হাফিজ সইদ, দাউদ ইব্রাহিমদের অনেক আগেই পিছনে ফেলেছেন তিনি। দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকার এক নম্বরে তাঁর নাম। মাথার দাম দেড় কোটি।
দেড় কোটি টাকা মাথার দাম ওঠা ব্যক্তিটির নাম,
মুপাল্লা লক্ষ্মণ রাও৷ তবে এই নামে কেউ চিনবেন না তাঁকে৷ ইনি পরিচিত ‘গণপতি’ নামে৷ সিপিএম (মাওবাদী)-র প্রাক্তণ সাধারণ সম্পাদক তিনি৷
দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে গণপতিকে সম্ভবত হাতে পেতে চলেছেন গোয়েন্দারা। সেন্ট্রাল আইবি এবং ছত্তিসগড় সিআরপিএফের এক বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মসমর্পণ করতে চলেছেন গণপতি।
আর এই খবরের জেরেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন : শেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত ৭৮,৩৫৭, মৃত্যু ১০৪৫
সিপিআই (মাওবাদী)-র গঠনতন্ত্র অনুসারে, দলের অন্যতম ‘ভরকেন্দ্র’ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এই গণপতি। ৭৪ বছরের এই প্রবীণ মাওবাদী নেতা দীর্ঘদিন ধরেই হাঁপানি, ডায়াবেটিস এবং হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন। এই অসুস্থতার জন্যই ২০১৮ সালের শেষ দিকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরেও দাঁড়ান তিনি৷
অসুস্থতা ও বয়সের কারণে এখন খুব একটা সক্রিয়ও নন এই শীর্ষ নেতা। তেলেঙ্গানার ভূমিপুত্র, কৃষক পরিবারের ছেলে গণপতি জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। নকশাল বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৭০ সালে কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হন। ২০০৪ সালে তাঁর নেতৃত্বেই সিপিআই (এমএল) পিপলস ওয়ার এবং এমসিসি মিশে গিয়ে সিপিআই (মাওবাদী) পার্টি তৈরি হয়। ছোট-বড় হাজারও গোষ্ঠীতে বিভক্ত নকশাল আন্দোলনকে এক ছাতার তলে আনার কৃতিত্ব এই গণপতির-ই। তাঁর সময়েই কিষেণনজির নেতৃত্বে বাংলার জঙ্গলমহলের আন্দোলন গোটা দেশে সাড়া ফেলেছিল।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, মূলত চিকিৎসার জন্যই এই আত্মসমর্পণ। তবে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা এবং গোটা দেশে সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনকে পথ দেখানো এমন নেতার সরে যাওয়ার কারণটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে না রাজনৈতিক মহল৷
জানা গিয়েছে, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির দু’ জন নেতা মারফত তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও- এর নির্দেশে গণপতির সঙ্গে আলোচনা চলছে। করিমনগর জেলা পুলিস আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ইতিমধ্যেই গণপতির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে। তেলেঙ্গানা সরকারের অনুমান, অসুস্থ এই মাওবাদী নেতা ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্র সীমান্তের কোথাও আত্মগোপন করে আছেন।
ওদিকে, গোয়েন্দারা গণপতির আত্মসমর্পণ নিয়ে আশাবাদী হলেও সিপিএম (মাওবাদী)-র বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ এক লিখিত বিবৃতিতে গণপতির আত্মসমর্পণের বিষয়টি নস্যাৎ করেছে। তাঁর দাবি, বিষয়টি ভিত্তিহীন, মিথ্যা প্রচার। মাওবাদীদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই আত্মসমর্পণের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে।
আরও পড়ুন : প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্মৃতিতে জঙ্গিপুরের বাড়িতে তৈরি হচ্ছে লাইব্রেরি-মিউজিয়াম