Sunday, May 4, 2025

বঙ্গ-বিজেপি ভোটে যেতে কতখানি তৈরি (১), কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

দিল্লিতে বঙ্গ-বিজেপির ম্যারাথন বৈঠক চলছে৷ বাংলায় ‘চালিয়ে খেলার’ স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতেই নাকি এই বৈঠক৷

রাজনীতি, বিশেষত ভোট-রাজনীতি কপি-পেস্ট করে হয় না৷ ত্রিপুরায় রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর সফল হয়েছেন৷ সেই কপি বাংলায় পেস্ট করলেই সাফল্য মিলবে বলে অনেকে মনে করছেন৷ আবার অনেকের ধারনা, কেন্দ্রে যখন সরকার আছে, তখন সব কিছু করা সম্ভব৷ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যাবে৷ অথবা সব কটা এজেন্সিকে মাঠে নামিয়ে টপাটপ একের পর এক তৃণমূল নেতাদের হাজতে নেওয়া যাবে অথবা রাজ্যের সব বুথ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আনা হবে অথবা মোদিজি- শাহজি বাংলাতেই ক্যাম্প করে দিনের পর দিন থাকবেন, ওই চাপেই কাজ হয়ে যাবে৷ এতেই কেল্লা ফতে৷ এসব ভাবনা নেহাতই শিশুসুলভ৷ এ ধরনের যুক্তি সাজিয়ে বিজেপি বাংলা ‘দখল’ করার ‘স্কিম’ করলে, ভরাডুবি নিশ্চিত৷

আগে হয়তো ছিলো না, কিন্ত ইদানিং বঙ্গ- বিজেপির উপরের দিকে এমন কিছু লোকজন যোগ দিয়েছেন, যারা জানেন ভোট কীভাবে হয়৷ এই লোকজনের মধ্যে বিজেপি বিরোধী দলের নেতা-বিধায়করা আছেন, অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন, পুলিশের কিছু প্রাক্তণ পদস্থ অফিসার আছেন৷ এনারা জানেন রাজ্যে ভোট কীভাবে হয়৷ কেন্দ্রের শাসক দল ইচ্ছা করলেই ভোটের মাধ্যমে কোনও রাজ্যে সরকার বদল করতে পারেনা৷ বিধায়ক ভাঙ্গিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে সরকার গঠন আর সরাসরি ভোটে জিতে সরকার গঠন করার মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে৷ ২০১৪ থেকে আজ পর্যন্ত দেশের যতগুলি রাজ্যে ভোট হয়েছে, তার ফলাফল দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে৷ দিল্লিতে ক্ষমতায় থাকলেই যদি রাজ্যে ক্ষমতায় আসা যেত, তাহলে এ রাজ্যে টানা ৩৪ বছর বামফ্রন্ট মহাকরণে থাকতো না৷ ২০১১-র আগেই কেন্দ্রের মদতে কংগ্রেস রাজ্যে সরকার করে ফেলতো৷ কেন্দ্র তো মদত দিয়েছিলো, কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস ফসল ঘরে তুলতে পারেনি৷ কেন হলো না, কেউ ভেবেছেন? অনেকে এখন বলতে পারেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তো বিজেপি ১৮ আসনে জিতেছে, এর কোনও মূল্য নেই ? তাদের সবিনয়ে জানাই, ১৯৮৪-র লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে কংগ্রেস ১৬ টি আসনে জেতার পর কী হলো ? রাজ্যে ১৯৮৪-র পরের বিধানসভা ভোট হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই ভোটে কংগ্রেস ২৯৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে জিতেছিলো ৪০ আসন৷ উল্টোদিকে সিপিএম ২১২ আসনে প্রার্থী দিয়ে একাই পায় ১৮৭ আসন৷ সুতরাং লোকসভা ভোটের ফলাফল সামনে এনে তর্কে নামা অর্থহীন৷ পরিসংখ্যান এবং দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসকে গোলের সামনে বল বাড়ালেও, রাজ্য নেতারা সেই বল গোলে পাঠাতে পারেনি৷ এটাই ইতিহাস ৷

শেষ দু’টি লোকসভা ভোটে দেশজুড়ে বিজেপি প্রচার করেছে, নরেন্দ্র মোদির বিকল্প গোটা দেশে নেই৷ সত্যিই ছিলো না৷ দেশবাসীও তেমনই ভেবেছিলো৷ ফলে দিল্লির ভোট জিততে বিজেপির অসুবিধা হয়নি৷ তেমনই ২০১৬-র ভোটের মতোই ২০২১-সালের ভোটেও তৃণমূল প্রচার করছে, এ রাজ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপযুক্ত কোনও বিকল্প এখনও রাজ্যে নেই৷ এই কথা শুনে গেরুয়া-বাহিনী নিশ্চিতভাবেই হাসছেন৷ ঠিকই, বিশেষ কিছু মানুষ তিনবার হাসেন৷ লোকসভা ভোটে বিজেপির “মোদির বিকল্প নেই” প্রচারে তৃণমূলও রাজ্যে সেদিন অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলো৷ আর ১৩ মে ফলপ্রকাশের পর ডাকতে হয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে৷ দেওয়ালের লিখন পড়তে না পারার দৈন্যতা প্রকট হয়েছিলো৷ তাই, ২০২১-এর ভোটের আগে বিজেপির নেতা- কর্মী- সমর্থক-ভোটার- তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা আজ থেকেই হাসতে চাইলে হাসতেই পারেন৷ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে “মোদি- বিকল্পহীন” যদি দেশের মানুষ ভাবতে পারেন, তাহলে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে রাজ্যের মানুষ যদি ভাবেন ‘বাংলায় মমতার বিকল্প এখনও নেই’, তাহলে কোন যুক্তিতে সেই ভাবনা অমূলক হয় ? বিষয়টা তো ঠিকই৷

