘অস্বস্তিকর’ পোস্টে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা শমিকের

দিলীপ ঘোষের সময়েই পরিসংখ্যানে বাংলায় বিজেপি সবথেকে ভালো অবস্থানে ছিল। সেই নেতার দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে যাওয়াকে ঘিরে...

লন্ডনে অ্যাডামাস টেক কনসালট্যান্সির অফিস উদ্বোধন বাবুল সুপ্রিয়র

বিশেষ সংবাদদাতা, লন্ডন: কলকাতার বাঙালির হাতে তৈরি কলকাতার সংস্থার অফিস উদ্বোধন লন্ডনে (London)। শনিবার, অ্যাডামাস টেক কনসালট্যান্সি, ইউ...