Wednesday, November 12, 2025

লকডাউনে কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ, সিভিক ভলান্টিয়ারের রক্তে প্রাণ ফিরে পেল ১১ বছরের সুপ্রিয়

Date:

কলকাতা পুলিশের মানবিক মুখ দেখলেন এক বিপদগ্রস্ত অসহায় পিতা, আর তার সাক্ষী থাকল শহরবাসী । পুরো ঘটনা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। বিষয়টি খুলে বললেই স্পষ্ট হয়ে যাবে।
ঘটনার সূত্রপাত
শুক্রবার, ২১ আগস্ট। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে এগারোটা। রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনে জনশূন্য হাওড়া ব্রিজ। কলকাতার দিকে পুলিশের নাকা চেকিংয়ে থামানো হয়েছিল হাওড়ার দিক থেকে আসা একটি বাইক। আরোহীর গায়ে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। স্বাভাবিকভাবেই কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা বাইক আরোহীর কাছে জানতে চান রক্তের উৎসবে সম্পর্কে । তাদের একটাই প্রশ্ন ছিল যে কেন শরীরে, জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ?
আসলে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ১১ বছরের ছেলে সুপ্রিয়র জন্য এক বোতল রক্ত আনতে হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থেকে কলকাতার পদ্মপুকুরে একটি ব্লাড ব্যাঙ্কে আসছিলেন বাবা শুভেন্দু ভুক্ত। কুড়ি দিন অন্তর ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হয় সুপ্রিয়র। শুক্রবার ছিল সুপ্রিয়র ব্লাড ট্রান্সফিউশনের দিন। করোনা পরিস্থিতির জন্য স্বেচ্ছা-রক্তদাতা না পেয়ে শুভেন্দুবাবু ঠিক করেছিলেন, ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে বিনিময়ে ছেলের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত নেবেন । একদিকে ছোট্ট ছেলের জন্য রক্ত জোগাড় করার টেনশন, অন্যদিকে লকডাউন। সবমিলিয়ে তাড়াহুড়োয় হাওড়া ব্রিজে ওঠার মুখেই দুর্ঘটনায় পড়েন। রাস্তায় বাইকের চাকা পিছলে কেটে-ছড়ে যায় শরীরের নানা জায়গায়। তাতেই পোশাকে রক্তের দাগ লাগে।
কিন্তু অসুস্থ সন্তানের জন্য রক্ত দরকার । তাই চোটের পরোয়া করেন নি । সেই অবস্থাতেই বাইক তুলে ফের হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন শুভেন্দুবাবু। নাকা চেকিংয়ে তাঁকে আটকান কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারেরা। তার মুখে সব শুনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন।
আহত শুভেন্দুবাবুকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এই শরীর নিয়ে তাঁর রক্ত দেওয়ার দরকার নেই, তার বদলে তিনিই শুভেন্দুবাবুর সন্তানের জন্য রক্ত দেবেন।
নিয়াজুদ্দিনের এই প্রস্তাবে সঙ্গে সঙ্গেই নাকা চেকিংয়ে উপস্থিত অফিসারেরা তাঁকে শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেন। পদ্মপুকুরে ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে ‘এ পজিটিভ’ রক্ত দেন মহম্মদ নিয়াজুদ্দিন। পরিবর্তে ছেলের জন্য ‘ও পজিটিভ’ রক্ত নিয়ে হাওড়ার হাসপাতালে ফেরেন শুভেন্দুবাবু। রক্ত পায় ১১ বছরের সুপ্রিয়। ততক্ষণে সিভিক্স ভলান্টিয়ার নিয়াজুদ্দিনের এই মানবিকতায় চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে সুপ্রিয় বাবার।
আর খোদ নিয়াজুদ্দিন বলছেন, এই মনুষ্যত্বটুকু না থাকলে বেঁচে থেকে লাভ কী? বরং তার প্রশ্ন মনুষ্যত্বের কি আর লকডাউন হয়?

Related articles

আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি, চিনে ‘ব্রিকস স্কিলস কম্পিটিশন’-এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে ছাত্রছাত্রীরা

ফের ইতিহাস গড়ল সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি (এসএনইউ)। গত বছরের পর আবারও এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত হয়েছে চিনে অনুষ্ঠিত...

বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই BLA নিয়োগে নয়া নির্দেশিকা ! কমিশনকে তোপ তৃণমূলের

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা ঘিরে উত্তাল রাজনৈতিক মহল। বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) নিয়োগের নিয়ম পরিবর্তন করে এক...

বোধি ভবনের বার্ষিক উৎসব, সংবর্ধিত অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়

দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা CBSE বিদ্যালয় বোধি ভবন কলেজিয়েট স্কুলে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হল বার্ষিক অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে উত্তম...

সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকায় সৃজিত?

১৫ বছর টলিউডে রাজত্ব করেছেন। ঝুলিতে রয়েছে দুর্দান্ত সব ছবি। কিন্তু এবার সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকায় কাজ করতে চলেছেন...
Exit mobile version