আসলে, ক্ষমতায় আসতে বঙ্গ-বিজেপির যা যা করা দরকার ছিলো, তার কিছুই এখনও করে উঠতে পারেনি গেরুয়া-ব্রিগেড৷ স্রেফ চটুল কথা বলে মিডিয়া ফুটেজ খাওয়া ছাড়া বঙ্গ-বিজেপি এ পর্যন্ত ভোটে জেতার জন্য আর কী কী করেছে, কেউ পয়েন্ট ধরে ধরে বোঝাতে পারবেন? কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসের চিরাচরিত গোষ্ঠী- কোন্দলের উপসর্গ আজ বঙ্গ-বিজেপির সর্বাঙ্গে ফুটে বেরিয়েছে, ক্ষমতার ত্রিসীমানায় না এসেই৷

বঙ্গ-বিজেপির নেতা বা কিছুটা বাস্তববোধ-সম্পন্ন শুভানুধ্যায়ীরা এখনও ধরতে পারছেন না রাজ্যে বিজেপিকে প্রতিদিন আন-পপুলার করে চলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় একাই৷ তাঁর অযৌক্তিক অতি- সক্রিয়তার ফায়দা তুলছে তৃণমূল৷ ধনকড় তাঁর আচরণে স্পষ্ট করছেন, তিনি যতখানি না রাজ্যপাল, তার থেকে বেশি রাজ্য বিজেপির সভাপতি৷ এই কয়েকদিনের মধ্যে এত অবান্তর কথা বলেছেন বা টুইট করেছেন যে তিনি নিজেই নিজের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন৷ আজকাল তৃণমূলের চতুর্থ সারির নেতারাও প্রকাশ্যে চোখা চোখা ভাষায় রাজ্যপালকে তোপ দাগছেন৷ এই পরিস্থিতি তৈরি করেছেন রাজ্যপাল নিজেই৷ আর বঙ্গ-বিজেপির কিছু নেতা রাজ্যপালকে থামতে না বলে, তাঁর কাজকর্মে ধুনো দিয়ে চলেছেন৷ ফলে খেলাটা চলে গিয়েছে তৃণমূলের হাতে৷ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যপাল কী করতে পারেন, সেই ধারনার অভাব থেকেই যে এসব হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে৷ অতীতে বি ডি পাণ্ডে,
এ পি শর্মা, উমাশঙ্কর দীক্ষিত, এ আর কিদোয়াই,গোপাল গান্ধী বা এম কে নারায়ণন-রা বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে কী কী করতে পেরেছিলেন ? অথচ কংগ্রেস অনেকখানি “ভরসা” করেছিলো ওনাদের উপর৷ ধনকড় সাহেবের কিছু “করার” থাকলে দিল্লির সঙ্গে ফাইল চালাচালি করুন৷ তা না করে এত ‘ভোকাল’ হয়ে ‘লোকাল’ বিজেপি-র সমান্তরাল সংগঠন চালাচ্ছেন কেন ? এতে বঙ্গ-বিজেপি লাভবান হচ্ছে ? এটা গেরুয়া শিবির বুঝতে পারছে না কেন, সেটাই বিস্ময়ের৷

প্রতিটি স্তরেই রাজ্য-বিজেপির শূন্যতা ফুটে বেরিয়ে আসছে৷ একটি প্রতিবেদনে তা বলা সম্ভব নয়৷ আজ এইটুকুই৷ আগামীকাল বিজেপি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়৷

spot_img
spot_img

Related articles

চল্লিশ চাঁদের আয়ু, উৎপল সিনহার কলম

আমার কবিতা অসহায় যত পাগলি মেয়ের প্রলাপ আমার কবিতা পোড়া ইরাকের ধ্বংসে রক্তগোলাপ আমার কবিতা মেধা পাটেকর শাহবানু থেকে গঙ্গা আমার কবিতা অলক্ষ্মীদের বেঁচে...

রোমারিও শেফার্ডের ঝোড়ো ইনিংস, ধোনিদের হারাল বিরাটরা

শেষ মুহূর্তে রোমারিও শেফার্ডের(Romario Shepherd) একটা ঝোরো ইনিংস। আর সেটাই যেন কলকাতা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর(RCB) জয়ের রাস্তাটা প্রশস্ত...

যেতে পারেন: দিলীপ নিয়ে কর্মীদের ‘অস্বস্তিকর’ পোস্টে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা শমিকের

দিলীপ ঘোষের সময়েই পরিসংখ্যানে বাংলায় বিজেপি সবথেকে ভালো অবস্থানে ছিল। সেই নেতার দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে যাওয়াকে ঘিরে...

লন্ডনে অ্যাডামাস টেক কনসালট্যান্সির অফিস উদ্বোধন বাবুল সুপ্রিয়র

বিশেষ সংবাদদাতা, লন্ডন: কলকাতার বাঙালির হাতে তৈরি কলকাতার সংস্থার অফিস উদ্বোধন লন্ডনে (London)। শনিবার, অ্যাডামাস টেক কনসালট্যান্সি, ইউ...